অটোরিকশা চালিয়ে মায়ের জন্য ভোট চাওয়া সেই সন্তানের মা বিপুল ভোটে বিজয়ী

প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৩, ২০:০৯ | অনলাইন সংস্করণ

  বরিশাল ব্যুরো

বরিশাল নগরীর বগুড়া রোড এলাকার জনপ্রিয় তরুণ ব্যবসায়ী আলহাজ্ব রাজু আহমেদ। যিনি নগরীর মুন্সীগ্রেজ এলাকায়  আলবারাকা মোটরসাইকেল শো-রুমের মালিক। বরিশাল নগরীতে নিজের বাড়ি-গাড়ি থাকলেও নিজে নির্বাচনে প্রার্থী হননি বরং মায়ের প্রতি পুত্রের অকৃত্রিম ভালবাসা স্বরুপ এবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি মাকে সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর প্রাথী করেছিলেন।

আর মাকে বিজয়ী করতে প্রতিদিনই অটো চালিয়ে এবং মাইকিং করে মায়ের জন্য ভোট প্রার্থনা করেছেন। তবে ৫ বছর আগে তার মা বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা ৬ নম্বর আসনে (১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ড) কাউন্সিলর ছিলেন।

এবারের নির্বাচনে মাকে বিজয়ী করার জন্য সব চেষ্টা-ই করছেন তিনি। তাছাড়া যে সকল পত্রিকায় তার মায়ের সামাজিক কাজের খবর ও ছবি ছাপা হয়েছে, সেসব পত্রিকা বাড়ি বাড়ি গিয়ে একজন হকারের মতোই বিলি করেছেন।

তিনটি ওয়ার্ডে রাস্তায় রাস্তায় নিজ হাতে পোস্টার ঝুলিয়েছেন, লিফলেট বিতরণ করেছেন। তিনি এমনভাবে কাজ করেছেন যা নগরবাসীর দৃষ্টি কেড়েছে। গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মতো তিনিও তার মায়ের মুখে বিজয়ের হাসি দেখতে রাত দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। অবশেষে সেই রাজু আহমেদের মা মজিদা বোরহান বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন।

নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের মোট সাতটি ভোট কেন্দ্রে মজিদা বোরহান জিপ গাড়ি প্রতীকে পেয়েছেন তিন হাজার ৩২৫ ভোট।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বেহালা প্রতীকের হোসনে আরা বেগম পেয়েছেন এক হাজার ৫৯৫ ভোট। তৃতীয় হয়েছেন এই সংরক্ষিত আসনের বর্তমান কাউন্সিলর বই প্রতীকের গায়েত্রী সরকার পাখি, তিনি পেয়েছেন এক হাজার ৪৪০ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বি দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রার্থীর ফলাফল যোগ করলেও বিজয়ী প্রার্থীর সমান হয় না। মজিদা বোরহানের এমন বিজয়ে দারুণ খুশি এলাকার মানুষ। তারা মনে করেন, ভালো মানুষ হিসেবে দলমত নির্বিশেষে সবাই তাকে ভোট দেয়ায় বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন তিনি।

রাজু আহমেদের মা মজিদা বোরহান বরিশাল সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত আসনের সাবেক সফল কাউন্সিলর। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোট কারচুপির মাধ্যমে তাকে হারানো হয়েছে। বিষয়টি তাকে ভীষণভাবে ব্যথিত করে।

মায়ের সেই মনোকষ্ট দূর করতে এবার তার ছেলে-মেয়েরা রাত-দিন দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চেয়েছেন। করোনাকালীন সময়ে দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা স্মরণ করে ভোটাররা মানবিক মানুষ মজিদা বোরহানকে ভোট দিয়েছেন।

এমন সাফল্যে খুশি মজিদা বোরহানের সন্তানেরাও। তিন সন্তান রাজু আহমেদ, সাইফুল ইসলাম সুজন ও আখি ইমরান বলেন, মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আমরা মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি, দিন-রাত পরিশ্রম করেছি। বিজয়ের ফলে আমাদের সব কষ্ট আনন্দে পরিণত হয়েছে। আমরা এই এলাকার মানুষদের কাছে কৃতজ্ঞ ও চিরঋণী। সুখে-দুখে তাদের পাশে থেকে এই ঋণ শোধ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করব।