কোটালীপাড়ায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ
প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৩, ১৩:৫৭ | অনলাইন সংস্করণ
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় চিন্ময় বসু নামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিভাবকসহ এলাকার সাধারণ জনগনের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা ওই শিক্ষকের শাস্তি দাবি করেছেন।
চিন্ময় বসু কোটালীপাড়া উপজেলার ৯৭ নং কান্দি বানিয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও কলাবাড়ী ইউনিয়নের কুমুরিয়া গ্রামের চন্দ্রকান্ত বসুর ছেলে।
জানা গেছে, চিন্ময় বসু নামে ওই শিক্ষক প্রতিনিয়ত শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় পঞ্চম শ্রেণির বিভিন্ন ছাত্রীকে কাছে ডেকে নিয়ে তাদের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিতেন। এ ঘটনা ওই সকল ছাত্রী তাদের অভিভাবকদের জানালে তাদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিখা হালদারসহ অন্যান্য শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাবেয়া সুলতানাকে জানায়। প্রধান শিক্ষক শিখা হালদার শিক্ষক চিন্ময় বসুকে রক্ষার জন্য তড়িঘড়ি করে তাকে তিন দিনের ছুটি প্রদান করেন।
এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক চিন্ময় বসুর এ ধরণের কর্মকান্ডের কারণে পঞ্চম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রী বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। শিক্ষক চিন্ময় বসু এই বিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় ওই সকল ছাত্রীর অভিভাবকরা তাদের মেয়েদেরকে বিদ্যালয় পাঠাবেন না বলে জানিয়েছেন।
পঞ্চম শ্রেণির এক মেধাবী ছাত্রী বলেন, শিক্ষক চিন্ময় বসু প্রতিদিন পাঠদানের সময় আমাদের এক এক জনকে কাছে ডেকে নিয়ে আমাদের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিতেন। এ কারণে আমরা কয়েকজন ছাত্রী পিছনের বেঞ্চে গিয়ে বসতাম। স্যার সেখানে গিয়েও আমাদেরকে জড়িয়ে ধরতেন। স্যারের হাত থেকে রক্ষার জন্য ২/৩ জন ছাত্রী বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আমার মেয়ে বিদ্যালয়ে যেতে চাচ্ছিলো না। তার কাছে বিদ্যালয়ে না যাওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হলে সে শিক্ষক চিন্ময় বসুর কু-কর্মের কথা আমাকে জানায়। আমি বিষয়টি প্রধান শিক্ষক শিখা হালদারকে জানাই। সে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে শিক্ষক চিন্ময় বসুকে ছুটি প্রদান করেন। ওই শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে বদলী না করা পর্যন্ত আমার মেয়েকে বিদ্যালয়ে পাঠাবো না।
এ বিষয়ে জানার জন্য শিক্ষক চিন্ময় বসুর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রধান শিক্ষক শিখা হালদার বলেন, বিষয়টি আমি বিভিন্ন অভিভাবকদের কাছ থেকে জানার পরে শিক্ষক চিন্ময় বসুর কাছে জানতে চেয়েছিলাম। শিক্ষক চিন্ময় বসু ঘটনাটি মিথ্যা বলে আমাকে জানিয়েছেন। তিনি ছাত্রীদেরকে আদর করে পড়া বুঝিয়ে দিতেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। চিন্ময় বসু আমার কাছে ছুটির আবেদন করলে গত বৃহস্পতিবার (১১ মে) থেকে আমি তাকে তিন দিনের ছুটি প্রদান করি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষক বলেন, শিক্ষক চিন্ময় বসু এখানে যোগদানের পর থেকেই পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীদের গায়ে কারণে-অকারণে হাত দিতেন। বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর আমরা প্রধান শিক্ষক শিখা হালদারকে জানালেও তিনি চিন্ময় বসুর বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পক্ষান্তরে তাকে রক্ষার জন্য প্রধান শিক্ষক শিখা হালদার ৩ দিনের ছুটি প্রদান করেন।
এদিকে, গত রোববার শিক্ষক চিন্ময় বসুর বিদ্যালয়ে যোগদান করার কথা থাকলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত তিনি বিদ্যালয়ের যোগদান করেননি।
বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাবেয়া সুলতানা বলেন, শিক্ষক চিন্ময় বসুর কু-কর্মের কথা পঞ্চম শ্রেণির অনেক ছাত্রীর অভিভাবকই আমাকে জানিয়েছেন। আমরা তার বদলীসহ শাস্তির দাবি করছি।
কোটালীপাড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (১৬ মে) তিনি বিষয়টি জানার জন্য স্কুলে গিয়েছিলেন। সেখানে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছেন। সেখান থেকে প্রাপ্ত বিষয়াদি তিনি তার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন বলে জানান।