ফেনীর সোনাগাজীতে সোমবার দুপুরে হাজেরা খাতুন (২৬) ও তার শিশুপুত্র এমরান হোসেন ইয়ামিন (৫) এর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত হাজেরার শাশুড়ি ও মায়ের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। শাশুড়ির দাবি জমি কেনাকে কেন্দ্র করে স্বামীর সাথে পারিবারিক কলহের জেরে নিজের শিশুপত্রকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে নিজে পেটে ছুরি মেরে ও গলায় ফাঁস লাগিয়ে হাজেরা আত্মহত্যা করেছেন।
হাজেরার মায়ের দাবি জমি কেনাকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে স্বামী মোহাম্মদ সোহেল শিশুপুত্রকে শ্বাসরোধ করে এবং স্ত্রী হাজেরাকে পেটে ছুরি মেরে হত্যা করে নিজ ঘরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছেন।
অপর এক বছর বয়সী হাজেরার অসুস্থ শিশুপুত্র ইরাফান হোসেন আরাফাতকে মুমূর্ষ অবস্থায় ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে তাকেও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।ঘটনাটি ঘটেছে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের উত্তে চরডুব্বা গ্রামের শুক্কুর বলির বাড়িতে।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও নিহতদের পারিবারের সদস্যরা জানান, ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের ওলিপুর গ্রামের মৃত ছেরাজুল হকের কন্যা হাজেরা খাতুন মনির সঙ্গে ছয় বছর পূর্বে সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের উত্তর চরডুব্বা গ্রামের মৃত নূরনবীর ছেলে মোহাম্মদ সোহেলের বিয়ে হয়।
তাদের ঘরে দুটি পুত্র সন্তান জন্ম হয়। একজনের বয়স পাঁচ বছর ও অন্যজনের বয়স একবছর।সোহেল পেশায় একজন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক। গত কিছু দিনপূর্বে সোহেল এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে প্রতি শতক জমি এক লাখ টাকা মূল্যে মোট দশ শতক জমি দশ লাখ টাকায় কেনার জন্য বায়নাপত্র করেন। তার স্ত্রী হাজেরা জমি কেনায় রাজি ছিলেননা।
এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহ সৃষ্টি হয়। সোহেল শাশুড়ির কাছ থেকে জমি কেনার জন্য বিশ হাজার টাকা ধারও এনেছেন। হাজেরার মা জাহানারা বেগম দাবি করেন, জমি কেনার আরো টাকার জন্য তার কন্যাকে সোহেল মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে আসছে।
সোমবার হাজেরাকে পরিতল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যা করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে এবং তার শিশুপুত্রকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বিচানার ওপর রেখে সোহেল পালিয়ে যায়। এক বছর বয়সী শিশুপত্রকেও হত্যার চেষ্টা করেছিল সে। স্থানীয়রা মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
অপর দিকে মোহাম্মদ সোহেলের মা কমলা বেগম দাবি করেন, জমি কেনার বিরোধকে কেন্দ্র করে স্বামী-স্ত্রীর কলহের জেরে হাজেরা নিজের শিশুপত্রকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে নিজে পেটে ছুরি ঢুকিয়ে ও ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ খালেদ হোসেন দাইয়্যান মা-ছেলের লাশ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সিআইডি ও পিবিআইয়ের বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থলে আলামত সংগ্রহ করেছেন।দুটি লাশের ময়না তদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। নিহতদের পরিবারের পক্ষে মামলা করা হলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।