চাহিদার চেয়ে ৪১ হাজারেরও বেশি কোরবানির পশু নিয়ে ব্যস্ত ঈশ্বরদীর খামারিরা 

প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৩, ১৫:৫৫ | অনলাইন সংস্করণ

  ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি

চাহিদার চেয়ে প্রায়  ৪১হাজারের  বেশি কোরবানির পশু মোটাতাজাকরণ করে  বাজার ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ঈশ্বরদীর খামারিরা। খামারিরা বলছেন, গো-খাদ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে এবার খরচও হচ্ছে বেশি। 

খামারিরা জানান, এ বছর পশু খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রতিদিন গরুপ্রতি খরচ হয় ১৫০০-১৬০০ টাকা।

জিনারুল ইসলামের মতো  উপজেলায় কোরবানির পশু পালনে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। আগামী সপ্তাহে পুরোদমে শুরু হবে কোরবানির পশু কেনাবেচা। তাই বাজার ধরতে গরুর যত্নে ব্যস্ত তারা। প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক খাবার ব্যবহার করে পশু মোটাতাজা করছেন খামারিরা।ইতিমধ্যেই এ পশু বিক্রির শুরু হচ্ছে সংশ্লিষ্ট হাট-বাজারে। তবে দাম চড়ায় এখন তেমন কেনাবেচা হচ্ছেনা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এবার ঈশ্বরদী  উপজেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭২ হাজার ২০৩টি কোরবানির  পশু। এরমধ্যে ষাড় গরু ১৮হাজার ৫০৬, বলদ গরু ৪ হাজার ৮৩৭,গাভী গরু  ১হাজার ৮৭১, মহিষ ৯৬৯, ছাগল ৩৮হাজার  ৫০০ ও  ভেড়া ৭হাজার ৫২০  রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এসব পশুকে ঘাস, খড়, বিভিন্ন প্রকারের ভুসি, ডালের গুঁড়া, খৈলসহ দেশীয় পদ্ধতিতে ষাঁড় মোটাতাজা করা হচ্ছে প্রায় ৬মাস থেকে ১বছর ধরে। তবে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম ঈশ্বরদীর অরোনকোলা পশুরহাটের চারপাশে খামারের সংখ্যা বেশি।  এসব খামারে কোরবানির গরু পরিচর্যা ও মোটাতাজা করছে কৃষকেরা।  উপজেলার গ্রামঞ্চলে ছোট খাট খামারে পরিচর্যা ও মোটাতাজা করছে নারী পুরুষ।

খামারে রক্ষিত ষাঁড় গরুগুলোকে পরিমিত খাবার, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি পরিচর্যার মাধ্যমে গরু স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠছে। এছাড়া অধিক লাভের আশায় পশুর লালন পালনে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার  খামারি ও প্রান্তিক কৃষকেরা। উপজেলার চাহিদার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানের চাহিদা পুরণ করে এখানকার উদ্বৃত্ত গবাদি পশু। বাড়তি লাভের আশায় খামারিদের পাশাপাশি বাড়িতে পশুপালন করছেন কৃষকরা।

এ অঞ্চলে গো-খাদ্যের চড়া দামে ছোটখাট খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এজন্য তারা ভারত থেকে অবৈধভাবে গরু আমদানি বন্ধের দাবি জানান। লাভে গরু বিক্রি করতে না পারলে খামারিদের লোকসান গুনতে হবে।

খামারি ও কৃষকরা জানিয়েছেন, কেউ বাড়িতে আবার কেউ খামারে এসব পশু মোটাতাজা করছেন। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা সবুজ ঘাস খাইয়ে বড় করা হচ্ছে এসব পশু। খড়ের পাশাপাশি খৈল, গমের ভুসি, ভুট্টার গুঁড়া, ধানের কুঁড়া, খড় ও বুটের খোসা খাওয়ান অনেকে।

কোরবানিতে বিক্রির জন্য ৩৫টি ষাঁড় প্রস্তুত করেছেন পৌরসভার অরনখোলা গরু হাটের পাশে মুনতাহার ডেইরি ফামের  খামারি মো: বাচ্চু প্রমানিক। তার খামারে এক লাখ ৩০হাজার থেকে চার লাখ টাকা দামের পশু আছে।


তবে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি কোরবানির পশুর দাম বৃদ্ধির আশা  করছেন এই খামারি ।
বাচ্চু প্রমানিক বলেন, ‘গো-খাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে। এসব পশুপালনে খরচ হয়েছে অনেক বেশি। তাই সঠিক দাম পাবো কি না তা নিয়ে চিন্তায় আছি।’

একই এলাকার মেসাস মিথিলা কৃষি খামারের মালিক হাবিবুর রহমান  বলেন, ‘গরুকে প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা ও সুস্থ রাখতে খড়, ভাতের মাড়, তাজা ঘাস, খৈল, গম, ছোলা, ভুসিসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। এ নিয়মে গরু মোটাতাজা করা হলে গরুর মাংস খেয়ে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না। আবার প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করা গরুর চাহিদা থাকে বেশি। দামও পাওয়া যায় ভালো।’

স্থানীয় খামারিরা বলেন, কোরবানির ঈদে তারা এসব গবাদিপশু বিক্রির মাধ্যমে বাড়তি আয় করবে।  নিজ বাড়ি ও খামারে বছর জুড়ে গবাদি পশুগুলো পালনের মাধ্যমে মাটাতাজা করে থাকে
ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ  কর্মকর্তা ডা. নাজমুল হোসাইন জানান, কুরবানি ঈদ উপলক্ষে পুরো উপজেলা তে আমাদের দুইটা ভেটেরিনারি টিম কাজ করছে। যেকোন পশু অসুস্থ্য হয়ে গেলে জরুরি সেবা দিতে আমাদের টিম প্রস্তুত রয়েছে। অরণকোলা পশুর হাটে গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবা দিতে মেডিকেল টিম তৈরী রয়েছে। সন্দেহজনক গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

উপজেলায় ছোট বড় খামারি বিভিন্ন প্রজাতির গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা মোটাতাজা করা হচ্ছে। এতে প্রায়  ৭২ হাজার ২০৩ টি গবাদিপশু মোটাতাজা করা হয়েছে। এ উপজেলায় কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা ৪১হাজার ২৩০টি।  এ চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত ৩০ হাজার  ৯৭৩ টি  পশু দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাবে ঈদের আগেই। এসব পশু মোটাতাজাকরণে খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক খাবার যাতে ব্যবহার না করে এজন্য প্রচারণা চালানো হয়েছে। খামারিদের গো-খাদ্যের চাহিদা মেটাতে উন্নতমানের ঘাসের আবাদ করতে হবে।

এতে গো-খাদ্যের খরচ বেশ কমে যাবে। যেসব খামারি শুধু ভুসি, খৈল, খড়ের মতো গো-খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল তাদের গরু পালন করে এবার লাভবানের সম্ভাবনা নেই। কারণ গো- খাদ্যার সংকট ও মূল্য বৃদ্ধি ঘটছে।