নারায়ণগঞ্জে নারীকে গলাকেটে হত্যা মামলায় ২ জনের যাবজ্জীবন
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৩, ২০:৩০ | অনলাইন সংস্করণ
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে নূর বানু (৬০) নামে এক নারীকে নৃশংসভাবে করাত দিয়ে গলা কেটে হত্যা মামলায় দুই জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে ২০ হাজার জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ জুন) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন আসামীদের উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন।
দন্ডপ্রাপ্তরা হলো, রূপগঞ্জের গন্ধর্বপুর এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে কামরুজ্জামান ওরফে কামু (৪০) ও একই এলাকার মৃত নূরু মিয়ার ছেরে রুবেল হোসেন (৩৪)।
মামলা সূত্রে জানা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো পৌরসভার গন্ধর্বপুর এলাকার নূর বানুর প্রায় দুই শতাংশ জমি দখল করে রাখে প্রতিবেশী দুই ভাই জাহাঙ্গীর ও রুবেল। এ নিয়ে গ্রামে বেশ কয়েকবার বিচার সালিশ হলেও অভিযুক্তরা তা না মানায় এর কোন সমাধান হয়নি। পরে ২০১৯ সালের ৩০ জুন নূর বানুকে করাত দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে অভিযুক্ত দুই ভাই ও তাদের সহযোগী কামরুজ্জামান ওরফে কামু। নিহতের লাশের পাশ থেকে একটি রক্তমাখা করাত ও একটি রক্তমাখা শাবল উদ্ধার করা হয়।
ওই ঘটনায় নিহতের ছেলে ইলিয়াস মিয়া বাদী হয়ে দুই সহোদরসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাতনামা পাঁচ-ছয়জনকে আসামী করে রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। পিবিআই এর পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) নাছির উদ্দিন সরকার মামলাটির তদন্তভার পেয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম এর দিক নির্দেশনায় তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় প্রায় এক বছর পরে হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হন।
ঘাতক কামরুজ্জামান ওরফে কামুকে ২০২০ সালের ২৩ জুলাই সোনারগাঁ থানাধীন কাঁচপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পিবিআই। ২৫ জুলাই আসামী কামরুজ্জামান নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ কাউছার আলম এর আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জানায় কামরুজ্জামানসহ ২ সহোদর জাহাঙ্গীর ও রুবেল হত্যাকান্ডে জড়িত।
২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই এর পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) নাছির উদ্দিন সরকার আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। মামলার তদন্তকালে হত্যাকান্ডে জড়িত জাহাঙ্গীর আলম মৃত্যুবরণ করায় এবং অপর আসামী তৌসিফ আহমেদের কোন সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাদের নাম চার্জশীট থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। চার্জশীটে কামরুজ্জামান ওরফে কামু ও মোঃ রুবেল হোসেনকে অভিযুক্ত করা হয়।
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মো. মনিরুজ্জামান বুলবুল বলেন, ১৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আসামীদের উপস্থিতিতে আদালত এই রায় ঘোষণা করেন। আসামীদের মধ্যে একজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধী দিয়েছেন।
কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বলেন, একটি হত্যা মামলায় দুইজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার সময়ে আসামীরা আদালতে উপস্থিত ছিলো।
মামলার বাদী নিহতের ছেলে ইলিয়াস মিয়া বলেন, আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট না। আমার মাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে আসামীরা স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তারপরেও তাদের ফাঁসি দেয়া হয়নি। আমরা উচ্চ আদালতে যাবো।