ঘরে ঘরে কান্নার রোল, এক সাথে এতো মৃত্যুর সংবাদ কখনো শুনেনি গ্রামবাসী

প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৩, ২০:১১ | অনলাইন সংস্করণ

  সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

এক সাথে এতো লোকের মৃত্যুর সংবাদ কখনোই শুনে গ্রামের লোকজন। ওপারে চলে গেছে জীবিকার সন্ধানে কাজে যাওয়া সবাই সেটা বুঝে ফেলেছেন গ্রামে থাকা স্বজনেরা।  

ইতিমধ্যে ঘরের পুরুষ সদস্যটি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে রওনা হয়েছেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত স্বজনের মরদেহ বুঝে নিতে। আর ঘরে থাকা মহিলারা স্বজনের শোকে কেঁদে ভারী করে তুলছেন আশপাশের পরিবেশ। 

শেষ বিদায় জানানোর জন্য ইতি মধ্যেই নেয়া হয়েছে প্রস্তুতি। বাঁশ কাটা কবর খোড়া শুরু করে দিয়েছেন গ্রামের লোকজন।  যার যার পারিবারিক কবরস্হানে খোড়া হয়েছে কবর। 

জানা যায়, কান্নার রোল ঘরে ঘরে, স্বজনদের চিৎকারে শোকে স্তব্দ পুরো গ্রাম, কারো পিতা হারানোর শোক, কেউ স্বামীর মুত্যুতে মূর্ছা যাচ্ছেন, নিহতরা সবাই জীবিকার তাগিদে বাড়ি ছেড়ে সিলেটে নিমার্ণ শ্রমিকের কাজ করতেন।

গতকাল বুধবার সকালে সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের অধিকাংশের বাড়ি সুনামগঞ্জের এই ভাটিপাড়া গ্রামে। ৮ জনই এখানকার বাসিন্দা বললেন স্থানীয়রা।

নিহতরা হলেন, সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার বাবনগাঁও গ্রামের মৃত ওয়াহাব মিয়ার ছেলে শাহিন মিয়া (৫০), একই উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের হারুণ মিয়ার ছেলে দুলাল মিয়া (২৬), তলেরবন্দ গ্রামের মৃত আমান উল্লাহর ছেলে আউলাদ তালুকদার (৫০), সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার আলীনগর গ্রামের মৃত শিশু মিয়ার ছেলে হারিস মিয়া (৫০), একই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে সৌরভ মিয়া (২৬), একই গ্রামের শাহজাহান মিয়ার ছেলে বাদশা মিয়া (১৯), মৃত সজিব আলীর ছেলে রশিদ মিয়া (৫০), মৃত মফিজ মিয়ার ছেলে সায়েদ নূর (৬০), সাগর আহমদ (১৮), উপজেলার মধুপুর গ্রামের মৃত সোনাই মিয়ার ছেলে সাধু মিয়া (৪০), গছিয়া গ্রামের মৃত বারিক উল্লাহর ছেলে সিজিল মিয়া (৩৫), কাইমা গ্রামের মৃত ছলিম উদ্দিনের ছেলে একলিম মিয়া (৫৫)।

এদিকে গ্রামের মানুষরা অপেক্ষা করছেন মরদেহের জন্য, উঠোনে উঠোনে রয়েছে মরদেহ রাখার জন্য  খাটিয়া, মরদেহ দাফনের জন্য বাশ কেটে প্রস্তুত করা হয়েছে, একসঙ্গে এতো মরদেহ কখনো দাফন করেননি গ্রামবাসী।স্থানীয় বাসিন্দা মুবিনা বেগম বলেন, পুরো গ্রামে শোকের মাতম চলছে। সবাই কাঁদছে।  

স্থানীয় বাসিন্দা জামাল মিয়া বলেন, গ্রামের মানুষ হততম্ভ হয়ে গেছে। সবাই কাঁদছে।  আমার ৬০ বছর বয়সে এমন ঘটনা দেখিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা নূর আলী বলেন, এই গ্রামের মানুষগুলো জীবনের তাগিদে গ্রাম ছেড়ে কাজের তাগিদে সিলেটে গিয়েছিল। কিন্তু আজকে তারা দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। এই গ্রামের অসহায় পরিবারের দিকে সরকারের নজর দেওয়া উচিৎ। 

দিরাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান মামুন বলেন, দুর্ঘটনায় যারা নিহত হয়েছে তাদের মরদেহ রাতে গ্রামে আসবে। তখন আমি সেখানে যাবো এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের আর্থিক সহায়তা করা হবে। 

ভাটিপাড়া, মুরাদপুর, আলীনগরসহ কয়েকটি এলাকায় স্বজন হারানোর আর্তনাদে ভাড়ি হয়ে উঠেছে পরিবেশ, পরিবারের একমাত্র উপার্জন কারি সদস্যের মৃত্যুতে অসহায় স্বজনরা।