ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উখিয়ায় খালে ইসিএ'তে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে মাছের ঘের

উখিয়ায় খালে ইসিএ'তে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে মাছের ঘের

সাগর ও নদীর জোয়ার-ভাটার প্রবাহ বন্ধ করে খননযন্ত্র (এস্কেভেটর) দিয়ে মাটি কেটে দেয়া হচ্ছে বাঁধ। কাজ করছেন ১০/১৫ জন শ্রমিক। গত এক সপ্তাহ ধরে এভাবে কক্সবাজারের উখিয়ার জালিয়াপালং এর মনখালী সেতু ও মেরিন ড্রাইভের পশ্চিম পাশে সাগরতীরে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় (ইসিএ) প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করে গড়ে তোলা হচ্ছে মাছের ঘের।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মনখালী খালটি সাগরের সাথে মিশে গিয়েছে। খালটি দিয়ে সাগরের জোয়ার-ভাটা হয় এবং জেলেরা সেখানে মাছ ধরে। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে জোয়ার-ভাটার প্রবাহ বিদ্যমান। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে সেখানে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের তৈরি করা হচ্ছে। অথচ এলাকাটিকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করেছে সরকার।

মাদারবনিয়া উপকূলীয় ইসিএ ব্যবস্থাপনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড এর সভাপতি আবুল কাশেম জানান, মনখালী, ছেপটখালী, ছোয়ানখালী ও মাদারবনিয়া এলাকায় ইসিএ নিয়ে কাজ করেন তারা। ইসিএ হওয়ায় মেরিন ড্রাইভ সড়কের পশ্চিমে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া কোন কর্মকান্ড করা হয় না। তবে মনখালী সেতুর পশ্চিমে মাছের ঘের তৈরির বিষয় তাঁর জানা নেই উল্লেখ করে তিনি খবর নেবেন বলে জানান।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের মেরিন ড্রাইভ সড়কের মনখালী সেতুর পশ্চিম পাশে সাগর ও মনখালী খাল। সেখানে আনুমানিক ৭/৮ একর কাদামাটিতে দেয়া হচ্ছে বাঁধ। বাঁধ নির্মাণে কাজ করছেন ১০/১৫ জন শ্রমিক। একটি খননযন্ত্রও (এস্কেভেটর) ব্যবহার করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে শ্রমিকরা জানান, রফিকুল হুদা ও আবছার কামাল কাজলের মাধ্যমে মাছের ঘের করার জন্য তারা বাঁধ দেয়ার কাজ করছেন এক সপ্তাহ ধরে।

তারা আরও জানান, আবছার কামাল কাজল স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি। যোগাযোগ করা হলে আবছার কামাল কাজল বলেন, 'আমি এতে জড়িত নই, সেখানে আমার কোন জমি নেই। তবে যতটুকু জানি যেখানে ঘের তৈরি করা হচ্ছে তা ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি।' ঘের নির্মাণের সাথে জড়িত রফিকুল হুদা বলেন, 'এসব আমাদের ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি। এতে আংশিক খাস জমি থাকতে পারে।' এক প্রশ্নের জবাবে ঘের নির্মাণে পরিবেশ অধিদপ্তর সহ সরকারি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেননি বলে স্বীকার করেন তিনি।

অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিবেশ ধ্বংসের এমন ভয়াবহ কর্মকান্ডের সত্যতা পেয়েছে পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'এনভায়রনমেন্ট পিপল' এর একটি দল।

সংগঠনটির প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, 'মনখালীর সাগর তীরবর্তী এলাকাটি প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ)। ইসিএ আইন অনুযায়ী সেখানে ভূমির রূপ পরিবর্তন ও মাটি কেটে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। অথচ সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া সেখানে খাল ও সাগরের জোয়ার-ভাটার প্রবাহ বন্ধ করে বাঁধ দেয়া হচ্ছে। এতে বিভিন্ন প্রজাতির কাঁকড়া সহ জলজ প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র বিপন্ন হচ্ছে।' এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত এসব কার্যক্রম বন্ধ করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন তিনি। যোগাযোগ করা হলে জালিয়াপালং ইউনিয়নের ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বলেন, 'ঘটনাস্থলে লোক পাঠিয়ে পরিমাপ করে কিছু খাস জমি পাওয়া গেছে। তাদের কাজ বন্ধ রেখে উপজেলা ভূমি অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।'

উখিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালেহ আহমেদ বলেন, 'ঘটনাটি আমার নজরে এসেছে। তাদের কাজ বন্ধ রেখে কাগজপত্র নিয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে। কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর তাদের কোন অনুমতি আছে কিনা অথবা পরিবেশের কি ক্ষতি হচ্ছে তা দেখা হবে।'

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, সেখানে কোন অনুমতি দেয়া হয়নি। ঘটনাস্থলে গিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উখিয়া,কক্সবাজার,ইসিএ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত