প্রত্যাবাসনের উদ্যোগে ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের সকল সমস্যা সমাধানে আশ্বাস প্রদান করেছেন সম্ভাব্য প্রত্যাবাসনের বিষয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা আসা মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সকালে কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভা জালিয়াপাড়ারস্থল টেকনাফ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটি দিয়ে বাংলাদেশে আসা মিয়ানমারের ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের সাথে আলাপকালে এমন আশ্বাস প্রদান করেছেন। এদিন বিকালে একই জেটি দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত গেছেন দেশটির মিনিস্ট্রি অব সোস্যাল অ্যাফেয়ার্সের মংডুর আঞ্চলিক পরিচালক অং মাইউ এর নেতৃত্বে আসা ১৪ প্রতিনিধি।
এরপর বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার বিষয়ক মহাপরিচালক মিয়া মো. মাইনুল কবির জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রথম থেকে উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে প্রত্যাবাসন। রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান কেবল প্রত্যাবাসন। তাই শুরু থেকে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক মহলকে সাথে নিয়ে কাজ করছেন বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে মিয়ানমারের ১৪ প্রতিনিধি রোহিঙ্গাদের সাথে দীর্ঘ সময় আলোচনা করেছেন। রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমারের গৃহিত উদ্যোগ, পদক্ষেপ অবহিত করেছেন। রোহিঙ্গারা তাদের নানা প্রশ্নে করেছেন। প্রতিনিধিরা এর উত্তর দিয়েছেন।
তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের সাথে আলাপকালে মিয়ানমারের মিনিস্ট্রি অব সোস্যাল অ্যাফেয়ার্সের মংডুর আঞ্চলিক পরিচালক অং মাইউ আশ্বাস্ত করেছেন রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধানে আন্তরিকভাবে কাজ করার।
কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ছাড়া বিকল্প কোন পথ বাংলাদেশের নেই। এই প্রত্যাবাসন ইস্যু নিয়ে অচলাবস্থা থাকলেও তা কেটে গেছে। মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর, রোহিঙ্গাদের সাথে আলোচনা, বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের সাথে নিয়ে প্রতিনিধিদের পরিদর্শন হয়েছে। এরপর বৃহস্পতিবার ফলোআপ হিসেবে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি এসেছেন। তারা রোহিঙ্গাদের মধ্যে নির্বাচিত ১ হাজার ১৭৬ জন রোহিঙ্গাদের মধ্যে ২৮০ জন পরিবার প্রধান নারী-পুরুষের সাথে আলাপ করেছে। আলোচনায় রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমারের উদ্যোগ যেমন অবহিত করা হয়েছে, একইভাবে রোহিঙ্গারাও তাদের দাবি জানিয়েছেন। এর মধ্যে প্রত্যাবাসনের একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সকাল ৯টার পর টেকনাফ পৌরসভা জালিয়াপাড়ারস্থল টেকনাফ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটি দিয়ে কার্গো ট্রলারে মিয়ানমারের ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ সফরে আসে। এ সময় অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) সামছু দৌজা সহ সরকারি কর্মকর্তারা তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। টেকনাফ পৌঁছার পর প্রতিনিধিদলটি টেকনাফের ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। বৈঠক শেষে প্রতিনিধিদলটি মিয়ানমার ফেরত গেছেন।
এদিকে গত ৫ মে বাংলাদেশ সরকার ও রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দল রাখাইন সফর করে পরিস্থিতি দেখে এসেছেন। এর আগে ১৫ মার্চ মিয়ানমার প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসে। সে সময় প্রায় ৪৮০ জন রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাই বাছাই শেষে মিয়ানমার ফিরে যায় প্রতিনিধি দলটি। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে সালের আগস্ট থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। তাদের রাখাইনে ফেরত নিতে প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। চুক্তি স্বাক্ষর করলেও রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরাতে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয়েছে একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি। এই কমিটি দুটি সভা করলেও প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমার ফেরত যাননি।