ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চৌদ্দগ্রামে প্রচন্ড গরমে স্কুল শিক্ষার্থী হচ্ছে অসুস্থ

চৌদ্দগ্রামে প্রচন্ড গরমে স্কুল শিক্ষার্থী হচ্ছে অসুস্থ

সারাদেশের ন্যায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে তীব্র তাপদাহে জনজীবন অতীষ্ঠ হয়ে পড়েছে। গরমের প্রভাবে উপজেলার প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর শিক্ষার্থীদের অবস্থা কাহিল। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা নাই। বিশেষ করে লোডশেডিংয়ের সময় অনেক শ্রেণিকক্ষের শিক্ষকরা বাধ্য হয়ে শ্রেণি কার্যক্রমে বিরতি দিচ্ছে।

প্রচন্ড গরমের কারণে ড্রেসকোড মেনে জুতা-মোজা ও ফুলহাতার জামা পরা, গরমে ক্লাস শুরুর আগে পিটিতে অংশগ্রহণে অনীহা বাড়ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। গরম আবহাওয়ার মধ্যে জাতীয় পর্যায়ের এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ক্রীড়া কার্যক্রমে অংশ নিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। অনুপস্থিতির কারণে জরিমানার ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী জ¦র, সর্দি, কাশি, হিটষ্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা নিয়েই শ্রেণি কার্যক্রমে উপস্থিত হচ্ছে। সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে উপস্থিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা পুর্বের তুলনায় কম।

অনেক অভিভাবক গরমের কারণে শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ রেখেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, তীব্র তাপদাহের প্রবাহ আরও কয়েকদিন থাকবে।বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষক এবং বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানান, আগামী দুইদিন পরই স্কুলগুলোতে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে।

তাই তীব্র গরমের কষ্ট উপেক্ষা করে ক্লাসে উপস্থিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া অনুপস্থিতির জন্য জরিমানার আতঙ্কও আছে। এতে শিক্ষার্থীদের অনেকেই সর্দি, জ্বর, কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়াও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনের তুলনায় পাখা নেই। ৫০-৬০জন শিক্ষার্থীর জন্য অন্তত ৬-৭টি পাখা দরকার। সেখানে অধিকাংশ বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাখা লাগানো আছে মাত্র ৩-৪টি।

বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জানান, সরকার নির্ধারিত নিয়ম-কানুন এবং একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী স্কুলগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হয়। তাই কেউ চাইলেই ইচ্ছামতো ছুটি বা নিয়ম-কানুন শিথিল করতে পারে না। এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে সরকারের কোনো নির্দেশনার খবর পাননি বলে জানান তারা। চৌদ্দগ্রাম পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের অভিভাবক মাসুদ আহমেদ বলেন, সারা দেশে তাপদাহ চলমান থাকায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শ্রেণি কার্যক্রম একটু শিথিল করা উচিত। পাশাপাশি পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক পাখা না থাকায় গরমে শ্রেণিকক্ষেই দুর্বল হয়ে পড়ছে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। স্কুল ছুটির পর ছাত্রছাত্রীরা বাড়িতে গিয়ে অনেকেই হাপিয়ে উঠে।

কয়েকজন অভিভাবক জানান, অনেক প্রতিষ্ঠানের চতুর্দিকে বাউন্ডারি দেয়াল থাকায় ঠিকমতো আলো-বাতাস প্রবশ করার জায়গা নেই। জুতা-মোজাসহ স্কুল ড্রেস পরে বিভিন্ন স্থানের বাসা থেকে যানবাহনে বা হেটে স্কুলে প্রবেশের আগেই ঘেমে অস্থির হয়ে যায় শিক্ষার্থীরা। স্কুলের ক্লাসগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের তুলনা ফ্যানের ব্যবস্থা থাকলে তা অপ্রতুল। ক্লাসরুমের ফ্যানের সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে ।

পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ের ক্রিড়া প্রতিযোগীতাগুলোও আপাতত বন্ধ রাখা উচিত বলেও জানান তারা। চৌদ্দগ্রাম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অভিভাবক জোলেখা বেগম মেয়েকে স্কুলে দিতে এসে সাংবাদিকদের বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেও বাচ্চাদের পিটি করানো হয়। এতে করে আমার বাচ্চা গরমের কারনে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তীব্র গরমের এই সময়ে আপাতত পিটি বন্ধ করার আহবান জানান তিনি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মীর হোসেন বলেন, সারাদেশে তীব্র তাপদাহ চলছে। উপজেলার প্রায় প্রত্যেকটি স্কুলের ক্লাস রুমে ফ্যানের ব্যবস্থা আছে। গরমের মধ্যে পিটি সমস্যা হলে পিটি বন্ধ রাখার বিষয়টি ভেবে দেখবো।

উপজেলা প্রাথমিক সহকারি শিক্ষা অফিসার (চলতি দায়িত্ব) প্রান্তিক সাহা বলেন, উপজেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল সাড়ে নয়টা থেকে সোয়া চারটা পর্যন্ত ক্লাস চলছে। গরমের কারনে সকল বিদ্যালয়ে নির্দেশ দেওয়া আছে বিদ্যালয়ের বারান্দা অথবা গাছতলা ছায়ার মধ্যে পিটি অনুষ্ঠিত হবে।

চলমান সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, খেলাধুলা আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জামাল হোসেন বলেন, সরকারি কারিকুলাম নির্দেশনার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, সামনে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা প্রতিটি ক্লাসরুমে অনেক ছাত্রী উপস্থিত রয়েছে, বিদ্যুৎ চলে গেলে সমস্যা হয়।

বাতিসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছালে আহমদ ভূঁইয়া বলেন, বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। তাপদাহ ও প্রচন্ড গরমে বিদ্যুৎ না থাকলে ক্লাসরুমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ব্যাপক কষ্ট হচ্ছে।

কুমিল্লা,মাধ্যমিক,বাতাস
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত