কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে গলাকাটা এক রোহিঙ্গার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার ভোরে যে ক্যাম্পটি (বালুখালীস্থ ৮ -পূর্ব- নম্বর ক্যাম্প) আরসা ও আরএসও গোলাগুলিতে ৫ জন নিহত হয়েছে ওই ক্যাম্প থেকে বিকাল ৫ টায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন উখিয়া থানার (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী।
নিহত রোহিঙ্গা সানাউল্লাহ (৪৫)। তিনি ১১ নম্বর ক্যাম্পের ডি ব্লকের বাসিন্দা।
ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, সানাউল্লাহ কে ঘর থেকে তুলে নিয়ে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে গলা কেটে দেয়া হয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের সাথে ভোরের গোলাগুলির কোন যোগসূত্র আছে কি না নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
৮ এপিবিএন এর সহকারি পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, একজনের মরদেহ থাকার খবর পেয়ে পুলিশের সহায়তা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এটি ভোরের গোলাগুলির ঘটনা নাও হতে পারে।
এর আগে শুক্রবার ভোরে শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫ টায় বালুখালীস্থ ৮ (পূর্ব) নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নবাদি সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) সন্ত্রাসীদের মধ্যে এ গোলাগুলি হয়েছে। এতে ৫ জন নিহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছে এপিবিএন ও পুলিশ।
৮ এপিবিএন এর সহকারি পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানান, এলাকার আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে ভোরে ২ টি সংগঠনের সন্ত্রাসীরা গোলাগুলিতে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে এপিবিএন ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
এসময় ঘটনাস্থলে ৩ জনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ পাওয়া যায়। আহতাবস্থায় ২ জনকে উদ্ধার করে পাশ্ববর্তী আইএমও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় একটি দেশীয় তৈরী ওয়ান শুটার। হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যান আহত ২ জনও। ফলে এ ঘটনায় ৫ জন নিহত হয়েছেন। এরা সকলেই বিচ্ছিন্নবাদি আরসার সন্ত্রাসী বলে দাবি করেন তিনি।
নিহতদের মধ্যে ৪ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলেও অপর একজনের পরিচয় এখনও শনাক্ত হয়নি। তার পরিচয় শনাক্তে কাজ করছে পুলিশ ও এপিবিএন।
পরিচয় শনাক্ত হওয়া নিহত ৪ জন হলেন, ৮ নম্বর ক্যাম্পের এইচ-৪৯ বøকের আবুল কাশেমের ছেলে আনোয়ার হোসেন (২৪), এ-২১ বøকের জাকারিয়ার ছেলে মোহাম্মদ হামীম (১৬), ১০ নম্বর ক্যাম্পের এইচ-৪২ বøকের আব্দুল কাদেরের ছেলে মো. নজিমুল্লাহ (২৬) ও ১৩ নম্বর ক্যাম্পের বি-১৭ ব্লকের আবুল বাশারের ছেলে নুরুল আমিন (২৪)।
উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, নিহত ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। ঘটনার পর কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সহ এপিবিএন ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সার্বিক নিরাপত্তায় জোরদার করা হয়েছে একই সঙ্গে এপিবিএন এর সহযোগিতা জড়িতদের ধরতে অভিযান চলছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদ খানের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিরা কুতুপালংস্থ ১-পশ্চিম নম্বর ক্যাম্পের এ/১ ব্লকে যান। ওখানে যখন রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে মিয়ানমারে চালানো নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহ করছেন তারা ওই সময় একই ক্যাম্পে নিকটবর্তী ১-পশ্চিম নম্বর ক্যাম্পের এ/৯ ব্লকে এবাদুল্লাহ নামের ওই ব্লকের উপ-প্রধান বা সাব মাঝিকে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়।
পুলিশ ও এপিবিএন জানিয়েছিল, অজ্ঞাত সন্ত্রাসী ছুরিকাঘাতে এবাদুল্লাহকে হত্যা করে পালিয়ে গেছে। তবে সাধারণ রোহিঙ্গাদের কয়েকজন জানিয়েছে, সাব মাঝি এবাদুল্লাহ তথ্য সংগ্রহে আসা আইসিসির প্রতিনিধিদের কাছে রোহিঙ্গাদের ডাকতে যাওয়ায় তাকে খুন করা হয়।
শুক্রবার বিকাল ৪ টা পর্যন্ত এ খুনের ঘটনায়ও কোন মামলা হয়নি এবং কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানিয়েছেন উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী।
