ট্যানারি সিন্ডিকেট
চামড়ার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত সাতক্ষীরার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৩, ১৮:০৫ | অনলাইন সংস্করণ
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সব জিনিসের দাম বাড়লেও কমেছে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম। অথচ একই সময়ে বেড়েছে জুতা-স্যান্ডেলসহ সব ধরনের চামড়াজাত পণ্যের মূল্য। এক দশক ধরেই বিশেষ সিণ্ডিকেটের কারণে চামড়ার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত কোরবানিদাতা ও মসজিদ-মাদ্রাসাগুলো।
গত কয়েক বছর ধরে ঈদুল আজহায় ন্যায্যমূল্য তো দূরের কথা, চামড়া কিনতে বহু এলাকায় ক্রেতারই খোঁজ মিলছে না। এমন অবস্থায় চামড়া পাচার রোধে সাতক্ষীরার সীমান্ত জুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বিজিবি ও আইন-শৃখংলা বাহিনী।
এদিকে, এ বছর সরকার ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা নির্ধারণ করেছে। বিশ্ববাজারে চামড়ার দাম বাড়লেও দেশের চামড়ার বাজার সম্প্রতি চীন কেন্দ্রিক ও প্রতিযোগিতাহীন হয়ে পড়ায় ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না বিক্রেতারা। চামড়ার পড়তি দরের পেছনে রয়েছে একদল সিণ্ডিকেটের কারসাজিরও অভিযোগ রয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সাধারণ সম্পাদক শেখ ওলিউর রহমান জানান, কাঁচা চামড়া সংগ্রহের বড় একটি মোকাম সীমান্ত জেলা সাতক্ষীরা। এখানে ব্যবসায়ীরা সারাবছর কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে ট্যানারিতে সরবরাহ করে থাকে। সারা বছরের কাঁচা চামড়ার বিশাল একটি অংশ কোরবানির ঈদে সংগ্রহ করা হয়। গত কয়েক বছর যাবৎ চামড়া শিল্পে বিপর্যয় নেমে আসে।
তিনি আরও জানান, গত বছর থেকে হঠাৎ করে চামড়ার দাম পরে যাওয়ায় কাঁচা চামড়া মাটিতে পুতে ফেলা ও নদীতে ফেলে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। অন্যদিকে ট্যানারি মালিক কাঁচা চামড়া নিয়ে বছরের পর বছর টাকা পরিশোধ না করায় লোকশানে পরে ব্যবসা ছেড়েছে অনেক ব্যাপারি।
চামড়া ব্যবসায়িরা জানান, কোরবানির ঈদে কাঁচা চামড়া সংগ্রহে আগ্রহ খুবই কম ব্যবসায়ীদের মধ্যে। তবে সরকার ব্লু লেদার বিদেশে রপ্তানির সুযোগ করে দিলে আবারও চামড়ার চাহিদা বাড়বে ও চামড়া শিল্পে সুদিন ফিরবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানান, এমন পরিস্থিতিতে চামড়া পাচার রোধে সাতক্ষীরার ২৩৮ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে বিজিবি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে দেশে চামড়ার দাম বাড়ানো গেলে ভারতে পাচারের আশংকা নেই জানিয়ে কোরবানীর চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের দাবি বিক্রেতাদের। তিনি আরও জানান, কোন চামড়া পাচারকারি যাতে ভারতে চামড়া পাচার করতে না পারে সেজন্য জেলার সীমান্ত এলাকাজুড়ে বিজিবি বিশেষ সতর্কাবস্থায় রয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান জানান, চামড়া পাচার রোধে বিজিবির পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ চেকপোস্ট বসানোসহ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে, চামড়ার প্রকৃত মূল্য প্রাপ্তির পাশাপাশি চামড়া শিল্পকে সিন্ডিকেটের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে, কাঁচা চামড়া বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে আবারও বাংলাদেশে চামড়া শিল্প সোনালী সম্পদে পরিণত হবে বলে মনে করেন স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা।