ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চাঁদপুরে শিশু আদিল হত্যা

টাকার জন্য গৃহ শিক্ষকের হাতে খুন শিশু শিক্ষার্থী

টিভি সিরিয়াল ‘সিআইডি’ দেখে অপহরণের পরিকল্পনা
টাকার জন্য গৃহ শিক্ষকের হাতে খুন শিশু শিক্ষার্থী

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার রুদ্রগাঁও তালুকদার বাড়ির আনোয়ার হোসেনের শিশু পুত্র আদিল মোহাম্মদ সোহানকে (৮) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।

এছাড়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত মো. আবদুল আহাদ (১৭) নামে এক কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার মো. আবদুল আহাদ একই এলাকায় শরীফ তালুকদারের ছেলে। সে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ‘সিআইডি’ দেখে মুক্তিপণ আদায়ের লোভে সোহানকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মাটিতে পুতে রাখে বলে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে আহাদ। বুধবার (২৪ মে) দুপুরে চাঁদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে গনমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান চাঁদপুর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিলন মাহমুদ।

পুলিশ সুপার বলেন, রুদ্রগাঁও তালুকদার বাড়ীর আনোয়ার হোসেন তার শিশু পুত্র আদিল মোহাম্মদ সোহান গত ১৫ মে সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পর মসজিদ থেকে বাড়িতে না আসলে বিভিন্ন স্থানে খুঁজে না পেয়ে পরদিন ১৬ মে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি জিডি করেন। এই ঘটনায় পুলিশের তদন্তকাজ চলছিল। ১৯ মে সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে সংবাদ পেয়ে নিখোঁজ শিশুর বাড়ীর পাশের জনৈক আবদুল মতিন এর গরুর জন্য চাষকৃত জমি থেকে আদিলের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এই ঘটনায় ওইদিনই শিশুর পিতা আনোয়ার হোসেন ফরিদগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশের একটি টিম মামলাটির তদন্ত শুরু করে। পুলিশ ধারণা করে যে সময়ের মধ্যে শিশু আদিল নিখোঁজ হয়, তা খুবই কম সময়। খুব কাছের লোকের মাধ্যমে এই ঘটনাটি সংঘটিত হতে পারে।

পুলিশ সুপার আরো বলেন, পুলিশ তদন্তকালে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশুর গৃহ শিক্ষক মো. আবদুল আহাদকে মঙ্গলবার (২৩ মে) গ্রেফতার করেন করে তার কাছ থেকে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করতে পারে।

জিজ্ঞাসাবাদে কিশোর অপরাধী আবদুল আহাদ জানান, সে নিয়মিত ভারতীয় সিরিয়াল সিআইডি দেখেন। সেই আলোকে ঘটনার দিন মাগরিবের পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে মসজিদ এলাকা থেকে আদিলকে বাড়ির পাশের নির্জন নার্সারিতে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে আদিলের মুখ ও গলায় চেপে ধরলে সে নিস্তেজ হয়ে যায়। ওই সময় আহাদ তার মায়ের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আদিলের মার কাছে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য কল দেয়। কিন্তু আদিলের মা তার সন্তানকে খুঁজতে গিয়ে মোবাইল ফোন ঘরে রেখে যান। যে কারণে ফোন রিসিভ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে কিশোর অপরাধী আহাদও আদিলের পরিবারের সাথে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। রাত ১২টার দিকে সবাই ঘরে চলেগেলে আহাদ ঘটনাস্থলে আদিলকে দেখতে যান, গিয়ে দেখেন আদিল জীবিত নেই। এরপর সে রাত ১টার দিকে প্রতিবেশী রেনু বেগমের রান্না ঘর থেকে দা ও কোদাল এনে মাটি খুড়ে জনৈক আবদুল মতিন এর গরুর জন্য চাষকৃত জমিতে আদিলের মরদেহ পুতে রাখে। এরপর দা পানি দিয়ে পরিস্কার করে ওই রান্না ঘরে রেখে দেয় এবং তার মায়ের ব্যবহৃত সীমকার্ড বাচ্চু মিয়ার পুকুরে ফেলে দেয়।

পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, কিশোর অপরাধী মো. আবদুল আহাদের বয়স ১৭ বছর ৬ মাস। সে একই এলাকায় শরীফ তালুকদারের ছেলে। এ বছর সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। তার পরিবারে আর্থিক সংকট আছে। আদিলের গৃহ শিক্ষক হওয়ার কারণে সে ওই পরিবারের ঘনিষ্ঠছিলো। সে জানতো আদিলের ঘরে কিছু টাকা আছে। যে কারণে সে এই পরিকল্পনা করে। সিরিয়ালে দেখেছে ৪০ সেকেন্ড মুখ চেপে ধরলে মারা যায় না এবং অজ্ঞান হয়ে থাকে। কিন্তু তার সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগেনি বরং শিশুটির মৃত্যু হয়ে গিয়েছে।

এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) পলাশ কান্তি নাথ, ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল মান্নান, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি এএইচ এম আহসান উল্লাহসহ জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

আলোকিত/ এ আই

চাঁদপুর,পুলিশ,সিআইডি
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত