কিশোরগঞ্জ জেলার ১৪৭০ বর্গকিলোমিটার হাওরাঞ্চলের বুক চিরে বয়ে গেছে ছোট বড় ১৫টি নদী। হাওরের এই নদীগুলোর রূপ প্রকৃতি প্রেমিদের বিমোহিত করে সারা বছর জুড়ে। গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে নদীতে পানকৌড়িদের ডুবো সাঁতার আর ছোট বড় নৌকাগুলোর গন্তব্যে ছুটে চলা। এ যেন ভাটির মন্ত্রমুগ্ধ রূপ। বেলা শেষে সুবিশাল হাওরের মিঠাপানির নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে সুর্যাস্তের লাল আভা যেন প্রকৃতি প্রেমিদের মনে চৈত্রের খড়ায় এক পশলা বৃষ্টি।
এছাড়াও নদীর মাঝেই জেলেদের পরিত্যক্ত জালের খুঁটিতে বসে বক-পানকৌড়িদের রোদ পোহানো, নদীর পাড় ঘেঁষে বহু প্রজাতির পাখিদের উড়াউড়ি। দৃষ্টিনন্দন এমন দৃশ্যের দেখা মিলবে কিশোরগঞ্জের হাওরের নদীগুলোতে।
জেলার হাওরাঞ্চলকে জালের মতো জড়িয়ে রেখেছে ধনু, ঘোড়াউত্রা, কালনী, কুশিয়ারার মত ছোট বড় মিঠাপানির নদীগুলো। বর্ষায় হাওরের অথৈ জলে নদীগুলো তলিয়ে গেলেও শুকনো কালে নদী তার আপন রূপে দেখা দেয়।
নৌকা ছাড়া নদীর শোভা ভাববার উপায় নেই। হাওরের এসব নদী দিয়ে নৌকাগুলো ছুটে চলে অবিরাম, পণ্য ও যাত্রী নিয়ে কাছে ও দূরের গন্তব্যে। এমন চোখ জুড়ানো মন ভোলানো অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে প্রকৃতি প্রেমিরা ছুটে আসেন হাওরের নদীর কাছে।
হাওরের নদীর সৌন্দর্য্য দেখতে আসা জেলার কটিয়াদি উপজেলার মামুন খান বলেন, মাঝে-মধ্যেই সময় করে মনের শান্তির জন্য চলে আসি হাওরের এসব নদীর কাছে। বর্ষাকালে এ নদীগুলো হাওরের পানিতে ডুবে খুব উত্তাল থাকে।
তখন ভয়ংকর রকমের সুন্দর লাগে। শুকনো মৌসুমে হাওরের সবগুলো নদী থাকে শান্ত। দুই মৌসুমে দুই ধরনের রূপ বিলায় হাওরের নদী। জেলেদের মাছ ধরা, ছোট বড় নৌকাগুলোর গন্তব্যে ছুটে চলা, পাখিদের উড়াউড়ি আর কিচিরমিচির ডাকের শব্দ শুনে মন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। বেলা শেষে হাওরের নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের লাল-সোনালী আভা। এ যেন মন্ত্রমুগ্ধ করা রূপের এক ঝলক।
কিশোরগঞ্জের লোকসংস্কৃতি গবেষক জাহাঙ্গীর আলম জাহান বলেন, কিশোরগঞ্জের হাওরের মিঠাপানির নদীর মাছ এ অঞ্চলের প্রকৃতির দেয়া অঢেল সম্পদ।
নদীগুলোতে জেলেদের মাছ ধরার ছোট ছোট ভাসমান ডিঙি নৌকাগুলো দেখে মন ভরে যাবে যে কারোরই। বিস্তীর্ণ হাওরের নদীর পাড়ে দাড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখতে ছুটে আসেন অনেক পর্যটক।
লাল-সোনালী রঙের সূর্যাস্তের মায়াবী আভা নিঃসন্দেহে পরিমিত মনের খোরাক যেকোন প্রকৃতি প্রেমিকের। তিনি আরও জানান, ভাটীর এসব নদীর রূপ ও নদীকেন্দ্রিক জীবনধারা নিয়ে অনেক গান, ছড়া, কবিতা, গল্পও রয়েছে।