চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের গাইনী কনসালট্যান্ট সাবরিনা দশ মাস ধরে কর্মস্থল থেকে ছুটি না নিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি কি বেচেঁ আছেন না অন্যকিছু তা নিয়ে এখন সর্বমহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
চাঁদপুর জেলার অত্যন্ত ব্যস্ততম মডেল শহর হিসেবে গড়ে উঠা একটি উপজেলা হচ্ছে হাজীগঞ্জ শহর। এ উপজেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি চিকিৎসক ডা: সাবরিনা কাদির। তিনিই হচ্ছেন এ উপজেলার একমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনী জুনিয়র কনসালট্যান্ট। তিনি গত ২০২২ সালের শুরুতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। যোগদানের পর তিনমাস তিনি যথানিয়মেই দায়িত্ব পালন করেছেন। তারপর দেখা যায়, গাইনি চিকিৎসক ডা: সাবরিনা কাদির আর তার কর্মস্থলে আসেন না এবং সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনও করছেন না। খবর নিয়ে জানা গেছে তিনি এ কর্মস্থল থেকে কোন প্রকার ছুটিও নেননি।
এদিকে, সময় গড়াতে গড়াতে পেরিয়ে গেছে দশ মাস। এ দশমাসে তার কোন খোঁজও মিলেনি। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানান, ইতিমধ্যে তিনি কোন ছুটিও নেননি। এখন প্রশ্ন উঠেছে, ছুটি না নিয়ে তিনি তাহলে উধাও হয়ে কোথায় আছেন। তিনি কি বেচেঁ আছেন, না কি অন্য কিছু।
গাইনী জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা: সাবরিনা কাদির এর অনুপস্থিতিতে ব্যাহত হচ্ছে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা।
জেলা সিভিল সার্জন শাহাদাত হোসেন জানান, একে একে ছয়বার নোটিশ করেও মেলেনি তার হদিস। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার লিখিতভাবে অবগত করা হয়েছে।
হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গাইনী চিকিৎসক হিসেবে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখনও আছে তার নাম। কিন্তু গেলো ১০ মাস ধরে চেম্বারে আসেন না তিনি। নেয়নি কোনো ছুটি, বারংবার তলব করা হলেও মিলেনি কোন উত্তর। ডা. সাবরিনা কাদির এখন কোথায় আছেন তাও জানেননা কেউ।
হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা গৃহবধূ তামান্না আক্তার আদিবা জানান, শুনেছি সরকারি হাসপাতালে ভালো গাইনি চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। এসে দেখি গাইনি চিকিৎসকের কক্ষ বন্ধ। পরে জানলাম দশ মাস ধরে তিনি হাসপাতালে আসেন না।
আদিবার মতো এমন অনেক নারীকে চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে যেতে হয়। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা নিয়মিত ভোগান্তিতে পড়ছেন। এই চিকিৎসক হঠাৎ এভাবে উধাও হয়ে যাওয়ার কারণ কি? তার উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কেউই দিতে পারেনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গাইনি চিকিৎসক সাবরিনা কাদিরের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার দিসাবন গ্রামে। তার গ্রামের ঠিকানায় সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ছয় বার নোটিশ করা হয়েছে। ওই নোটিশে তার পদটি শূণ্য করতে বলা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. গোলাম মাওলা নাঈম জানান, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকে গেলো ৬ মার্চ ২০২২ সালে যোগদানের পর মাত্র তিন মাস চেম্বার করেছে। একই বছরের ৪ জুন মাসে কাউকে কিছু না বলে উধাও হয়ে আছেন গাইনি চিকিৎসক সাবরিনা কাদির। গেলো ১০ মাস ধরে হাসপাতালে অনুপস্থিত ডা. সাবরিনা কাদির। তিনি কেন হাসপাতালে অনুপস্থিত ও কবে নাগাদ যোগদান করবে জানতে চেয়ে তাকে একে একে ৬ বার নোটিশ করার পরও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। পরে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার লিখিতভাবে অবগত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. শাহাদাত হোসেন জানান, ডা: সাবরিনা কাদির কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। তিনি এখন কোথায় আছেন তা এখনো জানা যায়নি। দুই মাস পর পর ৬টি নোটিশ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত এলে পদটি শূণ্য ঘোষণা করা হবে। পরে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবার জন্য নতুন কাউকে দেওয়া হবে।