নাটোরে ৫ লাখ কোরবানির পশু প্রস্তত 

প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৩, ১৬:১৩ | অনলাইন সংস্করণ

  নাটোর প্রতিনিধি

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে নাটোর জেলায় ৫ লাখ ২০ হাজার ২৩৮টি কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে। শেষ সময়ে পশু যত্ন ও খাদ্যভ্যাস দিয়ে হৃষ্টপুষ্ট নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। ইতোমধ্যে নাটোর জেলার ১৮ হাজার খামারি বিভিন্ন হাটে, অনলাইনে ও খামারগুলোতে পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। 

জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর নাটোর জেলায় ৫ লাখ ২০ হাজার ২৩৮ টি কোরবানির পশু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যার মধ্য ষাঁড় ৮৩ হাজার ৮২০টি, বলদ ১৩ হাজার ১৭২ টি, গাভী ১৪ হাজার ২৪২টি, মহিষ ২ হাজার ৮২২টি, ভেড়া ৪৬ হাজার ১৬৯ টি এবং ছাগল ৩ লাখ ৬০ হাজার ৪ টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

নাটোর সদর উপজেলায় ৮৫ হাজার ৩৮৩টি, বাগাতিপাড়া উপজেলায় ৫৬ হাজার ৯০৯টি, নলডাঙ্গা উপজেলায় ৫৫ হাজার ৮২৯টি, লালপুর উপজেলায় ৬৮ হাজার ১২৭টি, গুরুদাসপুর উপজেলায় ৯০ হাজার ৭১৪টি, সিংড়া উপজেলায় ৯২ হাজার ৫৬৬টি, এবং বড়াইগ্রাম উপজেলায় ৭০ হাজার ৭১০টি কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে। 

এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় দু'টি অনলাইন প্লাটফর্ম 'নাটোর পশুর হাট' ও 'অনলাইন ডিজিটাল পশুর হাট' থেকে কোরবানির পশু কেনাবেচা শুরু হয়েছে। এছাড়া জেলার ৭ উপজেলার প্রাণী সম্পদ অফিস, ব্যক্তি উদ্যোগে এবং খামারসহ বিভিন্ন অনলাইন ফেসবুক প্লাটফর্মে কোরবানির পশু কেনাবেচা কাজ শুরু করেছেন।

নাটোর জেলার সবচেয়ে বড় কোরবানির পশুর হাট বসে নাটোর সদরের তেবাড়িয়া, বড়াইগ্রাম উপজেলার মৌখাড়া হাট, বাগাতিপাড়ার পেড়াবাড়িয়া, গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড়, গোপালপুর উপজেলার মধুবাড়ী এবং সিংড়া ফেরিঘাট। তবে কোরবানির পশু কেনাবেচা পুরোদমে শুরু না হলেও দু-এক দিনের মধ্য ষুরু হবে বলে জানিয়েছেন খামারিরা।

লোচনগর এলাকার খামারি শরিফুল ইসলাম বলেন, কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য খামারে ৫টি গরু প্রস্তুত করেছেন। তিনি প্রাকৃতিক উপায়ে পুষ্টিকর খাবার, খৈল, গম, ভূষি, ছোলা এবং সবুজ ঘাস খাইয়ে খুব সহজেই পশু মোটাতাজা করেছেন। যদি বাজার ভালো থাকে তাহলে প্রতি গরু দেড় থেকে তিন লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি জানান।

দিঘাপতিয়া এলাকার খামারি আবুল হোসেন বলেন, আসন্ন কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য খামারে ৩০টি ষাঁড় প্রস্তুত করেছি। বর্তমানে গরুর বাজার মূল্য মোটামুটি ভালো। দুইটি ষাঁড় বিক্রি করেছি। আশা করছি, সামনে দাম কিছুটা বাড়তে পারে। তবে খাদ্যের দাম বাড়ায় বর্তমানে খামার তৈরি করা তেমন লাভ নয়। খাদ্য দাম কমলে আমরা খামারিরা কিছুটা লাভবান হতে পারবো।
 
সদর উপজেলার হয়বতপুর এলাকার খামারি আনিছুর রহমান বলেন, ৪ বছর ৫টি ষাঁড় দিয়ে খামার গড়েন তিনি। বর্তমানে খামারে মোট ২৫টি ষাড় গরু রয়েছে। যার মধ্য ২০টি ষাঁড় গরু কোরবানির বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যদি গরুর দাম বর্তমান বাজারমূল্যে থাকে তাহলে ৫০-৬০ লাখ টাকা বিক্রি করবেন বলে জানান।

গরু কিনতে আসা নুর হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, কোরবানি করার জন্য মাঝারি গরু খুঁজছি। এবছর গরু প্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা দাম বেশি মনে হচ্ছে। যেহুত কোরবানি করতে হবে তাই বেশি দাম দিয়েই গরু কিনতে হচ্ছে।

পশু কিনতে আসা আমিনুর ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, প্রতি বছর খামার থেকে গরু ক্রয় করে কোরবানি দেই। খামার থেকে গরু কিনলে সুবিধা রয়েছে, ঈদ পর্যন্ত গরু খামারে রাখা যায়। বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার বাড়তি ঝামেলা পোহাড়ে হয় না। তবে এ বছর গরুর দামটা বেশি। দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মধ্য ষাঁড় খুঁজছি। পচ্ছন্দ হলে দরদামে মিলে গেলেই কিনবো।

নাটোর জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো. গোলাম মোস্তফা জানান, এ বছর নাটোর জেলায় ১৮ হাজার খামারে প্রায় ৫ লাখের অধিক কোরবানির পশু প্রস্তত রাখা হয়েছে।খামারিরা প্রাকৃতিক উপায়ে পশু হৃষ্টপুষ্ট করেছেন। জেলার কোরবানির চাহিদা মিটিয়ে অর্ধেক পশু ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবারহ করা হবে। এ বছর খামারিরা সঠিক মূল্য পাবে বলে আশা করছি।