মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন, ড্রেজার মালিককে ৩ লাথ টাকা জরিমানা
প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৩, ২০:২৮ | অনলাইন সংস্করণ
রায়পুরা (নরসিংদী) প্রতিনিধি
দিনে আশপাশে কেউ থাকেন না, যেন সুনসান নিরবতা। কিন্তু দিনের আলো ফুরিয়ে গেলেই শুরু হয় জোর প্রস্তুতি, আর রাতের অন্ধকার নামতেই শুরু হয় বালু (লোকাল) উত্তোলনের বিশাল কর্মযজ্ঞ। জনগন ও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এভাবেই রায়পুরা উপজেলার সাহের খোলা ও আব্দুল্লাচর এলাকায় মেঘনা নদীতে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলনের এই মহাউৎসব। এতে আশেপাশের গ্রামগুলো নদীত ভাঙনে বিলিনের পথে। শত শত বিঘা ফসলি জমিও হুমকির মুখে।
উপজেলা সদর রায়পুরা, শ্রীনগর ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা সীমানার খুব কাছাকাছি এই বালু উত্তোলনের পয়েন্ট। আর এই বালু উত্তোলন কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মো. মনির হোসেনসহ ১০/১২জন।
সম্প্রতি ১৩জুন (মঙ্গলবার) বিকালে উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি প্রতিবাদ সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আফজাল হোসাইন কয়েক হাজার নেতা-কর্মীদের সামনে এই বালু উত্তোলনের কথা উল্লেখ করেন।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনে অভিযোগে শুক্রবার (১৬জুন) বিকেলে মেঘনা নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ড্রেজার মালিক মনির হোসেনকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ২ মাসের সশ্রম কারদন্ড প্রদান করেছেন ভ্রাম্যামান আদালত। ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম এ রায় প্রদান করেন।
জানা গেছে, প্রশাসনের অনুমোদন না থাকলেও উপরের মহলকে ম্যানেজ করে এই কর্মযজ্ঞ চলছে। তারা অত্যন্ত প্রভাশালী হওয়ায় নদীপাড়ারের বাসিন্দা ও কৃষকরা ভয়ে মুখ খুলছেন না। দিনের বেলায় সেখানে কেউ থাকেন না, সন্ধ্যার পরপরই সাহেরখোলা এলাকায় চলে প্রস্তুতি।
বিভিন্ন জায়গা থেকে ছোট-বড় ৩০-৪০টি বডি এনে সারিবদ্ধ করে রাখা হয়। এশার নামাজের পরপরই শুরু হয় বালু উত্তোলন। আশপাশের কঠোর নিরাপত্তার বলয়ে এই বডিগুলো নির্ধারিত স্থানে বালু পৌছে দেয়।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষকরা জানান, ‘দিনের বেলায় বোঝার উপায় নেই, এখানে বালু উত্তোলন হয় কিন্তু রাতে তারা এই কাজ করে। আমরা কিছু বলতে পারি না। অথচ যেখানে থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তার সঙ্গেই আমাদের কৃষি জমি-জমা। সেখানে আমরা চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করি। আশে পাশের এলাকায় জিওব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করলেও তাদের এইভাবে বালু উত্তোলনের ফলে সেটি ভেঙে যাচ্ছে, তাদের ভয়ে মুখও খুলতে পারিনা।
ঘটনার সততা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) শফিকুল ইসলাম জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযান চালিয়ে উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের আব্দুল্লাপুর এলাকায় বালু উত্তোলনের ড্রেজার দেখতে পায়। সেখানে গিয়ে ড্রেজার পাওয়া যায়।
যেহেতু এখানে বালুর মহাল নেই তাহলে ড্রেজারগুলো এখানে কি কারনে রাখা। এখানে বালু মহলের অনুমোদন না থাকায় সেগুলোকে জব্দ করে পান্থশালা নিয়ে আসা হয়। পরে ড্রেজার মালিক মনির হোসেনকে তিন লক্ষ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ২মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। পরে তিনলক্ষ টাকা মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায় ড্রেজার মালিক।