চাঁদপুরে বর্তমান সরকারের সময় দেশের বিদ্যুতের চাহিদা পূরনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত চেষ্টায় চাঁদপুরের ৩টি স্থানে ২০১২ সাল থেকে শুরু করে ২০১৭ সালের মধ্যে একটি সরকারী ব্যবস্থাপনায় ও আরো ২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বেসরকারী ব্যবস্থাপনা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করেন দেশ এনার্জি নামক কোম্পানি ও ১১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করতে সক্ষম হন ডরিন পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড নামে একটি সংস্থা। বর্তমানে বেসরকারী ২টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র চালু থাকলেও সরকারীভাবে নির্মিত ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি প্রায় ৬ মাস যাবত বন্ধ রয়েছে।
সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষণের কারণে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে সরকারি অর্থয়ানে নির্মিত চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। সংস্কারের জন্য চুক্তি ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আসার পর আগামী অক্টোবর মাস নাগাদ পুনরায় এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন চালুর সম্ভাবনা রয়েছে বলে দায়িত্বরত প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে। ২০১২ সালে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন শুরু হয়। এরপর এবারই প্রথম দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
কেন্দ্রের প্রকৌশল বিভাগের তথ্যমতে, ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রথম ৫০ মেগাওয়াট এবং ৫ ডিসেম্বর বাকি ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১০০ মেগাওয়াটের ইউনিটটি ৫০ দিন সংস্কার ও রক্ষাণাবেক্ষনের পর চলতি বছরের ৭ ফ্রেবুয়ারি চালু করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু স্থানীয় প্রকৌশলীদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পরও যন্ত্রাংশ সচল না হওয়ায় এখন পর্যন্ত এটি বন্ধ রয়েছে।
চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ নূরুল আবছার বলেন, রক্ষাণাবেক্ষনের জন্য ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়। মূলত এখানে ৫০ ও ১০০ মেগাওয়াট আলাদাভাবে উৎপাদন হয়। ১০০ মেগাওয়াটের ইউনিট ৫০ দিন সংস্কার ও রক্ষাণাবেক্ষনের পরে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি চালু করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু অনাকাঙ্খিত কারণে একটি গ্যাস বুষ্টার চালু না হওয়ায় আমরা আর উৎপাদনে যেতে পারিনি।
তিনি আরো বলেন, গ্যাস বুষ্টারটি আমরা দেশীয় লোকবল এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে সচল করার চেষ্টা করি। আসলে এরকম সুক্ষ্ম কাজ করতে হলে বিদেশি বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন। আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি। গ্যাস বুষ্টারটি ঠিক করার জন্য তাদের সাথে চুক্তিও হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ দেশে আসবে। তখন আমরা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু করতে পারব বলে আশাবাদী রয়েছি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ১৮৫ মেগাওয়াট রয়েছে। কিন্তু চাহিদানুযায়ী সরবরাহ হচ্ছে ১৪৫ মেগাওয়াট। শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ। আর গ্রামের বিদ্যুৎ সরবরাহ করে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও ২। এসবের মধ্যে শহরের চাহিদা ৮০ মেগাওয়াট, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও ২ এর চাহিদা ১০৫ মেগাওয়াট। তবে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সংকট থাকায় চাঁদপুরে চাহিদার তুলনায় মাত্র ৫০% বিদ্যুৎ পাচ্ছে গ্রাহকরা। যার কারণে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিং দেখাতে হচ্ছে।
এদিকে, গত দুই সপ্তাহ বিদ্যুতের ধারাবাহিক লোডশেডিং-এর কারণে শহর ও গ্রামের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিদ্যুতের কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সবাই। বার বার লোডশেডিং হওয়ায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, উৎপাদনমূখি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াসহ সমস্যায় পড়ছে লোকজন।
উল্লেখ, চাঁদপুরে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ৩টি। জেলা সদরে সরকারিভাবে ১টি এবং বেসরকারি কোম্পানির উদ্যোগে দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ হয়েছে। এর মধ্যে শহরের গুনরাজদী এলাকায় ১২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁদপুরে এসে এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন এবং ২০১২ সালের ২০ নভেম্বর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়।
এছাড়া সদর উপজেলার ইসলামপুর গাছতলা এলাকায় ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করেন দেশ এনার্জি নামক কোম্পানি এবং শহর তলীর ইচুলী এলাকায় ডরিন পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড নামে একটি সংস্থা ১১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করতে সক্ষম হয়ে উৎপাদন করছেন ।