ফেনীর সোনাগাজীতে জমি কেনার বিরোধকে কেন্দ্র করে মা-ছেলে খুনের ঘটনায় আহত এক বছর বয়সী ইরফান হোসেন আরাফাত নামে সেই শিশুটিও মারা গেছে। নৃশংস ঘটনার পাঁচদিন পর শনিবার (১০ জুন) সন্ধ্যায় চট্রগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মৃত্যুবরণ করেছে।
গত সোমবার (৫ জুন) সকালে স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের সাথে জমি বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের উত্তর চরডুব্বা গ্রামের শুক্কুর বলির বাড়িতে হাজেরা খাতুন (২৪) কে পেটে ছুরি মেরে, হাতের রগ কেটে হত্যা করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে এবং শিশুপুত্র এমরান হোসেন ইয়ামিন (৫) কে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। একই সাথে এক বছর বয়সী ইরফান হোসেন আরাফাতকেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করতে চেয়েছিল দুর্বৃত্তরা। ভাগ্যক্রমে সেই দিন বেঁচে গেলেও পাঁচদিন পর না ফেরার দেশে চলে গেলেন শিশু ইরফান। সেই দিন তাকে আহত অবস্থায় ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বুধবার তাকে চট্রগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ ও নিহতদের স্বজন জানায়, ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের ওলিপুর গ্রামের মৃত ছেরাজুল হকের কন্যা হাজেরা খাতুন মনির সঙ্গে আট বছর পূর্বে সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের উত্তর চরডুব্বা গ্রামের মৃত নূরনবীর ছেলে মোহাম্মদ সোহেলের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে দুটি পুত্র সন্তান জন্ম হয়। একজনের বয়স পাঁচ বছর ও অন্যজনের বয়স এক বছর। সোহেল পেশায় একজন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক। গত কিছুদিন পূর্বে সোহেল এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে প্রতি শতক জমি এক লাখ টাকা মূল্যে মোট দশ শতক জমি দশ লাখ টাকায় কেনার জন্য বায়নাপত্র করেন। নিজের পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া তিন শতক জমি তার দুই সহোদরের কাছে বিক্রি করে দেন। তার স্ত্রী হাজেরা জমি কেনায় রাজি ছিলেন না। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রী, দেবর, ভাসুর ও শাশুড়ির মধ্যে পারিবারিক কলহ সৃষ্টি হয়। সোহেল জমি কেনার জন্য শাশুড়ির কাছ থেকে দুই লাখ টাকা চেয়ে বিশ হাজার টাকা ধারও এনেছেন। জমি কেনাকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে মোহাম্মদ সোহেলসহ আসামিরা পরিকল্পিতভাবে এমরান হোসেন ইয়ামিনকে (৫) শ্বাসরোধ করে এবং হাজেরা খাতুন মনি (২৪) কে দুই হাতের রগ কেটে, পেটে ছুরি মেরে হত্যা করে নিজ ঘরে রশি দিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে পালিয়ে যায়। হাজেরার এক বছর বয়সী শিশুপুত্র ইরফান হোসেন আরাফাতকেও হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে আসামিরা।
সোমবার সাড়ে দশটা থেকে সাড়ে এগারটার মধ্যে আসামিরা এ নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এমন অভিযোগ এনে ৫ জুন সোমবার রাতেই ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন নিহত হাজেরা খাতুনের মা জাহানারা বেগম।
মামলার আসামিরা হলেন- চরডুব্বা গ্রামের নূরনবীর ছেলে নিহত হাজেরার স্বামী মো. সোহেল, তার ভাই মো. সাইফুল, দিদার, শাশুড়ি কমলা বেগম, জা নাজমা আক্তার ও নয়নসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন। রাতেই ফেনী ও বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- নিহত হাজেরার দেবর সাইফুল ইসলাম, ভাসুর দিদার, স্বামীর বন্ধু চরলামছি গ্রামের সৈয়দের রহমানের ছেলে নূরুল আফছার এবং স্বামীর ভগ্নিপতি ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের সাড়াশিয়া গ্রামের মৃত আবদুল ওহাবের ছেলে মো. হানিফ।
পুলিশ গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ড আবেদন করলে পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। আসমিরা রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ খালেদ হোসেন দাইয়্যান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।