কাউখালীতে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ইরসপো প্রকল্পে অনিয়ম 

মানা হয়নি সরকারের নির্দেশনা

প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৩, ২১:০৭ | অনলাইন সংস্করণ

  এনামুল হক,কাউখালী( পিরোজপুর) প্রতিনিধ

পিরোজপুরের কাউখালীতে দরিদ্র মহিলাদের জন্য সমম্বিত পল্লী সহায়তা প্রকল্প (ইরসপো) কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে মানা হয়নি সরকারি নির্দেশনা। 

জানা গেছে, ২০১৪ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইংল্যান্ডে ওয়ার্ল্ড গার্লস সামিটে ঘোষণা করেন যে তৎকালীন ৫২% বাল্যবিবাহ রোধ করে ২০২১ সালের মধ্যে  নামিয়ে এক তৃতীয়অংশে আনা হবে  এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ পরিপূর্ণ ভাবে নির্মূল করা হবে। তার এই ঘোষণা অনুযায়ী সরকার নানা মুখি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে জনবল বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ৫৯টি উপজেলায় দুইটি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ ১১৮ টি হাই স্কুলকে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচিত করে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করেন।

স্কুল নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া  হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা, বিআরডিবি কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারি বিআরডিবি  কর্মকর্তা (ইরসপো) কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি হাই স্কুল  বাছাই করবেন এবং স্কুলের প্রধান শিক্ষক একজন শিক্ষক প্রতি বিআরডিবির সরকারি কর্মকর্তা গরিব ও অসহায় পিছিয়ে পড়া  ছাত্রীদের বাছাইয়ের দায়িত্ব পালন করবেন।  

হতদরিদ্র নারীদের স্বাবলম্বী করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বাল্যবিবাহ রোধ করার লক্ষ্যে দরিদ্র মহিলাদের সমন্বিত পল্লী সহায়তা প্রকল্প (ইরসপো) কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়।  

বাছাইকৃত প্রতিটি স্কুলের ১০০ জন গরিব মেধাবী সঞ্চয় আগ্রহী ছাত্রীকে ব্যাংক একাউন্ট করার মাধ্যমে প্রতি মাসে ২০০ টাকা করে জমা প্রদান করবেন এবং সরকার দিবেন ৪০০ টাকা করে যার ফলে বছর শেষে ৭ হাজার ২০০ টাকা করে পাঁচ বছর মেয়াদ শেষে ১৮ বছরের আগে অর্থাৎ বাল্যবিবাহ না করলে ৩৬ হাজার টাকা করে একজন ছাত্রী পাবে।  এককালীন এই টাকা পেয়ে তারা নিজেরা স্বাবলম্বী হতে পারবে এবং বাল্য বিবাহ নির্মূল নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। 

তবে অবশ্যই উপজেলা সদর থেকে আড়াই কিলোমিটারের বাইরে যে সমস্ত এলাকায় হত দরিদ্র ও বাল্যবিবাহ প্রবণতা বেশি,  অনগ্রসর নারী, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে আছে ওই সমস্ত এলাকার হাই স্কুল বাছাই করতে হবে মর্মে নির্দেশনা রয়েছে। 

উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের জোলাগাতী মুসলিম আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছাত্রী সংখ্যা ১৩৬ জন,  ই, জি এস মাধ্যমিক শিক্ষা নিকেতনে ১৮৪,  শিয়ালকাঠি মিলন সংঘ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১২৮ ,হোগলা বেতকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৪৩  উত্তর নিলতি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১২৪ ও দক্ষিণ নিলতি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১২৭ কাঠালিয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৪৯ জন ছাত্রী থাকা সত্ত্বেও এই সমস্ত স্কুল প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত না করে উপ-পরিচালককে জানানো হয়েছিল উপজেলায় আড়াই  কিলোমিটারের দূরত্বে কোন স্কুলে প্রয়োজনীয় একশ ছাত্রী নাই।

জোলাগাতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুস্তম আলী জানান, তার স্কুল পরিদর্শন করে নির্বাচিত করা হয়েছিল কিন্তু পরবর্তী সময় অজানা কারণে বাতিল করা হয়।

ই, জি এস মাধ্যমিক শিক্ষা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ তানভীর আহমেদ বলেন, এই বিষয় তাকে কিছুই জানানো হয় নাই।  
অথচ বিধি-বিধানের  কোন তোয়াক্কা না করে  নিয়ম বহির্ভূতভাবে উপজেলা সদরের কয়েকশ গজের মধ্যেই কাউখালী সরকারি বালিকা বিদ্যালয় এবং একই সদর ইউনিয়নের কেউন্দিয়া শহীদ স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্বাচিত করে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করে  কর্তৃপক্ষ। 

আর এই অনিয়মের কারণে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুল গুলোতে যেখানে বছরে কয়েকশ ছাত্রী দরিদ্রতা, সামাজিক বিভিন্ন সমস্যার শিকার হয়। সেই সমস্ত এলাকায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন না করায় তারা অন্ধকারই রয়ে গেছে। বাড়ছে বাল্যবিবাহ ও  অসামাজিক কার্যকলাপ। স্কুল থেকে আর্থিক সমস্যার ফলে ঝরে পড়ছে গরিব ছাত্রীরা। 

কর্তৃপক্ষের এই উদাসীনতার ফলে সরকারের বাল্যবিবাহ নির্মূল পরিকল্পনা সফলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে।
  
এই প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভুক্ত ছাত্রীদেরকে নিয়মিত সচেতনামূলক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা উপকরণ স্যানিটাইজার প্রদান করা ও নানামুখী প্রচার করার মাধ্যমে বাল্যবিবাহ রোধে সকলকে সচেতন করার  কথা থাকলেও কমিটির সদস্যরাই জানেন না উপজেলায় এই প্রকল্প চালু আছে কিনা। 

এছাড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: গিয়াস উদ্দিন এর কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তেমন কিছু জানেন না বলে জানান। তবে সহকারী শিক্ষক মুন্নি দায়িত্বে আছে সে সবকিছু বলতে পারেন বলে জানান । 

কেউন্দিয়া শহীদ স্মৃতি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, ২০২২ সালের  নভেম্বর  মাসে এ কার্যক্রম শুরু হয় এ পর্যন্ত তিনটি মিটিং হয়েছে।
সু-ফলভোগী ওই স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী লিমা আক্তার ও তানিয়া ইসলাম জানান, তারা ২০০ টাকা করে ব্যাংকে জমা করেন এবং তাদের নিয়ে তিনটি মিটিং হয়েছে। মিটিং এর সময় একটি খাতা, দুইটি কলম ও একটি সেনিটারী প্যাড তাদেরকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে। 

এই প্রকল্পের বাছাই কমিটির সদস্য মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নুসরাত জাহান ও  উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: আব্দুল হান্নান এই কার্যক্রম সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে জানান । 

সহকারী পল্লী উন্নয়ন অফিসার (ইরেসপো) নুসরাত নওশীন সূবর্নার কাছে এ বিষয়ে জানার জন‍্য ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই।  

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহের নিগার সুলতানা বলেন, আমি  যোগদান করার পূর্বে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তবে ছাত্রীদের সচেতন করার জন্য প্রশিক্ষণে আমি উপস্থিত হয়েছিলাম। 

অন্যদিকে বিআরডিবির উপ-পরিচালক মো: কামরুজ্জামান জানান, উপজেলায় আড়াই কিলোমিটারের বাহিরে শতাধিক ছাত্রী থাকা স্কুল না পাওয়ায় এই স্কুলটি নির্বাচন করা হয়েছে। জনবল কম থাকায় একটু সমস্যা হয় তবে তা দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে।