রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসা-আরএসওর গোলাগুলিতে নিহত ৫

প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৩, ১৩:১১ | অনলাইন সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার

কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও আরাকান সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে  গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে আরসা কমান্ডার নজিবুল্লাহসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন।

শুক্রবার গোলাগুলিতে নিহতরা হলেন- আরসা কমান্ডার ক্যাম্প-১০ এর বাসিন্দা মো. নজিমুল্লাহ, আরসার জিম্মাদার ক্যাম্প-১৩ এর নুরুল আমিন (২৪), আরসার সদস্য ক্যাম্প-৮ ওয়েস্টের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন (২৪) ও  মোহাম্মদ হামীম (১৬)। অপরজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

শুক্রবার ভোর ৫ টার দিকে উখিয়া ক্যাম্প-৮ ওয়েস্টে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন ৮-এপিবিএন অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) আমির জাফর। 
তিনি বলেন, ভোরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুষ্কৃতিকারী আরসা ও আরএসও'র  দু’পক্ষের গোলাগুলির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তিনজনের মরদেহ পাওয়া যায়। আহত আরও দু’জনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তারাও মারা যান। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। ক্যাম্পে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

এদিকে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর চালানো নির্যাতন-নিপীড়নের তথ্যানুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদ খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ক্যাম্প পরির্দশন করার একদিন পর এ গোলাগুলির ঘটনাকে ঘিরে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। 

গত বৃহস্পতিবার আইসিসি প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদ সাক্ষাতের জন্য নির্যাতিতদের ডাকতে গিয়ে মোঃ এবাদুল্লাহ (২৭) নামের এক রোহিঙ্গা মাঝি (নেতা) ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন।

রোহিঙ্গাদের দাবি, আরসার সন্ত্রাসীরা মিয়ানমার সরকারের ইন্ধনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও আন্তর্জাতিক আদালতের বিচার বাঁধাগ্রস্ত করতে কাজ করছে। প্রত্যাবাসনে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে হত্যা ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদ খান ক্যাম্প সফর ও বিচার কার্যক্রমের সাক্ষ্য দিতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের ভয় দেখাতে এ হামলা বলে ধারণা রোহিঙ্গাদের।

গোলাগুলির বিষয়ে ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এপিবিএন পুলিশ ও রোহিঙ্গা সূত্র বলছে, শুক্রবার ভোরে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসার অন্তত ৪০ থেকে ৫০ জনের একটি সশস্ত্রদল ক্যাম্প-৮ ওয়েস্টে প্রবেশ করে ঘুমন্ত আরএসও সদস্যদের ওপরে হামলার উদ্দেশ্যে। কিন্তু আরএসও'র সদস্যরা আগে থেকে হামলার খবর পেয়ে ভারী অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত হয়। ভোর ৫ টার দিকে আরসার সদস্যরা ক্যাম্পে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে চারদিক থেকে ঘিরে এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ করে আরএসও'র প্রশিক্ষিত যোদ্ধারা। এতে দুই পক্ষের মধ্যে প্রায় ঘন্টাব্যাপি গুলিবিনিময় হয়। এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে দুই পক্ষই পালিয়ে যায়। 

৮-এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার (অপারেশন অ্যান্ড মিডিয়া) ফারুক আহমেদ বলেন, নিহতরা সবাই সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসার সদস্য বলে জানতে পেরেছি। ভোরে সবাই যখন ঘুমে থাকে ঠিক এসময় আরসার ৪০ থেকে ৫০ জন অস্ত্রধারী একটি দল অতর্কিত হামলার উদ্দেশ্যে ক্যাম্পে প্রবেশ করে। এসময় আরসা বিরোধী হিসেবে পরিচিত আরএসও তাদেরকে প্রতিরোধ করলে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। শুনা যাচ্ছে ঘুমন্ত আরএসও'র সদস্যদের হত্যার জন্য ক্যাম্পে হামলা করেছিল আরসার সদস্যরা। 

তিনি আরও বলেন, আরসা সবসময় রোহিঙ্গাদের কাছে প্রত্যাবাসন বিরোধী হিসেবে পরিচিত এবং তারা মিয়ানমারের সরকারের হয়ে কাজ করেন বলে দাবি করা হয়। এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে আইসিসি'র প্রধান কৌঁসুলি ক্যাম্প পরির্দশন ঘিরে রোহিঙ্গাদের ভয়ভীতি দেখাতে এ হামলা।

ফারুক আহমেদ বলেন, কে আরসা, কে আরএসও–সেটি বিষয় নয়। ক্যাম্পে কোনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলবে না। যারাই অপরাধে জড়াবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। হত্যাকারীদের ধরতে অভিযান চলছে।