ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্নে করতে নানা পদক্ষেপ

বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্নে করতে নানা পদক্ষেপ

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে ঘরমুখো মানুষ। বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্নে করতে স্থানীয় প্রশাসন উঠেপড়ে লেগেছে। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা দিনরাত পালা করে মহাসড়ক টহল দিচ্ছেন।

সোমবার(২৬ জুন) বিকাল পর্যন্ত মহাসড়কে যানজটের চিহ্ন না থাকলেও পরিবহনের ধীরগতি ছিল। এছাড়া নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে থ্রি-হুইলারের অবাধ যাতায়াত লক্ষ করা গেছে। এরই মধ্যে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার(২৭ জুন) আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসড়ক পরিদর্শন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জানাগেছে, বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে ঈদুল ফিতরের ন্যায় ঈদুল আজহার যাত্রাও নির্বিঘ্নে করতে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- বিকল হওয়া যানবাহন দ্রুত সরিয়ে নেওয়া, নিরবচ্ছিন্ন টোল আদায়ে সেতুর টোলপ্লাজা বাড়িয়ে ৯টিতে উন্নীতকরণ, পশুবাহী ট্রাকগুলো

নির্দিষ্ট স্থানের আগে না থামানো, টাঙ্গাইল অংশে মহাসড়ক ঘেষা ২৭টি গরুর হাট অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া, ফিটনেস বিহীন যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, বালুবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখা, প্রয়োজনে ভূঞাপুর সড়ক বিকল্প হিসেবে ব্যবহার, মহাসড়কে যানচলাচল সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা ইত্যাদি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কালিয়াকৈরের পর থেকে টাঙ্গাইলের রাবনা বাইপাস পর্যন্ত চার লেনের ফাঁকা মহাসড়কে পরিবহনগুলো দ্রুতগতিতে যাতায়াত করছে। রাবনা বাইপাসের পর কিছুটা ধীরগতি হলেও সেতুর টোলপ্লাজা পর্যন্তও যানজট নেই।

এলেঙ্গা থেকে সেতুর গোলচত্তর পর্যন্ত দুই লেন ও চারলেনের কাজ চলমান থাকায় ওই অংশে ঈদের আগের দুইদিন যানজটের শঙ্কা রয়েছে। কালিয়াকৈরের পর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেন মহাসড়ক অনেকটা ফাঁকা থাকায় পাশের সার্ভিস লেন রেখে থ্রি-হুইলারগুলোকে মহাসড়কে চলাচল করতে দেখা গেছে। এলেঙ্গা থেকে সেতুর গোলচত্তর পর্যন্ত লেগুনা ও থ্রি-হুইলারের অবাধ যাতায়াত সব সময়ই ছিল- এখনও রয়েছে। ফলে ওই সাড়ে ১৩ কিলোমিটারে যানজটের আশঙ্কা আরও তীব্রতর হচ্ছে।

এদিকে, মহাসড়কে আগের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গগামী যানবাহনের সংখ্যা বেশি। যাত্রীবাহী বাসের পাশাপাশি চাপ রয়েছে ট্রাক, মাইক্রোবাস, পিকআপ, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলের। এ সব যানবাহনে গাদাগাদি করে মানুষ বাড়ি যাচ্ছে। আবার অনেকে সিএনজি বা ব্যাটারি চালিত অটোরিকশায় ভেঙে ভেঙে চলাচল করছে।

বিশেষ করে পরিবার ছাড়া যাত্রীরা বাস না পেয়ে ঝুঁিক নিয়েই ট্রাক ও পিকআপে বাড়ি ফিরছে। সোমবার বিকালে কাঙ্খিত পরিবহন না পেয়ে যাত্রী সাধারণকে দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে। শ’ শ’ মানুষ গন্তব্যস্থলের জন্য মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়েছিলেন।

ঈদযাত্রায় মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে ‘রোডশো’ করেছে বিআরটিএ টাঙ্গাইল সার্কেল। সোমবার বিকালে মহাসড়কের এলেঙ্গায় বিআরটিএ জেলা শাখার সহকারী পরিচালক আলতাব হোসেনের নেতেৃত্বে এ রোড শো করা হয়।

এলেঙ্গা হাইওয়ে ফাঁড়ির তথ্যমতে, মহাসড়কে থ্রি-হুইলারের যাতায়াত বন্ধে হাইওয়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে। সার্ভিস লেন ছেড়ে মহাসড়কে ওঠে পড়ায় গত মে মাসে ৪০টি ও চলতি জুন মাসে প্রায় ২০টি সিএনজি চালিত থ্রি-হুইলারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

থ্রি-হুইলার চালক সাজন মিয়া, জহির উদ্দিন, রুবেল মিয়া সহ অনেকেই জানান, মূলত: গন্তব্যে পৌঁছাতে দ্রুতগতি পাওয়ার জন্য সিএনজি টালিত অটোরিকশা বা থ্রি-হুইলারগুলো মহাসড়কে ওঠে পড়ে। তবে পুলিশি তৎপরতা জোরদার থাকায় অনেক চালক ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত মহাসড়কে সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালান। পুলিশের চোখে পড়লে মামলা খেতে হয় জানিয়ে তারা জানান, মহাসড়ক দিয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে পারলে পুনরায় যাত্রী পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহিদ হাসান জানান, সার্ভিস লেন ছেড়ে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার ওঠে পড়লে তারা আটক করে মামলা দিয়ে দেন। চলতি মাসে এ রকম প্রায় ২০টি থ্রি-হুইলারের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে গত ২৪ ঘণ্টায় সেতু দিয়ে ২৯ হাজার ৮৫টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে দুই কোটি ৬৫ লাখ ৮৯ হাজার ৩০০ টাকা। বাসেক’র বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, রোববার (২৫ জুন) সকাল ৬টা থেকে সোমবার (২৬ জুন) সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়েছে মোট ২৯ হাজার ৮৫টি। এর বিপরীতে টোল আদায় হয়েছে দুই কোটি ৬৫ লাখ ৮৯ হাজার ৩০০ টাকা। এরমধ্যে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব টোল প্লাজায় পারাপার হয়েছে ১৪ হাজার ৯৭৬টি যানবাহন এবং টোল আদায় হয় এক কোটি ২৬ লাখ ৪১ হাজার ১৫০ টাকা। সেতুর পশ্চিম টোল প্লাজায় পারাপার হয় ১৪ হাজার ৮৮১টি যানবাহন। এতে টোল আদায় হয় এক কোটি ৩৯ লাখ ৪৮ হাজার ১৫০ টাকা।

তিনি আরও জানান, ঈদ এগিয়ে আসায় মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যানজট এড়াতে সেতু পূর্ব ও পশ্চিমে মোট ১৮টি বুথে টোল আদায় করা হচ্ছে।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, মহাসড়কে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্নে করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। জেলা পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ দিনরাত পরিশ্রম করছে। ঈদুল ফিতরের ন্যায় এবারের ঈদুল আজহায়ও কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ি ফিরতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, পবিত্র ঈদুল আজহায় ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্নে করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। মহাসড়ক ঘেষা ২৭টি গরুর হাট অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া, বিকল যাবাহন দ্রুত সরিয়ে নেওয়া, টোলপ্লাজা বাড়িয়ে ৯টি করা। প্রয়োজনে বিকল্প হিসেবে ভূঞাপুর সড়ক ব্যবহার করা ইত্যাদি।

তিনি জানান, গৃহীত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছেন। ঈদুল আজহায় নির্বিঘ্নে ঘরে ফেরার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের ‘যানজট’ ইতিহাসের পরিসমাপ্তি ঘটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ ক

মহাসড়ক,পরিবহন,যানজট
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত