পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৩, ১৫:৪৯ | অনলাইন সংস্করণ
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে বৃদ্ধি পেয়েছেব্যবসা-বানিজ্য। বেড়েছে জেলার আমসহ অন্যান্য পণ্য পরিবহনের চাপ।
কোলকাতা থেকে কম দূরত্বের হওয়ায় ভোমরা স্থলবন্দরের বেড়েছে সম্ভাবনা। ভোমরা স্থলবন্দরকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা গেলে চট্রগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উপর চাপ কমবে বলে মনে করেন অনেকেই।
এদিকে,পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সাতক্ষীরায় আমসহ পণ্য পরিবহনে সুবিধা এসেছে ব্যাপক। ফেরীর ভোগান্তি কমেছে বলে নিশ্চিন্তমনে আমসহ অন্যান্য পচনশীল পণ্য সারা দেশে পৌছে দিতে পারছেন ব্যবসায়ীরা। পদ্মা সেতুর কারণে কৃষিজ পণ্য উৎপাদন ও ব্যবসায় যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সাতক্ষীরার আকর্ষণ-সড়কপথে সুন্দরবন’এ স্লোগানটি আরও সহজ হয়েছে। দেশের যেকোনো স্থান থেকে পর্যটকরা সড়ক পথেই সুন্দরবন দেখতে আসার সুযোগ পাচ্ছেন। ফলে সাতক্ষীরার সামগ্রিক অর্থনীনিতে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে।
এদিকে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে,পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে ভোমরা স্থলবন্দরে প্রতি কর্মদিবসে প্রায় ১০০টি আমদানি ট্রাক বেশি ঢুকছে। আর ২০২২ সালের মে মাসে যেখানে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪৩ কোটি টাকা,অন্যদিকে চলতি সালের মে মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা।
আরও জানা যায়, কোলকাতা থেকে ভোমরা স্থলবন্দরের দুরত্ব মাত্র ৬০ কি.মি.। দূরত্ব বিবেচনায় বন্দরের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকলেও আরিচা ফেরিঘাটে যানজটের কারণে ব্যবসায় উৎসাহ হারিয়ে ফেলতেন ব্যবসায়ীরা। তবে ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতুর
উদ্বোধনের পর ঢাকা থেকে সাতক্ষীরার দূরত্ব কমেছে ৬২ কি.মি.। আর ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বেড়েছে ভোমরা স্থলবন্দরে। ব্যবসায়ীদের অভিমত,পদ্মা সেতুর ফলে পাল্টে গেছে ভোমরা স্থলবন্দরের দৃশ্যপট।
সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড় বাজার কাচামাল ব্যবসায়ী সমিতি সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাবু জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে আমরা যখন আম পাঠাতাম,তখন অনেক সময় আম পচে যেত। ফেলে দিয়ে আসতাম অনেক সময়। এখন মাত্র চার থেকে পাঁচ ঘন্টায় আমরা
ঢাকায় আম নিয়ে যেতে পারছি।
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশ নের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খান জানান, কোলকাতা থেকে ভোমরার দূরত্ব কম। পদ্মা ব্রীজ হয়ে খুবই উপকার হয়েছে ব্যবসায়ীদের। মাত্র ৫ থেকে ৬ঘন্টায় ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা মালামাল দেশের যে কোন স্থানে পৌছে যাচ্ছে।
তবে ভোমরা স্থলবন্দরে কাস্টমস হাউস না থাকায় ৭২টি পণ্যের অনুমোদন থাকলেও ২২ থেকে ২৫টি এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে। সব পণ্য আমদানি-রপ্তানি করাসম্ভব হচ্ছে না। ফলে একদিকে যেমন ব্যবসায়ীরা পদ্মা সেতুর পুরো সুফল পাচ্ছেন
না, তেমনি সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক শেখ এজাজ আহমেদস্বপন জানান, পদ্মা সেতু হওয়ার পর সাতক্ষীরার অর্থনীতি আমূল বদলে গেছে। মানুষের যাতায়াতের সুবিধা হয়েছে। চাইলে তারা দিনের কাজ শেষ করে দিনে ফিরে আসতে পারছেন। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। মাছ অক্সিজেনের মাধ্যমে ঢাকাসহ পাশের জেলায় যাচ্ছে। আমদানি করা পণ্য বিশেষ করে পচনশীল পেঁয়াজ, আদাসহ কাঁচামাল ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যাচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুর রহমান জানান, জেলায় মাছের মোট উৎপাদন ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৩ টন। পদ্মা সেতুর কারণে সারাদেশের সাথে যোগাযোগ সহজ হওয়ায় এখানকার মাছ দিনের মধ্যে দেশের যেকোনো প্রান্তে পৌঁছে দেওয়া সহজ হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন। পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) একেএম ইকবাল হোসেন চৌধুরী জানান, পদ্মা সেতু হওয়ার পর সুন্দরবনের সাতক্ষীরা অঞ্চলে পর্যটক বেড়েছে।
এ অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান বেড়েছে। সড়ক পথে সুন্দরবন দেখার সবচেয়ে সহজ উপায় সাতক্ষীরা। যে কারণে মানুষ পদ্মাসেতু দিয়ে সরাসরি সুন্দরবন আসতে পারছেন। এতে সরকারের রাজস্বও বৃদ্ধি পেয়েছে।
সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু জানান, পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিাঞ্চলের আশা ও উন্নয়নের প্রতীক। এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদল হয়েছে। ভোমরা স্থলবন্দরের রাজস্ব ও রপ্তানি বেড়েছে। সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফিরেছে। তেলের দাম বাড়লেও সময় ভোগান্তি কমায় তা পুষিয়ে নিতে পারছেন ব্যবসায়ীরা।