পাবনায় শেষ মুহুর্তে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে মুখরিত পশুর হাট। যেদিকেই চোখ যাবে নানা আকার ও রঙের পশু ও হাজার হাজার ক্রেতা বিক্রেতার সমাগম হাট গুলোতে।
পশু সমৃদ্ধ পাবনা জেলাতে চাহিদার তুলনায় প্রায় সারে ৩ লক্ষ কোরবানির পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। পাবনার ঐতিহ্যবাহী হাজিরহাট ও পুস্পপাড়া হাট সহ প্রায় ৩৪টি হাটে এবার ব্যাপক পরিমান কোরবানির পশুর সমাগম হয়েছে। তবে পশু খাদ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য এই বছরে কোরবানির পশুর দামও একটু চড়া। দেশি ও উন্নত সংঙ্কর জাতের গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল বিক্রি হচ্ছে হাটগুলোতে।
সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায় মানুষের সাথে মিল রেখে আমাদের দেশেও পশু কোরবানি করে থাকেন স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা। প্রতিবছর সারাদেশে যে পরিমান পশু কোরবানি হয় তার অনেকাংশের চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে পাবনা জেলা থেকে। পূর্ব থেকেই এই জেলার পশু, দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় পণ্য সরবরাহ হয়ে আসছে সারা দেশে।
সময়ের সাথে সাথে কর্মসংস্থান ও সরকারি ব্যাবস্থায় এই অঞ্চলের কৃষকদের পশু লালন পালনে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। তাইতো দুধের চাহিদার সাথে মাংস ও কোরবানির পশুর চাহিদাও মিটিয়ে আসছে পাবনা জেলার পশুর খামারীরা। তবে সম্প্রতি গো খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারনে খরচের সাথে পশুর দাম নির্ধারনে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে সকলকে। আবার ক্রেতারাও পরেছে বেশ বিপাকে।
বিগত বছর গুলির চাইতে এই বছরে বার্তি অর্থ দিয়ে পশু ক্রয় করতে হচ্ছে তাদের। অপর দিকে খামারী ও ব্যাপারী বলছেন যে দামে প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে পশু ক্রয় করে হাটে আনছেন তার চেয়ে কম দাম বলছেন ক্রেতারা। তবে সারা দেশের সাধারন ক্রেতাদের কাছে পাবনা জেলার দেশি জাতের কোরবানির পশুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
পশু ব্যাপারী ও খামারীরা জানান, প্রচুর পরিমান কোরবানির পশুর সমাগম রয়েছে হাট গুলোতে। গ্রাম অঞ্চল থেকে যে দামে গৃহস্থ থেকে পশু কিনে হাটে আনতে হচ্ছে তার চাইতে কম দাম বলছে ক্রেতারা। তবু বিক্রি করতে হবে দামে মিল্লে বিক্রি করে দিচ্ছি। শহরের মানুষ পশু দুইএকদিন আগে কিনে থাকে। তাই অনেকেই বিক্রি না করে হাটে হাটে ন্যায্যমল্যের আশায় ঘুরছে।
আবার অনেকেই অনলাইনে পশু কিনছেন। হাটে না এসে কৃষকের বাড়ি থেকে অথবা খামার থেকে পশু ক্রয় করছেন। তবে বিগত বছরের চাইতে পশু একটু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এবার মন হিসাব করলে ২৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গো থাদ্যের কারনে এবারে পশুর দাম একটু বেশি।
ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানাযায়, বিগত বছরের চাইতে এই বছরে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা গরু প্রতি বেশি দাম। হাটে এতো পরিমান দালাল পশু কেনা মুসকিল। খামারী অথবা কৃষক গরু বা পশু বিক্রি করতে চাইলেও দালালরা দামবৃদ্ধি করে বাজার চড়া করে ফেলছে। তবু এর মধ্যে দাম দরকরে কিনতে হবে। তবে বিগত বছরের চাইতে সকল পশুর দাম বেশি।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, নিরাপত্তার জন্য এবারে হাট গুলোতে সিসি ক্যামারা বসানো হয়েছে। হাটের দিন গুলিতে সাদা ও পোশাকী পুলিশ হাটের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া সড়কে টহল পুলিশ বুদ্ধি করা হয়েছে। দিনরাত হাটে এবং সড়কে কাজ করছে পুলিশ। কোন ধরনের সমস্যা হলে দ্রæত সেখানে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন অপৃতিকর ঘটনার খবর আমাদের কাছে আসেনি।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আল মামুন হোসেন মন্ডর বলেন, প্রতিটি পশু হাটে ভ্যাটেনারি মেডিকেল টিম রয়েছে। জাল নোট সনাক্তকরণ মেশিন বসানো হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যাপারী ও ক্রেতারা আসছেন পাবনার হাট গুলোতে।
বেঁচা বিক্রি বেশ ভালো। মাঠ পর্যায়ে নিরাপত্তা দিচ্ছেন পুলিশ। এবারে পাবনা জেলাতে অসুস্থ্য পশু নেই বল্লেই চলে। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইতমধ্যে ট্রাক যোগে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাটে ব্যাপারী ও খামারীরা নিজ উদ্যোগে পশু বিক্রির জন্য নিয়ে গেছেন।
এবার পাবনা জেলাতে প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ কোরবানীর পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু রয়েছে প্রায় দুই লক্ষ, ছাগল ৪ লক্ষ, মহিষ ১০ হাজার ও ভেড়া ৫০ হাজার। জেলাতে এই বছরে ৩ লক্ষ কোরবানীর পশুর চাহিদা রয়েছে। বাকী প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ পশু সারাদেশে সরবরাহ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।