পরকীয়ায় বাঁধা: রূপগঞ্জে ডাকাতির নাটক সাজিয়ে স্ত্রীকে হত্যা

প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৩, ১৬:২৬ | অনলাইন সংস্করণ

  নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে স্ত্রী মৌসুমিকে ঈদের মার্কেট করে দেয়ার নাম করে হাইয়েস গাড়িতে তুলে শ্বাসরোধে হত্যার পর গাড়িতে ডাকাতি হয়েছে বলে নাটক সাজায় স্বামী শরিফুল ইসলাম রাসেল। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন ভাবে একাধিক তরুনীর সঙ্গে স্বামীর অনৈতিক সম্পর্ক এবং ম্যাসেঞ্জার, ওয়াটসঅ্যাপে চ্যাটে বাঁধা দেয়ার কারণেই স্ত্রীকে হত্যা করে স্বামী। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত স্বামী শরিফুুল ইসলাম রাসেল, তার সহযোগি হাইয়েস গাড়ির চালক রাজিব হোসেন, বন্ধু আরজুকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি)পুলিশ।  

মঙ্গলবার (২৩ মে) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। 

তিনি জানান, গত ১৯ এপ্রিল ঈদের তিনদিন আগে স্বামী শরিফুল ইসলাম রাসেল স্ত্রীকে ঈদ মার্কেট করে দেয়ার কথা বলে বাপের বাড়ি থেকে ভুলতা গাউছিয়া মার্কেটে নিয়ে আসে। ঈদ মার্কেট শেষ করে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী স্ত্রীকে আগে থেকে ঠিক করে রাখা একটি হাইয়েস মাইক্রোবাসে উঠায়। সেখানে স্বামী শরীফুল ইসলাম রাসেল স্ত্রী মৌসুমিকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরবর্তীতে ঘটনাটিকে ডাকাতির নাটক সাজায়। গাড়ি থেকে নামার আগে বন্ধু আরজুকে দিয়ে শরিফুলের পিঠে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করিয়ে গুরুত্বর আহত হয়। ডাকাতির ঘটনাস্থল দেখানো হয় সোনারগাঁ থানার এশিয়ান হাইওয়ে সড়কে। 

এ ঘটনায় নিহতের ভাই মো: শাহ জালাল বাদি হয়ে সোনারগাঁ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পুলিশের তদন্তে ঘটনাটি রহস্যজনক মনে হওয়ার ওই দিনই স্বামী শরিফুল ইসলাম রাসেলকে গ্রেফতার করে। পরে মামলাটি তদন্তের জন্য জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। 

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে রুপগঞ্জের গোলাকান্দাইল এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যার সঙ্গে জড়িত গাড়ির চালক রাজিব হোসেন ও বন্ধু আরজুকে গ্রেফতার করে। তারা দুইজনই পুলিশের কাছে হত্যার বর্ণনা দেয়। 

নিহতের ছোট ভাই শাহজালাল জানান, প্রায় ১০ বছর আগে শরিফুল ইসলাম রাসেলের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে করেন মৌসুমি। প্রথমে মৌসুমির পরিবার বিয়ে মেনে নেয়নি। পরবর্তীতে দুই পরিবারের সমঝোতায় বিয়ে মেনে নেয়। তাদের ঘরে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই যৌতুকের টাকার জন্য তার বোনকে চাপ দিতো রাসেল। টাকা না দিলে শারীরিক নির্যাতন করা হতো বলে অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়া একাধিক নারীর সঙ্গে তার পরকিয়া ও অনৈতিক সম্পর্ক ছিলো। এগুলো প্রতিবাদ করতো আমার বোন। তাকে অনেকবার সংশোধনের চেষ্টা করা হয়েছে। এ নিয়ে একাধিকবার পারিবারিকভাবে বিচার সালিশও হয়েছে।  

তিনি বলেন, মুলত একাধিক নারীর সঙ্গে রাসেলের পরকীয়া সম্পর্কের প্রতিবাদ করায় আমার বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি রাসেলসহ সকল আসামীর দৃষ্টান্তমূলক শান্তির দাবি করেন। 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় স্বামী শরিফুল ইসলাম রাসেলকে রিমান্ডে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যেসব নারীদের সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্ক ছিলো প্রয়োজনে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে নিজের পরকীয়ার বাঁধা দুর করতেই স্ত্রীকে হত্যার পর ডাকাতির নাটক সাজায় স্বামী।