বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সহকারি মোটরযান পরিদর্শক আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের তদন্ত দলকে কক্সবাজারের একটি ব্যাংকের একাউন্টে ২ কোটি টাকার বেশি জমা দানের বৈধ কোন উৎস জানাতে পারেননি আরিফুল। এর মধ্যে তদন্ত চলাকালিন ওই একাউন্ট থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে ৫০ লাখ টাকার বেশি। যার কারণে ওই একাউন্টে থাকা প্রায় দেড় কোটি টাকা অবরুদ্ধকরণের আদেশ প্রদান করেছে আদালত।
দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক ও অনুসন্ধানকারি কর্মকর্তা মো. নাছরুল্লাহ হোসাইনের আবেদনের প্রেক্ষিত ২৫ মে বৃহস্পতিবার কক্সবাজার জেলা দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল এই আদেশ প্রদান করেন।
আরিফুল ইসলাম বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সহকারি মোটরযান পরিদর্শক হিসেবে বর্তমানে নোয়াখালী জেলায় কর্মরত রয়েছেন। কক্সবাজার সদরের এসএমপাড়ার ফজলুল হকের পুত্র আরিফুল ইসলাম বিআরটিএ এর কক্সবাজারে সাবেক সহকারি মোটরযান পরিদর্শক থাকাকালিন এই টাকা লেনদেন করেন বলে আবেদনে উল্লেখ্য রয়েছে।
আবেদনে দুদক কর্মকর্তা মো. নাছরুল্লাহ হোসাইন বলেছেন, আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাংকের একাউন্টের মাধ্যমে ঘুষ লেনদেন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অনুসন্ধানকালে আরিফুল ইসলাম এর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান “মেসার্স ঘাসফুল ট্রেডার্স” এর নামে ডাচ্ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, কক্সবাজার শাখার চলতি একটি হিসাবে (একাউন্ট) ২ কোটি ২ লাখ ৬৬ হাজার ৯৬৪ টাকা জমার সত্যতা পাওয়া যায়। অনুসন্ধানকালে তিনি উক্ত লেনদেন সম্পর্কে কোন সন্তোষজনক ব্যাখ্যা প্রদান করতে পারেননি এবং এই টাকার কোন বৈধ উৎস প্রদর্শন করতে পারেনি। ওই একাউন্ট থেকে ৫০ লাখের বেশি টাকা সরিয়ে নেয়া হলেও বর্তমানে ওখানে ১ কোটি ৪৯ লাখ ৪৮ হাজার ৬০৭ টাকা জমা রয়েছে। এই সংক্রান্তে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট এর গোয়েন্দা প্রতিবেদন পর্যালোচনায় হিসাবটিতে আরিফুল ইসলামের ঘুষের অর্থ লেনদেন করে অপরাধ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর সম্পৃক্ত অপরাধ এর পর্যায়ভুক্ত মর্মে মতামত প্রদান করা হয়েছে।
আবেদনে বলা হয়েছে, একজন সরকারী চাকুরিজীবীর ব্যাংক হিসাবে উক্ত লেনদেন সন্দেহজনক হওয়ায় জমাকৃত অর্থ উত্তোলন করতে না পারার লক্ষ্যে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ২৩(গ) ধারা মোতাবেক বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট, বাংলাদেশ ব্যাংককে সাত বারের মত একাউন্টটির লেনদেন স্থগিতকরনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছে। তাই ডাচ্ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, কক্সবাজার শাখার একাউন্টটি অবরুদ্ধকরণের দাবি জানানো হয়।
আদালতের আদেশের একটি কপি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। যেখানে আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারক একাউন্টটি অবরুদ্ধ করা হয়েছে বলে আদেশ প্রদান করে এ সংক্রান্ত আদেশ অবিলম্বে কার্যকর সংশ্লিষ্ট শাখার ব্যাংক ব্যবস্থাপককে নির্দেশ প্রদান করা হয়। যার অনুলিপি ব্যাংকেও পাঠানো হয়েছে।
এমন আদেশ হওয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক ও অনুসন্ধানকারি কর্মকর্তা মো. নাছরুল্লাহ হোসাইন। তিনি জানান, অনুসন্ধান শেষ পর্যায়ে। এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এব্যাপারে অভিযুক্ত বিআরটিএ এর সহকারি মোটরযান পরিদর্শক আরিফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।