লবণাক্ত পানি নিয়ে মহাচিন্তায় সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপবাসি

প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৩, ১৭:২২ | অনলাইন সংস্করণ

  এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার

ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাতের পঞ্চম দিনেও সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপবাসির চিন্তা কাটেনি। ঘর বিধ্বস্ত, গাছ উপড়ে যাওয়ার পর সরকারি-বেসরকারিভাবে কিছু খাবার ত্রাণ হিসেবে জুটলেও এখনও ঘর তৈরির কোন ব্যবস্থা করতে পারেনি অন্তত ২ হাজার পরিবার। এসব পরিবারের মানুষ নানাভাবে আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা আশ্রয় কেন্দ্রে রাত্রি যাপন করছেন। এর মধ্যে লবণাক্ত পানি যেন মহাচিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় এলাকাবাসি জানিয়েছেন, সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপের অর্ধেকের বেশি নলকূপ থেকে পানি পাওয়া যাচ্ছে। যে সব নলকূপ থেকে পানি আসছে তাও লবণাক্ত। ফলে খাবার বিশুদ্ধ পানি সংকটের কবলে পড়েছেন তারা। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়া এলাকা ছাড়া অন্যান্য এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। তবে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ এখনও বন্ধ আছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের সদস্য (মেম্বার) খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, মোখার পরবর্তি দ্বীপের প্রধান সমস্যা এখন খাবার পানি। দ্বীপের বেশিভাগ নলকূপ নষ্ট হয়ে গেছে। যে কয়েকটি নলকূপ থেকে পানি আসছে তা লবণাক্ত। ফলে তীব্র খাবার পানির সংকট তৈরি হয়েছে। কোন সময় দ্বীপের পানি লবণাক্ত ছিল না। এটাই প্রথম। এখন নতুন করে নলকূপ স্থাপন করা জরুরী। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে নতুন করে নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।

তিনি জানান, দ্বীপের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ শুকনো খাবার, চাল, ডালসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী ত্রাণ হিসেবে পেয়েছেন। তবে ঘর বিধ্বস্ত হওয়া পরিবারগুলো এখনও ঘর করতে পারেননি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষে আজকের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে টিনসহ ঘর তৈরির কিছু উপকরণ দ্বীপে পৌঁছানোর কথা।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ২ শত পরিবারের জন্য ৪ শত বান্ডিল টিনসহ নানা উপকরণ ট্রলার যোগে পাঠানো হচ্ছে। আজ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যার আগেই তা পৌঁছে যাবে। পর্যায়ক্রমে সকলের কাছে তা পাঠানো হবে। পানি সংকট নিরসনে স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

সেন্টমার্টিনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, দ্বীপে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান। মোখার আঘাতে ব্যাপক সংখ্যক গাছ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তার স্বাভাবিক করে বিদ্যুৎ চালু করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে ইউনিয়নের পক্ষে সহযোগিতা করা হবে। বিদ্যুৎ চালু হলে মটরের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করলে পানির সমস্যা কিছুটা দূর হবে। এখন জরুরী ভিত্তিতে অন্তত ৫ টি নলকূপ স্থাপন জরুরী।

তিনি জানান, দ্বীপে এখনও ১ হাজার পরিবার খোলা আকাশের নিচে। এ অবস্থায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সরকারিভাবে কিছু টিন পাঠানো হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্যান্যদের ঘর তৈরিতে সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে।

এদিকে, বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়া ছাড়া অন্যান্য এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে।

শাহপরীর দ্বীপের উত্তরপাড়ার বাসিন্দা জাসিম মাহমুদ জানান, শাহপরীর দ্বীপের নলকূপের পানি লবণাক্ত হয়ে গেছে। খাবার পানির জন্য অনেক দূরে গিয়ে সংগ্রহ করতে হচ্ছে। শাহপরীর দ্বীপে কিছু ত্রাণ পৌঁছলেও ঘর তৈরির জন্য সহায়তা পৌঁছেনি। বিশেষ করে জালিয়াপাড়ার একটি এলাকায় ৩ শত পরিবার হ শাহপরীরদ্বীপে ১ হাজার পরিবার এখনও খোলা আকাশের নিচে।

সাবরাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর হোছাইন জানিয়েছেন, শাহপরীর দ্বীপের পানি সমস্যা জরুরী ভিত্তিতে সমাধান করা প্রয়োজন। এর জন্য বেশ কিছু নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে ঘর তৈরিতে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।

পানি লবণাক্ত হওয়ার কারণ হিসেবে কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারি প্রকৌশলী আবুল মঞ্জুর জানান, সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় স্বাভাবিকভাবে অগভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। একটু নিচেই পানির স্তর পাওয়ায় বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়। মোখার জোয়ারে লবণাক্ত পানি ওই স্তরের সাথে মিশে গেছে। ফলে পানি লবণাক্ত হয়ে গেছে। বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে তা এখনও লবণাক্ত আছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে এটা কয়েকদিন স্বাভাবিক থাকলে পানি আবারও পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে। একই সঙ্গে যে সব নলকূপ থেকে পানি আসছে না তা থেকেও পানি পাওয়া যাবে। এসব এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের পরামর্শ দেন তিনি।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ জানিয়েছেন, ক্ষয়-ক্ষতির প্রাথমিক তালিকা হলেও চুড়ান্ত তালিকা এখনও হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করছেন। তা হাতে পেতে আরও কয়েকদিন লাগবে। চূড়ান্ত তালিকা পাওয়ার পর বলা যাবে কোথায়, কি ধরণের সহায়তা জরুরী পৌঁছানো দরকার।