বৃষ্টি না হওয়ায় মঙ্গলবার (৪ জুলাই) সকাল থেকে নেত্রকোণায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। এদিন দুপুরের দিকে জেলার ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা কলমাকান্দা উপজেলার উফদাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা যায়। এর আগেরদিন সোমবার সন্ধ্যায় পানির অবস্থান ছিল বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপরে। এই নদীর কলমাকান্দা সদরের ডাকবাংলো পয়েন্টে ৬ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার উচ্চতাকে স্বাভাবিক ধরা হয়।
ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা নেত্রকোণার আর এক উপজেলা দুর্গাপুরের সুরমা ও কংসসহ ছোটবড় বিভিন্ন নদনদীর পানিও কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। ফলে ওই দুই উপজেলার ভাটির দিকের নেত্রকোণা সদর, বারহাট্টা প্রভৃতি উপজেলার পানি স্থিতাবস্থায় রয়েছে।
এদিকে, জেলার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টা উপজেলার অর্ধশতাধিক বিদ্যালয়ের মাঠে আজও পানি দেখা যায়। এসব এলাকার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কও পানির নীচে।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র মতে, প্রায় ১৫০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়কের উপর আজও হাটু পরিমাণ পানি বিদ্যমান। জনসাধারণের চলাফেরায় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, গত ঈদের আগেরদিন বুধবার থেকে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে নেত্রকোণার বিভিন্ন উপজেলা, বিশেষ করে ভারতীয় সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার কারণে কলমাকান্দা উপজেলার পোগলা, গড়কাপন, কৈলাটী, মঙ্গলসিধ, গোয়াতলা, খারনৈ, জীবনপুর, বরুয়াকোণা, বাবনিকোণা, সনুরা, কনুরা, বেনুয়া, দুর্গাপুর উপজেলার বন্দউষান, আটলা, নন্দেরছটি, হাতিমারাকান্দা, ভাদুয়া, নাওধারা, জাগিরপাড়া, গাঁওকান্দিয়া, কুল্লাগড়া, লোহাচোরা, বন্দকাটুরি, পলাশগড়া, মুন্সিপাড়া, বারহাট্টা উপজেলার সেমিয়া, দুধকোড়া, ধলপুর, উত্তর নিশ্চিন্তপুর, দেউপুর, হাজিগঞ্জ, লাউফা, উছালাকান্দাসহ অনেক গ্রামের সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। এসব সড়কের অধিকাংশ আজও পানির নীচে রয়েছে।
কলমাকান্দা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাহানারা খাতুন বলেন, উপজেলার ধীতপুর, বাহাদুরকান্দা, মাইজপাড়া খলা- ১, মাইজপাড়াখলা- ২, বড়কাপন, চৌহাট্টা, বাউসারী, হাইলাটি, রিকা, পোগলা প্রভৃতিসহ অর্ধশতাধীক বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে তলিয়েছে।
এলজিইডি’র প্রকৌশলী শুভ্রদেব চক্রবর্তী জানান, কলমাকান্দায় ৬৭৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রাথমিক অনুসন্ধানে ৩২ কিলোমিটারে পানি রয়েছে বলে জানা যায়। এসব সড়কের মধ্যে উপজেলা মোড়-মুক্তিচর, বাসাউড়া-বাহাদুরকান্দা, ঘোষপাড়া-হরিণধরা, কলমাকান্দা-বিষরপাশা, গজারমারী-খারণে, গোবিন্দুপর-রানীগাঁও, গোড়স্থান-সাউদপাড়া প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নেত্রকোণার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সারওয়ার জাহান বলেন, উফদাখালী নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে। আপাততঃ বন্যার আশংকা নেই। তবে উজানে বৃষ্টি হলে নদ-নদীর পানি বাড়বে।
কলমাকান্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (চলতি দায়িত্ব) মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ইতিমধ্যে সরেজমিনে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন ও ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।
দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসর মোহাম্মদ রাজিব উল আহসান জানান, এলাকা পরিদর্শন করে ২০০ জন ক্ষতিগ্রস্থের তালিকা করা হয়েছে। তাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হবে। পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশাসনের সার্বক্ষণিক নজরদারী রয়েছে।