নারায়ণগঞ্জের বন্দরে তেলের ব্যবসায় আধিপত্য নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে ক্যাপ রোমান ও অনিক গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুর্ধর্ষ ত্রাস রোমান বাহিনীর প্রধান ক্যাপ রোমান (৩৬) নিহত হয়েছে। শুক্রবার (২৬ মে) রাত সাড়ে ৮টায় উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের ঘারমোড়া বাজারে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত রোমান বন্দরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মদনগঞ্জ সৈয়ালঘাট এলাকার আদু মিয়ার ছেলে। ঘটনার পরপরেই পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের ঘটনায় ঘারমোড়া এলাকাসহ আশেপাশের এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা জানায়, 'বন্দরের চর ধলেশ্বরী এলাকায় পোড়া তেলের ব্যবসা নিয়ে ক্যাপ রোমানের সাথে ঘারমোড়া এলাকার মহিদ মিয়ার ছেলে অনিকের বিরোধ চলছিলো। এনিয়ে গত বছরের ২২ অক্টোবর ক্যাপ রোমান বাহিনী ও অনিক বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। সেসময় একটি ইজিবাইক পুড়িয়ে দেয়া হয়। বেশকিছু ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় উভয়পক্ষ। আহত হয় নারীসহ ১৫ জন। দীর্ঘদিন পর শুক্রবার আবারও সংঘর্ষে জড়ায় উভয়পক্ষ। এর মধ্যে অনিকের অনুসারীরা রোমানকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে আমিসহ বন্দর থানার একাধিক টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে চলে আসি। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। স্থানীয়রা রোমানকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এই ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
জানা গেছে, সন্ত্রাসী, মাদক, নৌ পথে ডাকাতি ও তেল চোরসহ নানা অপকর্মের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছিল কলাগাছিয়া ইউনিয়ন এবং নাসিক ১৯নং ওয়ার্ড এলাকা। দীর্ঘদিন ধরে নাসিকের ১৯নং ওয়ার্ড ও আশেপাশের এলাকায় মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছিল ক্যাপ রোমান বাহিনী। নদী পথে ডাকাতি, তেল চুরি, মাদক পাচারসহ এমন কোন হীন কাজ নেই যা তাঁরা করেন না। নিজেদের শক্তিকে বৃদ্ধি করতে শহরের প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের (ভাইজান নামে পরিচিত) নাম বলতেও ভুল করেন না। কলাগাছিয়া ইউনিয়নের বিশাল একটা অংশ ও নাসিক ১৯নং ওয়ার্ড এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিনিয়ত এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে আতঙ্কিত করে রাখে। সন্ত্রাসী ও মাদক কর্মকান্ডে ইতিপূর্বে একাধিকবার গ্রেফতার হলেও থেমে ছিলনা ক্যাপ রোমান বাহিনীর দৌরাত্ম্য।
চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারী বিকেলে চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ক্যাপ রোমান বাহিনী বন্দর উপজেলার শান্তিনগর এলাকায় বাংলাদেশ নৌ-যান কর্মচারী ইউনিয়ন শাখার কার্যালয়ে তান্ডব চালিয়েছিল। এসময় কার্যালয়ে থাকা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি শামীম ওসমান, প্রয়াত শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ ও বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিনের ছবি ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। এ সময় বাধা দিতে আসলে স্থানীয় পঞ্চায়েতের এক মুরুব্বিকে মারধর ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়।
এর আগে ২০২২ সালের ২৮ জানুয়ারী শুক্রবার সন্ধ্যায় লক্ষ্যারচর এলাকায় কবির মিয়ার বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালায় মাদক সম্রাট ক্যাপ রোমানসহ ১৫/২০ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। হামলায় গুরুতর আহত বাতেন মিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় আহত কবির হোসেন বাদী হয়ে বন্দর থানায় ক্যাপ রোমান, শিপলু, শিমুল ও সাইদুলসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ্য করে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই বছরের ২৯ জানুয়ারী শুক্রবার সন্ধ্যায় বন্দর থানার ১৯নং ওয়ার্ডের মদনগঞ্জ সৈয়ালবাড়ী ঘাট এলাকায় মামলার ৪নং আসামী সাইদুলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ।
২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বন্দর থানার ১৯ নং ওয়ার্ডের মদনগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে বন্দরের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও আলোচিত সন্ত্রাসী ক্যাপ রোমান (৩৬) ও চোক্কা রমজানকে (৩২) গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় মদনগঞ্জ ফাঁড়ী পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীরা হলেন- বন্দর থানার ১৯নং ওয়ার্ডের মদনগঞ্জ সৈয়াল বাড়ি ঘাট এলাকার আদু মিয়ার ছেলে ক্যাপ রোমান ও বন্দর উপজেলার আরীনগর এলাকার মমিনউদ্দিন মিয়ার ছেলে অপর সন্ত্রাসী চোক্কা রমজান। ওইদিন তালিকা ভূক্ত মাদক ব্যবসায়ী ক্যাপ রোমানকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধিসহ তার অনুসারীর থানায় ব্যাপক তদ্বিরও চালিয়েছিল।
সেসময় মদনগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ীর উপ-পরিদর্শক সিহাব গণমাধ্যমকে জানান, সন্ত্রাসী ক্যাপ রোমানের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা, মাদক ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ বহু মামলা রয়েছে। অপর আসামী চোক্কা রমজানের বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ক্যাপ রোমান ও চোক্কা রমজান বন্দর থানায় পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। ২০২২ সালের অক্টোবর মাসেও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রোমান বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল।