প্রশস্ত স্ট্যান্ডার্ড টু লেন হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক
প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৩, ১৩:১২ | অনলাইন সংস্করণ
গোলাম কাদের, পটিয়া
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ার ১২ কিলোমিটার অংশে স্ট্যান্ডার্ড টু লেনে প্রশস্ত করায় এবং প্রায় দশটি বাঁক সরলিকরণ হওয়ায় সড়কে যানজট মুক্ত হতে যাচ্ছে। এর ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার লক্ষাধিক যাত্রীর যাতায়াতে সময় সাশ্রয় হবে।
গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক প্রশস্ত হওয়ার আগে পটিয়া আমজুর হাট, বাদামতল, শান্তির হাট, শিকলবাহা ক্রসিংসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকতো। বর্তমানে যানজটহীট প্রশস্ত এ সড়কে বেড়েছে বিভিন্ন গাড়ির গতি। এতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের লক্ষাধিক যাত্রী প্রতিদিন যানজটমুক্ত সড়কে সহজেই খুব কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে সক্ষম হচ্ছে।
দোহাজারী সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কের পটিয়া ক্রসিং থেকে উপজেলার বাদামতল পর্যন্ত প্রথম ধাপে ৬ কিলোমিটার সড়ক ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ ফিট থেকে ৩৪ ফিট প্রশস্থ করে স্ট্যান্ডার্ড টু লেনে উন্নীত করা হয়েছে। একইভাবে দ্বিতীয় ধাপে মহাসড়কের পটিয়া উপজেলার বাদামতল থেকে ইন্দ্রপুলের পশ্চিমাংশ পর্যন্ত ৫.৮ কিলোমিটার সড়কটিও প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ ফিট থেকে ৩৪ ফিট প্রশস্ত করে টু লেনে উন্নীত করা হয়েছে। সড়কে শৃংঙ্খলা আনতে রোড মার্কিং, রোড স্ট্যার্ড (রাতে সড়ক নিরাপদ করার জন্য), সেভরন সাইন, গার্ড রোল (কালভার্টের পাশে) ও ট্রাফিক সাইন স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়াও সড়ককে টেকসই করার জন্য এমএস পাইপ ও আরসিসি প্যালাসাইডিং দ্বারা সড়ক রক্ষাপদ কাজ করা হয়েছে।
এদিকে, আরও ১৫ কিলোমিটার অংশে সড়কটি ১৮ ফিট থেকে ৩৪ ফিটে প্রশস্ত করে স্ট্যান্ডার্ড টু লাইন করতে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩টি প্যাকেজে গত ২২ মার্চ কাজের দরপত্র উন্মুক্ত করা হয়েছে। এ তিনটি প্যাকেজের মধ্যে পটিয়া শহরাংশ (ইন্দ্রপুল থেকে শ্রীমাই পর্যন্ত), বিজিসি ট্রাস্ট হতে মক্কা পেট্টোল পাম্প ও মক্কা পেট্টোল পাম্প থেকে সাতকানিয়া মৌলভীর দোকান পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ করা হবে। মে মাসে সড়ক প্রশস্ত করণের কাজ শুরু হবে। এছাড়াও সাতকানিয়ার মৌলভীর দোকান হতে কেরানী হাট পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে। মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীতকরণের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে চারটি স্থানে ছয় লেনের সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে চন্দনাইশের বরুমতি খালের ওপর সেতু নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। পটিয়ার ইন্দ্রপুল, দোহাজারীর শঙ্খ নদী ও চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর ওপর তিনটি সেতুর নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে।
দোহাজারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ জানান, দিন দিন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উপর যানবাহনের চাপ প্রচুর পরিমাণে বাড়ছে। তাই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ৬ লাইনে উন্নীত করার কোন বিকল্প নেই। যেহেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সময় সাপেক্ষ, তাই সড়কটি ১৮ ফিট থেকে ৩৪ ফিটে প্রশস্থ করে স্ট্যান্ডার্ড টু লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। এতে করে যানজট নিরসন হয়ে জনদূর্ভোগ কমবে।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে অসংখ্য বাঁকের কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। তার ওপর সড়ক দিয়ে কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকা থেকে প্রতিদিন লবণবাহী ট্রাক চলাচল করে। ট্রাক থেকে লবণপানি পড়ে পিচ্ছিল হয় সড়ক। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বিভিন্ন হাটবাজারের কারণে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। বিশেষ করে পটিয়ার শান্তির হাট, কলেজ বাজার, বাদামতল, মনসা চৌমুহনী, ভেল্লাপাড়া, মুন্সেফ বাজার, থানার মোড়, ডাকবাংলো, বাসস্ট্যান্ড, পোস্ট অফিস মোড়, চন্দনাইশের রৌশন হাট, বাগিচাহাট, দোহাজারী বাজার, সাতকানিয়ার কেরানীহাট ও লোহাগাড়া সদর বটতলী স্টেশন, পদুয়া তেওয়ারীহাট, আধুনগর খানহাট বাজার ও চুনতি বাজার এলাকায় প্রায় সময়ই যানজট লেগে থাকে।
এ ছাড়া কক্সবাজারের চকরিয়া (চিরিংগা) বাজার, হাবরাং, ডুলাহাজারা স্টেশনে, ঈদগাহ বাজার, রামু বাইপাস, খুরুলিয়া বাজার, রিংরোড ও কক্সবাজার সদরের কলাতলি মোড় পর্যন্ত যানজট থাকে। পর্যটকদের গাড়ি নিয়ে সমুদ্রসৈকতে যেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় অপেক্ষা করতে হয়। তবে, ১৮ ফিট থেকে ৩৪ ফিট প্রশস্থ করে স্ট্যান্ডার্ড টু লেন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের দীর্ঘ যানজট থেকে মুক্ত হবে যাত্রী সাধারন। এতে জনগনের দূর্ভোগ লাঘব হবে।