ঠাকুরগাঁওয়ে গ্রামবাসিকে চমক দেখিয়ে গরুর গাড়িতে আসলেন নববধু

প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৩, ১৯:২৮ | অনলাইন সংস্করণ

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী গান ‘ওঁকি গাড়িয়াল ভাই-কত রব আমি পন্থের পানে চাঁইয়া রে’- এই গানটি যেমন কালের বিবর্তণে আর শোনা যায় না, তেমনি গ্রাম-বাংলার জনপ্রিয় যানবাহন গরু ও মহিষের গাড়ি এখন আর চোখে পড়ে না। হারিয়ে যেতে বসেছে গাড়িয়াল পেশা। আর এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে মোটর গাড়ি কিংবা হেলিকপ্টারে নয় বরং নব বধুকে বরণ করে নিয়ে আসলেন গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া গরু ও মহিষের গাড়িতে। এই নান্দনিকার চিত্র দেখতে পাওয়া যায় রাস্তাঘাটসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ।

সম্প্রতি এমন ঘটনা ঘটেছে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার খামার নারায়নপুর গ্রামে। নিরব হোসেন সাব্বির ওই গ্রামের কুদ্দুস আলীর ছেলে। আর বিয়ের সম্বোধন হয় পাশের গ্রামের সিরাজুল ইসলামের মেয়ে ইসরাত জাহান এশা আকাতারের সাথে। এই বিয়ে দেখতে ভিড় জমান গ্রামের শত শত নারী-পুরুষ। উপভোগও করেন তারা। 
এখন এসব বাহন রূপকথার গল্পমাত্র, বাংলা নববর্ষ পালনের সময় ২-৪ গরু- মহিষের গাড়ী চোখে পড়লেও সেটা বিলুপ্তির পথে। স্থান পেয়েছে সংবাদপত্র ও বইয়ের পাতায়। মাঝে মধ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় দু-একটি গরু ও মহিষের গাড়ি চোখে পড়লেও শহর এলাকায় একেবারেই দেখা যায় না।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে বাবার ইচ্ছেই এই বিয়ের আয়োজন। ছেলেও বাবার প্রস্তাবে উৎসাহ বোধ করেন। গ্রামবাসি কখনও ভাবেনি গরু ও মহিষের গাড়িতে ছেলে যাবে বর সেজে আর কন্যা আসবে বধু সেজে। এ ঘটনায় গ্রাম থেকে শুরু করে গোটা জেলায় যেন এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। আর এই ইতিহাসের নায়ক গ্রামের সাধারণ কৃষক কুদ্দুস আলী।  
বরের বাবা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আমার ইচ্ছা ছিল, ছেলের বিয়েতে বরযাত্রী যাবে গরুর গাড়িতে। এ সময় গরুর গাড়ি পাওয় দুস্কর। তাই মহিষের গাড়ি এবং গরুর গাড়ির আয়োজন করি। ছেলেও মেনে নিয়ে গরুর গাড়িতে বধু বরণ করে নিয়ে আসে।

নারায়নপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, এই বাহন গুলো দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। এই আয়োজনে গ্রামবাসিও আনন্দিত। সকলেই এই আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছে। বৃদ্ধ এক বরযাত্রী বলেন ৪০ বছর আগে এভাবেই এক প্রতিবেশির বিয়েতে বরযাত্রী হিসেবে গিয়েছিলেন। আর আজ যাচ্ছি। দীর্ঘদিন পর এমন আয়োজন সত্যিই আমি খুবই আনন্দিত। নারায়পুর গ্রামের আলম বলেন আমাদের নতুন প্রজন্ম জানতোই না যে গরুর গাড়ি এবং মহিষের গাড়িতে বিয়ের বরযাত্রী যাওয়া যায়। অনেকে মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানির কাছে গল্প শুনেছে কিন্তু বাস্তবে কখনও দেখেনি। 

 উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সভাপতি সেতারা বেগম বলেন, আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ক্রমেই হারিয়ে যেতে বসেছে। এই সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে সকলের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।