ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তিস্তার পানি বৃদ্ধি 

৪৪টি স্লুইচগেট খুলে দেয়ায় বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত

৪৪টি স্লুইচগেট খুলে দেয়ায় বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আর কয়েকদিন ধরে অব্যাহত বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। তিস্তার পানি বৃদ্ধির সাথে তিস্তা বেষ্টিত নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে। তবে সে পানিতে নিম্নাঞ্চলে বসবাসরতরা ততটা বেকায়দায় না পড়লেও সোমবার সকালে তিস্তার পানি আরো বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে কর্তৃপক্ষ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি স্লুইচগেট খুলে দিয়েছে।

এদিকে, নিম্নাঞ্চলসহ চরের বাড়ি-ঘরে পানি উঠেছে। এছাড়া পানিতে তলিয়ে গেছে বাদাম,পাট, ধান, মরিচসহ মৌসুমী ফসলের ক্ষেত। কিছু কিছু এলাকায় পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। রংপুরের কাউনিয়ার তিস্তার তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে বন্যা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ডালিয়া পয়েন্টে সোমবার সকাল ৬টায় বিপদসীমার ৫ সে. মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও তা সকাল ৯টায় কমে বিপদসীমার ৫ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

অপরদিকে, চরের বাসিন্দারা জানান, তিস্তার পানি শুক্রবার বিকাল থেকে বাড়তে শুরু করে। এতে করে বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকতে থাকলে কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। অনেকে নৌকায় করে চরের ফসল নিয়ে আসছেন উঁচু স্থানে।

লক্ষীটারী ইউনিয়নের চর পশ্চিম ইচলির ৭ বছরের সৌকত জানান, বাড়িতে রাতে পানি উঠায় নৌকায় রান্না করার জিনিষপত্র নিয়ে রাস্তায় যাচ্ছি।

সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল মোন্নাফ বলেন, পানি বৃদ্ধিতে বাঘেরহাট আশ্রয়নসহ শংকরদহ, গোটা ইচলির প্রায় বাড়িতে পানি উঠেছে। অনেক ফসল তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধিতে কোলকোন্দের বিনবিনাচর, চিলাখালচর, মটুকপুরচর, নোহালীর চর, মিনার বাজার, গজঘন্টার ছালাপাকচর, গাওছোয়ার বাজার, মর্নেয়ার আলমার বাজার, নরশিং, তালপট্টি, আলাল চরসহ বিভিন্ন চর ও নিম্নাঞ্চল এলাকায় বসবাসরত বাড়িতে পানি উঠেছে। এসকল মানুষ গবাদি পশু নিয়ে যেমন সমস্যায় পড়েছেন তেমনি সাময়িক খাবার রান্না নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন।

লক্ষীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, তার ইউনিয়নের ২ হাজারেরও বেশী বাড়িতে পানি উঠেছে।

উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ওয়ার্ড সদস্য মশিউর রহমান জানান, সকাল থেকে যেভাবে উজানে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, এতে করে নদীর চরাঞ্চল গ্রামগুলোতে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চর গনাই গ্রামের বাসিন্দা আফতার আলী বলেন, ভোর থাকি নদিত পানি বারবের নাগছে। ভয়ত আছি পানি কনবা সময় বাড়ীর উঠানে উঠে। ঈদের আগত বন্যা হলে খুব বিপদে পড়ি যামো।

নদীর তীরবর্তী গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা খনন না হওয়ায় পলি জমে নদীর মাঝস্থল উঁচু হয়ে গেছে। ফলে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে বন্যার পানিতে আবাদি জমিগুলো তলিয়ে গিয়ে বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতের ক্ষয়ক্ষতি হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ই্উএনও) মহিদুল হক বলেন, বন্যার এখন পর্যন্ত আভাস পাওয়া যায়নি। তবে বন্যায় যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সে ব্যাপারে সরকারীভাবে সকল ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেয়া আছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার রাত থেকে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। রোববার রাত পর্যন্ত পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও সোমবার সকালে পানি বিপদসীমার ৫ সে. মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে পানি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ডালিয়া ব্যারেজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো: তহিদুল ইসলাম জানান, সোমবার বিকেল ৩ টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ডেঞ্জার পয়েন্টের শুন্য দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ডেঞ্জার পয়েন্ট ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। সকাল ৯ টায় ডালিয়া পয়েন্টে শুন্য দশমিক ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। একই সময় কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ডেঞ্জার পয়েন্টের শুন্য দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে বিকেল ৩ টায় পানি ডেঞ্জার পয়েন্টের শুন্য দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ডেঞ্জার পয়েন্ট ২৮ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। ভারতের গজলডোবার দোমহনী পয়েন্টে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তার ডালিয়া ব্যারেজ এবং কাউনিয়া পয়েন্টে পানি হু হু করে বাড়ছে। ভারি বৃষ্টিপাত ও উজানে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার ফলে তিন্তা নদীর পানি আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

তিনি বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নদীর পানির প্রবল স্রোতের কারণে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। ফলে ব্যারেজের ভাটির অঞ্চল কাউনিয়া, পীরগাছা, গঙ্গাচড়া, লালমনিরহাটের সদর, কালিগঞ্জ, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে সৃষ্ট বন্যা দেখা দিতে পারে। তবে সেটি সাময়িক, কারণ উজান থেকে নেমে আসা পানি ভাটি হয়ে দ্রুত যমুনায় নেমে যায়।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, ডালিয়া পয়েন্টে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। ফলে ভাটিতে নদীর পানি বেড়ে চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে প্লাবনের আশঙ্কা রয়েছে।

তিস্তা,পানি,বৃদ্ধি
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত