ঘূর্ণিঝড় মোখা
নারায়ণগঞ্জ থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ, কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল
প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৩, ০৭:২৮ | অনলাইন সংস্করণ
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
ঘূর্ণিঝড় মোখা’র প্রভাবে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ৫টি রুটে চলাচলকৃত সব ধরণের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ দেয়া না পর্যন্ত এসব লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে। সেই সাথে বিআইডব্লিউটিএ’র নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
শনিবার (১৩ মে) সকাল থেকেই এ সকল লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। যদিও নির্দেশনা জারি করা হয়েছে আগের দিন রাত থেকে। কিন্তু এই রুটে রাতের কোনো লঞ্চ না থাকায় সকাল থেকেই নির্দেশনা কার্যকর করা হচ্ছে। সেই সাথে সকাল থেকেই নারণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনালে বিভিন্ন রুটের চলাচলকৃত লঞ্চ ভিড় করে রাখা হয়েছে। তবে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দাদের ট্রলার ও নৌকাযোগে নদী পারাপার সচল রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বর্তমানে ৭টি রুটে মোট ৪০ টি লঞ্চ চলাচল করে। সেই সাথে এই ৪০ টি লঞ্চে করে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার যাত্রী আসা যাওয়া করে থাকে। নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জ রুটের দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জ রুটে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬-৭ টা পর্যন্ত ৪০ মিনিট পর পর লঞ্চ ছেড়ে যায়।
এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর রুটে, নারায়ণগঞ্জ থেকে মতলব রুটে, নারায়ণগঞ্জ থেকে রামচন্দ্রপুর রুটে, নারায়ণগঞ্জ থেকে নড়িয়া, নারাণগঞ্জ থেকে হাটুরিয়া, নারায়ণগঞ্জ থেকে ঈদগাহ ফেরিঘাটে লঞ্চ চলাচল করে থাকে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত লঞ্চ চলাচলের সময়ে গজারিয়া, ষাটনল, মোহনপুর লঞ্চঘাটে লঞ্চ থামে এবং যাত্রী উঠানামা করে। নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত দূরত্ব ৫২ কিলোমিটার। নারায়ণগঞ্জ থেকে মতলব-মাছুয়াখালী রুটের দূরত্ব ৫৭ কিলোমিটার। হোমনা-রামচন্দ্রপুর রুটে নারায়ণগঞ্জ থেকে রামচন্দ্রপুর পর্যন্ত দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার।
সেই সাথে নারায়ণগঞ্জ থেকে ওয়াবদা-নরিয়া-ভোজেশ্বর (শরিয়তপুর) রুটের লঞ্চগুলো মোহনপুর, সুরেশ্বর, ওয়াবদা, নরিয়া হয়ে ভোজেশ্বর পর্যন্ত চলাচল করে। নারায়ণগঞ্জ থেকে সুরেশ্বর পর্যন্ত দূরত্ব ৫১ কিলোমিটার। নারায়ণগঞ্জ থেকে ওয়াবদা পর্যন্ত দূরত্ব ৫৭ কিলোমিটার। নারায়ণগঞ্জ থেকে নরিয়া পর্যন্ত দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার। নারায়ণগঞ্জ থেকে ভোজেশ্বর পর্যন্ত দূরত্ব ৬৬ কিলোমিটার।
এসকল রুটে চঞ্চ চলাচল বন্ধ যাত্রীদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। যাদের জরুরি প্রয়োজন তারা নদীপথ ছেড়ে সড়কপথে যাতাযাত করছেন।
কামাল হোসেন নামে একজন যাত্রী বলেন, আমি আসছিলাম চাঁদপুরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু টার্মিনালে এসে দেখি লঞ্চ বন্ধ। যেহেতু লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে আজ আর যাওয়ার কোনো উপায় নেই।
আল ফালাহ লঞ্চের চালক কবির বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সকাল থেকেই আমাদের সকল লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। চঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকলে যাত্রীদের ভোগান্তি থাকাটাই স্বাভাবিক। সকাল থেকে যাত্রীরা এসে ঘুরে যাচ্ছেন। আমাদেরও অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে হবে। লঞ্চ চলাচল সচল থাকে আমাদের পকেটে টাকা আসে। অন্যথায় বসে থেকে আমাদের খরচ বেড়ে যায়।
রাসেল নামে লঞ্চের একজন স্টাফ বলেন, লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকলে আমরা যেমন অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে যায় তেমনি যাত্রীদেরও ভোগান্তি বেড়ে যায়। আবহাওয়ার বিরূপ পরিস্থিতি সকলে মিলেই মোকাবেলা করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুরগামী রাসেল-২ লঞ্চের কোয়ার্টার সহকারী হান্নান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। কবে চলাচল করবে তা বলা হয়নি। লঞ্চ বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের দৈনন্দিন আয়ও বন্ধ হয়ে যায়। যার প্রভাব পরিবারের মাঝে পড়ে থাকে।
বিআইডব্লিউটিএ’র শুল্ক আদায়কারী ইউসুফ আলী শেখ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি ভাল হলে চালু হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের উপ-পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) বাবু লাল বৈদ্য বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলার জন্য বিআইডব্লিউটিএ তথা সরকার যাত্রীবাহী নৌযানের চলাচল সম্পূর্ণরুপে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এই আদেশ বলবৎ থাকবে। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে এই আদেশ জারি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যাত্রী সাধারণের নিরাপত্তার স্বার্থেই আমাদের কর্তপক্ষ এই আদেশ জারি করেছে। এতে করে যাত্রীদের নিরাপত্তা সুরক্ষিত থাকবে এবং নৌ দূর্ঘটনা অনেকাংশে কমবে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য আমরা সকল কর্মকর্তা কর্মচারী যারা নৌযান চলাচল সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত তাদের সকলের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সরকার এই বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে আমরা সবাই একযোগে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় কাজ করে যাচ্ছি। আশা রাখি আমরা কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হবো না।