চাঁদপুর জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত
প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৩, ১৭:৪৬ | অনলাইন সংস্করণ
চাঁদপুর, প্রতিনিধি
চাঁদপুর জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।রোববার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান। সভার শুরুতে বিগত মাসের কার্যবিবরণী এবং আইনশৃঙ্খলার চিত্র তুলে ধরেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এএসএম মোসা। এরপর আলোচ্যসূচি অনুযায়ী বক্তব্য রাখেন আলোচকগণ। ৎ
সভায় আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে সড়ক নিরাপত্তা এবং কোরবানির পশুর হাটের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার মধ্যে হাট পরিচালনার বিষয়টি গুরুত্ব পায়। এছাড়া ঈদ এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উল্টো রথযাত্রা কাছাকাছি সময়ে হয়ে যাওয়ায় সে সময়ে আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে বলে সভায় আলোচনা হয়।
বক্তারা বলেন, নানা ইস্যুতে কুচক্রী মহল দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। কোথাও কোথাও নাশকতাও করতে চায় তারা। এ দিকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আমরা সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করবো। নির্বাচন সামনে রেখে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ধর্মীয় উস্কানিমূলক নানা প্রচারণা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করবে। সেদিকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সার্বিক বিষয়ে জেলা প্রশাসক তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমি যেমন মুসলমান আমার কাছে আমার ধর্ম শ্রেষ্ঠ।
আবার যিনি সনাতন ধর্মাবলম্বী তাঁর কাছে তাঁর ধর্ম শ্রেষ্ঠ। প্রত্যেকের কাছে নিজ নিজ ধর্ম শ্রেষ্ঠ। অতএব কারো ধর্মীয় অনুভ‚তিতে আঘাত করা যাবে না, ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে ঘিরে উস্কানিমূলক কোনো প্রচারণা করা যাবে না। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রথযাত্রা (২০ জুন)।
সেটা ওনারা স্বাভাবিকভাবেই ধর্মীয় আমেজে বড় পরিসরে করবে। কিন্তু উল্টো রথযাত্রা এক সপ্তাহ পর ২৭ জুন হওয়ায় ঈদুল আজহার আগের দিন পড়ে যেতে পারে। তখন যেহেতু রাস্তায় কোরবানির পশু হাটে আনা-নেয়ার বিষয়টি থাকবে, এই আয়োজনে সড়ক ব্যস্ত থাকবে, তাই উল্টো রথযাত্রা সংক্ষিপ্ত পরিসরে করা যায় কিনা সে বিষয়ে হিন্দু ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এ প্রসঙ্গে সভায় উপস্থিত জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এবং চেম্বার নেতা তমাল কুমার ঘোষ জানান, গত বছরও ঈদ এবং উল্টো রথযাত্রা একদিন আগ পর পড়েছিল। তখনও আমরা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে আমাদের উল্টো রথযাত্রা সংক্ষিপ্ত পরিসরে করে নিয়েছি। এবারো আমরা সেভাবেই করবো। আশাকরি সমস্যা হবে না। এ নিয়ে হিন্দু নেতৃবৃন্দের সাথে আলাদা বসবেন বলে জেলা প্রশাসক জানান।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, কোরবানির পশুর হাটের জন্য যারা হাট ইজারা নিবেন তারা অবশ্যই নির্দিষ্ট স্থানেই হাটের পরিধি রাখতে হবে। কোনোভাবেই রাস্তার উপর পশু রাখা যাবে না। যান এবং মানুষ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। এ বিষয়টি কঠোরভাবে দেখতে তিনি ইউএনওদের নির্দেশনা দেন। আর যেখানে পশুর হাটের জায়গা নেই সেখানে যেনো হাট ইজারা না দেয়া হয় সে বিষয়টিও তিনি সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার উভয়ই মতলব মুন্সিরহাট বাজারের বিষয়টি উল্লেখ করেন। তাঁরা বলেন, মুন্সিরহাট বাজারটিই বলতে গেলে রাস্তার উপরে। সে জায়গায় কোনো অবস্থাতেই সেখানে কোরবানির পশুর হাটের জন্য ইজারা দেয়া যায় না যদি না তারা আলাদা জায়গায় হাট না বসায়।
সভায় সড়ক দুর্ঘটনা, নারী নির্যাতন ও ইভটিজিং, গ্রাম আদালত বিষয়েও আলোচনা হয়। ঈদের সময় যেহেতু মানুষ শহর থেকে গ্রামে আসার একটা চাপ থাকে। সঙ্গত কারণে এ সময় সড়কে মানুষ এবং যানবাহনের প্রচুর চাপ থাকে। আর এসময়ে দুর্ঘটনা বেশি ঘটার আশঙ্কা থাকে। বেশি ট্রিপ নেয়ার জন্যে গাড়িগুলো প্রতিযোগিতা দিয়ে বেপরোয়াভাবে চালানোয় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এদিকে সংশ্লিষ্টদের নজর দেয়ার জন্য সভায় গুরুত্ব দেয়া হয়।
সভায় আলোচনা করেন পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বিপিএম (বার), জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দীন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আসম মাহবুব-উল আলম লিপন, এনএসআই'র উপ-পরিচালক শেখ মোঃ আরমান, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ ও চাঁদপুর পিডিবির সহকারী প্রকৌশলী শাহরিয়ার আলম। সভায় বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।