কক্সবাজারের পর্যটন জোনে ভয়ংকর টর্চার সেল, নারীসহ উদ্ধার ৫
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৩, ১৪:০৭ | অনলাইন সংস্করণ
কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজার শহরের পর্যটন জোনের কলাতলী আবাসিক হোটেল মোটেল এলাকায় ভয়ংকর টর্চার সেলের সন্ধান পেয়েছে র্যাব-১৫। সুরক্ষিত গোপন ওই আস্তানা থেকে অপহৃত নারীসহ ৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই টর্চার সেল পরিচালনাকারি চক্রের প্রধান পুলিশের বহিস্কৃত এসআইসহ ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার রাতভর এ অভিযান চালানো হয়।
এতে আটক হয়েছে পুলিশের বহিস্কৃত এসআই এসএম ইকবাল পারভেজ। তিনি চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলাধীন মাইতুল সরকারবাড়ি এলাকার মৃত এরশাদ আলমের ছেলে। ২০২১ সালে ইয়াবাসহ র্যাবের হাতে আটকের পর বহিস্কৃত হন বাংলাদেশ পুলিশ থেকে, তাঁর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রয়েছে। আটক অপর ২ সহযোগি কক্সবাজার পৌরসভার নতুন বাহারছড়া এলাকার মো. ইউনুসের ছেলে এমটি মুন্না ও একই এলাকার মৃত আবদুল করিমের ছেলে মো. ইউসুফ। এর মধ্যে এমটি মুন্না সম্পর্কে ইকবাল পারভেজের শ্যালক।
টর্চার থেকে উদ্ধার হওয়া অপহৃতদের মধ্যে ঢাকার ২ জন এবং রোহিঙ্গা দম্পতি রয়েছে।
র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারি পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী জানিয়েছেন, কক্সবাজার কেন্দ্রিক ভয়ংকর এক অপহরণ সিন্ডিকেটের অবস্থান শনাক্তের পর শুক্রবার রাতে একের পর এক তাদের সুরক্ষিত গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে সেখানে বন্দী ১ নারীসহ ৫ অপহৃতকে উদ্ধার করেছে র্যাব। এ সময় চক্রের মূল হোতা পুলিশের বহিষ্কৃত উপপরিদর্শক (এসআই) এসএম ইকবাল পারভেজসহ চক্রের তিন সদস্যকে আটক করা হয়।
তিনি জানান, কক্সবাজার র্যাব ক্যাম্পের কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীম'র নেতৃত্বে র্যাবের একটি চৌকস দল কক্সবাজার শহরের কলাতলী ও সুগন্ধা এলাকায় রাতভর এ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে উদ্ধার হওয়া ঢাকার মো. শাহজাহান কবির ও মঞ্জুর আলম কক্সবাজারে বেড়াতে এসে গত ১৬ মে নিখোঁজ হন। পরবর্তীতে একটি মোবাইল নম্বর থেকে কল করে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাদের পরিবারের সদস্যদের নিকট ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরিবারের তরফ থেকে আংশিক মুক্তিপণ পরিশোধ করা হলেও মুক্তি মেলেনি শাহজাহান ও মঞ্জুরের। কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানাধীন কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা অপহৃত দম্পতির গল্প আরো করুণ। দাবিকৃত মোটা অংকের টাকা না পেয়ে স্বামীর হাত-মুখ বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণ করতে থাকেন চক্রের সদস্য। স্বামীর উপর চলতে তাকে মধ্যযুগীয় অমানবিক বর্বর নির্যাতন।অপহৃত ব্যক্তিদের স্বজনেরা বিকাশে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিলেও তাদেরকে ছাড়া হয়নি। স্বজনেরা বিষয়টি র্যাবকে অবহিত করলে গোয়েন্দা উপাত্ত ব্যবহার করে কাজ শুরু করে। এরপর সন্ধান মেলে ২ টি ভয়ংকর টর্চার সেলের। যার একটি কলাতলী এবং অপরটি সুগন্ধা পয়েন্টে।
আস্তানা ২ টি নাম ঠিকানা প্রকাশ না করলেও আবাসিক হোটেল, মোটেল গেস্ট হাউস বলে নিশ্চিত করেছে র্যাব।
র্যাব বলছে, চক্রের প্রধান ইকবাল পারভেজ ২০২১ সালের ১৭ ডিসেম্বর পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত অবস্থায় বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ র্যাবের নিকট ধরা পড়েন। এতে দীর্ঘদিন কারাভোগের পাশাপাশি চাকুরিও হারান তিনি। চাকরি থেকে বরখাস্ত ও কারাগার থেকে বের হওয়ার পর ইকবাল তার শ্যালক মুন্নাসহ অন্য ৭/৮ জন সহযোগী নিয়ে গড়ে তোলেন অপহরণ বাণিজ্যের রমরমা এ সিন্ডিকেট। চক্রের সদস্যরা দেশের নানা প্রান্ত থেকে কক্সবাজার আসা মানুষদের টার্গেট করে অপহরণ করে তাদের স্বজনদের নিকট ফোন করে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করতেন। প্রত্যাশা মাফিক টাকা না পেলে আটককৃতদেরকে দিনের পর দিন আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করা হতো। আটক অবস্থায় অপহৃত নারীদেরকে যৌনদাসী হিসেবেও ব্যবহার করতেন তারা।
এ ঘটনায় ১৯ মে অপহরণের শিকার শাহজাহান কবিরের বোন আমেনা বেগম বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আসামি ও উদ্ধারকৃত ব্যক্তিদের পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়ার জন্য কক্সবাজার সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান, র্যাব ১৫ এর সিনিয়র সহকারি পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী।
এর আগে ২০২২ সালে আগস্ট মাসের শুরুতে কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনে কাটেজ এলাকায় আরও একটি 'টর্চার সেলের' সন্ধান পেয়েছিল ট্যুরিস্ট পুলিশ। সেখানে আটকে রাখা পর্যটকসহ চারজনকে উদ্ধার করে ১১ জনকে আটকও করা হয়েছিল।