কক্সবাজারে কউকের অভিযানে ফের ৯ কটেজ উচ্ছেদ নিয়ে 'রহস্য'

প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৩, ১৩:৫৩ | অনলাইন সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার

ঘুরে ফিরে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সৈকত বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের আওতাধীন কয়েকটি স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়ায় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)'র উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে 'রহস্য' সৃষ্টি হয়েছে।

সোমবার (১৯ জুন) চালানো অভিযানে ৯ টি আবাসিক কটেজ গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কউকের দাবি, রহস্যের কিছু নেই। কউকের ধারাবাহিক কাজের  অংশ হিসাবে এই অভিযান।

উচ্ছেদকৃক কটেজগুলো হলো- এমএস কটেজ, জিএম কটেজ, রমজান কটেজ, সি ফ্রন্ট কটেজ, সাইবা কটেজ এবং নামবিহীন স্থাপনা। এর মধ্যে ৩টি কটেজ ৩ বার গুড়িয়ে দেয় কউক। তবে বার বার কটেজগুলো গজানো, পুনরায় গুড়িয়ে দেয়ার পেছনের কারিগর সৈকত বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দীন চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ বলে কয়েকজন কটেজ মালিকের দাবি। তাদের চাঁদা আদায়ে নিয়োজিত অবৈধ স্থাপনা তৈরির হেড আবুল মিস্ত্রি। 

কউক বলছে, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অব্যাহত থাকবে। তাদের ম্যানেজ করবে বলে কেউ টাকা নিয়ে থাকলে আমাদের করার কিছু নেই। শুধুমাত্র সৈকতের প্লট রেজিষ্ট্রেশন ও উচ্ছেদ বন্ধের নাম করে সভাপতি ও সম্পাদক মিলে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে অনেককে নি:স্ব করেছে বলে দাবি কতিপয় প্লট ও কটেজ মালিকের। 

সূত্র মতে, কক্সবাজার কলাতলির সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের বিপরীতে গড়ে উঠা শতাধিক আবাসিক কটেজ, রেস্তোরাঁসহ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মালিকদের মাঝে উচ্ছেদ আতংক বিরাজ করছে। তিন দফা কউকের উচ্ছেদ এমনিতে চরম ক্ষয়ক্ষতির শিকার তারা। এর মধ্যেই প্রথম দফা ভাংগার পর কউককে ম্যানেজ করার জন্য সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক ৩ লাখ টাকা করে চাঁদা নেয় কটেজ মালিকদের কাছ থেকে এমন অভিযোগও রয়েছে । টাকা তোলার দায়িত্ব পায় তাদের নিয়োজিত তল্পিবাহক আবুল মিস্ত্রি। সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক মিলে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ১ বছরে কটেজ মালিকদের কাছ থেকে আদায় করেছে, যার সব দায়িত্ব পালন করে আবুল মিস্ত্রি এমনটাই দাবি কটেজ মালিকদের। আজ তাদের সিন্ডিকেটের কারণে চরম অসহায় হয়ে বিপুল টাকার ক্ষতি গুনতে হচ্ছে। 

৩ বার উচ্ছেদে ক্ষতির শিকার জিএম কটেজের মালিক প্রথম দফা উচ্ছেদের সময় ক্ষতি সহ্য করতে না পেরে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায়। পরে এতিম পুত্ররা ধার দেনা করে পুনরায় কটেজটি নির্মাণের চেষ্টা চালায়। উচ্ছেদের সময় জিএম কটেজের প্রয়াত মালিক গুরা মিয়ার স্ত্রী জাহানারা বেগম কউকের দায়িত্বরত  নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে উচ্ছেদ বন্ধের আকুতি জানালেও শেষ রক্ষা হয়নি।

৩ বার উচ্ছেদের শিকার রমজান কটেজের মালিক রমজান আলী চরম হতাশ। অনেক ধার দেনা করে স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে চেষ্টা করেছিলাম কোনমতে বাঁচার। শেষ পর্যন্ত আবার উচ্ছেদ করে আমাকে নি: স্ব করে দিয়েছে বলে মুর্ছা যান তিনি। অন্তত ১ মাস আগে জানলেও এত টাকা খরচ করে কটেজের কাজ চালাতাম না। ৩ বার উচ্ছেদে শেষ সম্বল হারিয়ে নির্বাক তিনি।

এদিকে, উক্ত কটেজ মালিকদের উচ্ছেদ হবেনা এবং কউককে ম্যানেজের দায়িত্ব নিয়ে ক্ষতির মুখে ফেলা সৈকত বহুমুখী সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে বিপুল টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন অনেকে। অভিযোগ উঠেছে ওই এলাকায় ৩ তলা বিশিষ্ট লেমন ট্রি কটেজ, এলিট কক্স, কক্স কুইনসহ আরো অর্ধশত কটেজ থাকলেও শুধুমাত্র কয়েকটি কটেজ কেন বার বার কউকের টার্গেট সেটাও খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন সচেতন মহল।

অভিযানে নেতৃত্বদানকারী কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সিনিয়র সহকারী সচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুল হাসেমের সাথে মঙ্গলবার সকালে  যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অননুমোদিত স্থাপনা উচ্ছেদে কউকের এই অভিযান। সৈকত আবাসিক এলাকা এবং সুগন্ধা পয়েন্ট এলাকায় এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে অনুমোদনবিহীন ৪টি দুই তলা, ২টি এক তলা ভবনসহ ৯টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। তিনি এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে দাবি করেন।

এই অভিযান নিয়ে মাঠে নানা কথা শুনা যাচ্ছে দাবি করে এই কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি এই প্রসঙ্গে কথা বলতে রাজি নন। কউক চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।