শ্যামা সুন্দরী খাল মশা তৈরির কারখানা

প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৩, ১৯:৩৮ | অনলাইন সংস্করণ

  রংপুর ব্যুরো

রংপুরের ফুসফুস বলে পরিচিত শ্যামা সুন্দরী খাল । এ খালের গভীরতা ছিল এসম ৪০ ফুটেরও বেশি ।  খালটি এখন বিভিন্ন বর্জ্য আর ময়লা-আবর্জনায় এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। সেই সঙ্গে পুরো খালটি সরু ক্যানালে রূপ নিয়েছে। খালের পানি  কালো কুচকুসে । খালটি মশা তৈরির কারখানায় পরিনত হয়েছে ।

রংপুর মহানগরীর সব পানি এই শ্যামা সুন্দরী খালের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিস্তা নদীতে পতিত হয়।অবৈধ দখলের কারণে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একটু বৃষ্টিতে তলিয়ে গিয়ে পুরো নগরীজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ফলে ২০ লাখ নগরবাসী চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সোয়া তিনশ’ বছর আগে রংপুর অঞ্চলের মহারাজা জানকী বব্লভ সেনের স্বর্গীয় মাতা শ্রীমতি শ্যামা সুন্দরী সেন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য এবং ম্যালেরিয়া দুর করার জন্য রংপুর নগরীর সিও বাজার এলাকা থেকে মাহিগঞ্জ পর্যন্ত ৮ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল খনন করেন মহারাজা জানকী বব্লভ সেন। এমন ভাবে শ্যামা সুন্দরী খাল খনন করা হয় ঘাঘট নদীর শেষ প্রান্তে থেকে খাল খনন শুরু করা হয়। 

ওই সময় খালটি মুলত ঘাঘট নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে  ১৮৯৮ সালে খনন করা হয়। তখন ৪০ ফুটেরও বেশি দৈর্ঘ্য আর প্রস্থ করা হয় দু’পার্শ্বে ৬০ ফুট। 

নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর নগরীর কাচারীবাজার এলাকায় একটি দৃষ্টি নন্দন নাম ফলক তৈরি করা হয়। সেখানে লেখা হয় ‘পীড়ার আঁকড় ভূমি প্রণালি কাটিয়া তা করিবার দুর মাতা শ্যামা সুন্দরীর স্মরণে জানকি বল্লভ সুত এই কীত্তি করে।’ এটি উদ্বোধন করার সময় এসব কথা উল্লেখ করা হয়। দৃষ্টি নন্দন নাম ফলকটি এখনও সেখানে রয়েছে। 

পরবর্তীকালে ২০০৯-১০ সালে এটি পুনঃসংস্কার করা হয়। কিন্তু কালের বিবর্তণে খালটির বিভিন্ন জায়গা দখল হয়ে যায়। বাসাবাড়ির ময়লা শহরের বর্জ্য ফেলতে ফেলতে এখন এটা ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। খালের দু’পার্শ্বে বেশিরভাগ বাসার ল্যাট্টিনের লাইনসহ পয়ঃ প্রণালির সংযোগ খালের সঙ্গে দেয়ায় এখানকার পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। 

পুরো খালটি এখন সরু ক্যানালে পরিণত হয়েছে। সেই সঙ্গে এর গভীরতা বেশির ভাগ স্থানে ৫ থেকে ৮ ফুটের মধ্যে নেমে গেছে। এখন এটি নগরবাসীর জন্য আর্শীবাদের বদলে অভিশাপে পরিণত হয়েছে। এদিকে রংপুর মহানগরীর সব ধরনের পানি প্রবাহিত হয় শ্যামা সুন্দরী খাল দিয়ে। 

নগরীর সব ড্রেনেজ ব্যবস্থা এই খালকে ঘিরে নির্মাণ করা হলেও এখন একটু বৃষ্টি হলে নগরীজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সেই খালটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় দু’পার্শ্বে হাজার হাজার বাড়িঘর তলিয়ে যাচ্ছে ফলে মানুষের চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। শ্যামা সুন্দরী খালকে পুনঃখনন করা সংস্কার করা এবং দখলমুক্ত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্বীকার করে বলেন শ্যামা সুন্দরীর বেহাল দশা হয়েছে। অথচ রংপুর নগরীর সব পানি নিস্কাশনের জন্য যে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ করা হয়েছে। 

এটি সংস্কার করা না গেলে নগরবাসীর গলার কাঁটায় পরিণত হবে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি কামনা করে বলেছেন শ্যামা সুন্দরী খালটি পুনঃখনন করতে হবে দু’পাশের্^ রাস্তা নির্মাণসহ অনেক কাজ করতে হবে এ জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা জরুরি বলে জানান তিনি।