ময়মনসিংহে ২০তলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে শ্রমিক নিহত, অনুমোদন নিয়ে ধুম্রজাল
প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৩, ১৬:২৯ | অনলাইন সংস্করণ
ময়মনসিংহ ব্যুরো
ময়মনসিংহ নগরীর সাহেব আলী সড়কের ওপর নির্মানাধীন প্রগতি টাওয়ারের ২০তলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে শ্রমিক নিহতের ঘটনায় নানা রহস্য দাঁনা বেঁধেছে। অভিযোগ উঠেছে- নির্মানাধীন ওই ভবনটির ২০ তলার অনুমোদন নেই। ফলে বিল্ডিং কোড না মেনে নির্মানাধীন এই ভবনটি নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।
রবিবার (১১ জুন) সকালে ওই ভবনের ছাদ থেকে পড়ে শিমুল মিয়া (৩৫) নামে এক নির্মাণ শ্রমিক নিহত হয়। সে জামালপুর সদর উপজেলার মধ্য বটতলা গ্রামের মো: রফিকুল ইসলামের ছেলে।
এই অবস্থায় ভবন মালিক সিন্ডিকেট ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে শ্রমিক নিহতের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে বলেও দাবি স্থানীয় সূত্রের।
অভিযোগ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ মানস বিশ্বাস বলেন, সিটি কর্পোরেশন ঘোষনার আগে ২০১৭ সালের মার্চ মাসের দিকে তৎকালীন পৌরসভা থেকে এই ভবনের অনুমোদন নিয়েছিল মালিক পক্ষ। তবে এ সংক্রান্ত নথি না দেখে আমি নিশ্চিত ভাবে কিছু বলতে পারছি না।
এ সময় কোন পৌরসভা ২০ তলা ভবনের অনুমোদন দিতে পারেনি কি-না বা নির্মানাধীণ এই ভবনে বিল্ডিং কোড মানা হয়েছে কি-না ? জানতে চাইলে এই নগর পরিকল্পনাবিদ আরও বলেন, সড়কের ওপরে নির্মানাধীন ভবনটিতে সঠিক ভাবে বিল্ডিং কোড বা বিধিমালা মানা হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে প্রগতি টাওয়ারের বর্তমান মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মো: মাহাবুবুর রহমান এই প্রতিবেদকের কাছে নিজের মালিকানা পরিচয় এড়িয়ে যান। বলেন, গত দুই বছর আগে আমি এই জমিটি বিক্রি করে দিয়েছি। শুনেছি ক্রেতা পক্ষ পৌরসভা থেকে ২০তলার অনুমোদন নিয়েছে। কিন্তু তারা কিভাবে এই অনুমোদন পেয়েছে, তা আমার জানা নেই।
এই অবস্থায় সচেতন মহলের প্রশ্ন- দুই বছর আগে জমিটি ক্রয় করা হলে বর্তমান মালিক পক্ষ পৌরসভা থেকে ২০তলার অনুমোদন পেল কিভাবে ?
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে ভবনের নিরাপত্তা কর্মী মো: শহীদুল্লাহ জানান, ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব), শিক্ষকসহ নানা শ্রেণী-পেশার মোট ১২জন মালিক মিলে ৩৩ শতাংশ ভূমির ওপর এই ভবন নির্মাণ করছেন। তারাই এবিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন।
তবে বর্তমানে মালিক সিন্ডিকেট পক্ষ ফ্ল্যাট বিক্রি করার জন্য এই ভবনের মালিকানা ১৭০টি ভাগে বন্টন করেছেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।
এবিষয়ে ময়মনসিংহ কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ বলেন, নিহত শিমুল মিয়া নির্মাণাধীন ২০ তলা ভবনের ছাদে উঠে রডের কাজ করছিল। এ সময় হঠাৎ সে নিচে পড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
ওসি আরও বলেন, ভবন নীতিমালা বা বিল্ডিং কোড বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন। এই বিষয়টি আমার নয়।
তবে এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় এখনো অভিযোগ দায়ের হয়নি। শুনেছি মালিক পক্ষের সাথে সাথে নিহতের পরিবারের আপোষ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় নিহতের মরদেহ বিনা ময়নাতদন্তে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে বিধায় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিহতের ময়মনাতদন্ত করা হয়েছে।