মানিকগঞ্জে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তারের যোগসাজশে জটিল ও কঠিন অপারেশন করে বেড়াচ্ছে ওটিবয় জাহাঙ্গীর জয় নামের এক প্রতারক। এসব অপারেশন শেষে ছাড়পত্র ও রেজিস্টারে ব্যবহার করা হচ্ছে সরকারি হাসপাতালের সার্জারি ডাক্তার আরিফের নাম এবং সিগনেচার।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে এক শ্রেণীর অসাধু ডাক্তার ও হাসপাতাল ব্যবসায়ীদের ছত্রছায়ায় চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে যাচ্ছে জাহাঙ্গীর। দালাল দিয়ে গ্রামের সহজ-সরল রোগীদের অল্প টাকায় ভালো চিকিৎসা ও অপারেশনের নামে মানুষের জীবন নিয়ে ভয়ংকর খেলায় মেতে উঠেছে সে।
ভুক্তভোগী বাদল মিয়া জানান, গত ১৭ জুন সকালে কর্ণেল মালেক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডাক্তার মুস্তাফিজুর রহমানের কাছে আমার ঘাড়ের টিউমার দেখাতে যাই। তিনি আমাকে দেখে কিছু পরিক্ষা-নিরিক্ষা দেন এবং সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে অপারেশন করে দিতে চান। তবে আমার সমস্যা তীব্র হওয়ায় আমি খুব দ্রুত অপারেশন করতে চাই। ডাক্তার বলেন বেসরকারী হাসপাতালে গেলে অজ্ঞান করে, হাসপাতাল এবং ওষুধসহ ১৪/১৫ হাজার টাকা খরচ লাগবে। এরপর ১৯ জুন পূর্ব পরিচিত মিজান নামের এক লোক আমাকে কম খরচে বড় ডাক্তার দিয়ে আজকেই অপারেশন করার জন্য বাসস্ট্যাণ্ড এলাকায় হাজী ছবেদ সুপার মার্কেটের ৩য় তলায় অবস্থিত সিদ্দিকীয়া হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখানকার লোকজন সার্জারি ডাক্তার আরিফকে দিয়ে অপারেশ করে দেবে বলে আমার সাথে ৩৫০০ টাকা চুক্তি করে। সেদিনই বিকেল সাড়ে ৩টার সময় আমাকে স্যালাইন দিয়ে অপারেশন রুমে নিয়ে যায়। অপারেশন করার সময় আমাকে অজ্ঞান না করে শুধু আমার ঘাড়ে ইনজেকশন দিয়ে অপারেশন শুরু করে। অপারেশনের সময় তীব্র ব্যাথা অনুভব হলে সে ডাক্তার আমার ঘাড়ে একে একে ৪টি ইনজেকশন দেয়। অপারেশন শেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ডাক্তারের ভিজিটিং কার্ড চাইলে তারা কেউই আমাকে ভিজিটিং কার্ড দিতে রাজি হয়নি। বিষয়টি আমার কাছে সন্দেহ হয়। পরে ডাক্তারের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি। অপারেশন করেছে সিদ্দিকীয়া হাসপাতালের ওটিবয় জাহাঙ্গীর। বিভিন্ন জনের কাছে এ বিষয়ে কথা বলে জানতে পারি সিদ্দিকীয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে জাহাঙ্গীর এভাবেই অপারেশন করে বেড়ায়। আমার ছাড়পত্রে সার্জন আরিফ ডাক্তারের নাম থাকলেও সে অপারেশন করে নাই, এমনকি তার সিগনেচারটিও ভূয়া। বর্তমানে আমার ঘাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা করছে। আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি। ওটিবয় জাহাঙ্গীর এবং সিদ্দিকীয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিচার চাই।
জাহাঙ্গীর বলেন, আরিফ ডাক্তার আসতে দেরি করায় এক সহযোগী নিয়ে আমি নিজেই অপারেশনটি করেছি।
সিদ্দিকীয়া হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লুৎফর রহমানের কাছে ওটিবয় জাহাঙ্গীর ও ডাক্তার আরিফের নাম সিগনেচার নকল করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।
মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি ডাক্তার মো. আরিফুর রহমান বলেন, বাদল নামের ওই রোগীর অপারেশন আমি করিনি। আমার নাম ও সিগনেচার ব্যবহার করে এ অপকর্ম যারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেব।
মানিকগঞ্জ ক্লিনিক এন্ড প্যাথলজি ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান বলেন, সিদ্দিকীয়া কর্তৃপক্ষ যে কাজটি করেছে তা জঘন্য অন্যায়। ওটিবয় জাহাঙ্গীরকে দিয়ে অপারেশন করিয়ে অন্য ডাক্তারের নাম-সিগনেচার ব্যবহার করে তারা মূলত প্রতারণা করেছে। এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমি এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি।
মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বলেন, চিকিৎসার নামে যারা প্রতারণা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।