প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, সারা দেশে প্রায় ৪০ লাখ মামলা বিচারাধীন। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মামলা জট সহনশীল মাত্রায় আনার পরিকল্পনায় বিচার বিভাগ কাজ করছে।
মামলাজটের কারণে বিচারপ্রার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েন। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, স্বল্প সময় ও স্বল্প খরচে মানুষ যেন ন্যায়বিচার পান, তার ব্যবস্থা করা। কারন বিচার বিভাগ দুর্বল হলে রাষ্ট্রকে কখনোই শক্তিশালী বলা যাবে না। বিচার বিভাগকে গতিশীল করে দ্রুততম সময়ে বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে বিচারকদের তাগিদ দেন তিনি।
শনিবার (৮ জুলাই) সকালে পাবনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে বিচারপ্রার্থীদের বিশ্রামাগার ন্যায়কুঞ্জের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, আদালত প্রাঙ্গণে বড় বড় ভবন থাকলেও বিচারপ্রার্থীরা এসে স্বস্তিতে বসবেন, এ রকম ব্যবস্থা সারা দেশে কোনো আদালতে নেই। অথচ তাদের জন্যই এই আদালত এবং বিচারব্যবস্থা। গ্রামাঞ্চল থেকে পুরুষদের সঙ্গে নারী বিচারপ্রার্থীরাও আদালতে আসেন। সারা দেশে প্রায় ৪০ লাখ মামলা বিচারাধীন। বাদী ও বিবাদী মিলিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ লোককে আদালত প্রাঙ্গণে আসতে হয়। তারা যেন স্বস্তিতে বসে পানি পান করতে পারেন, শৌচাগার ব্যবহার করতে পারেন এ রকম কোনো ব্যবস্থা নেই।
সরকার ন্যায়কুঞ্জ প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন। আমরা জেলা শহরগুলোতে ৫০ লাখ টাকা করে ন্যায়কুঞ্জ প্রতিষ্ঠায় বরাদ্দ দিচ্ছি। সেখানে পুরুষ ও নারীদের জন্য পৃথক শৌচাগার ও বসার জন্য ৫০ থেকে ৭০টি চেয়ারের ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি খাবার ও নিত্যপণ্যের দোকানও থাকবে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশে আর্থিক সঙ্গতি বেড়েছে। দেশ সমৃদ্ধির দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। গতিশীল রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে জুডিশিয়াল ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এ পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর একটি হচ্ছে ন্যায়কুঞ্জ।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, আইনজীবী ও তাদের সহকারীরা বিচারকাজে বিচারকদের সহায়তা করলে মামলজট সহনীয় পর্যায়ে আনা যাবে। মামলা ডিসপোজালের হার বেড়েছে। এই ডিসপোজাল রেট যদি ১২৫ শতাংশে উন্নীত করা যায় তাহলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই মামলা জট নিরসন হবে। আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, কঠোর পরিশ্রম, সততা, নিষ্ঠা, দায়িত্বশীলতা ও মানবিকতার সঙ্গে পেশাগত কাজ করতে হবে। সততাকে ধর্মের মতো ধারণ করে বিচারপ্রার্থী মানুষের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে।
এ সময় সুপ্রীম কোর্টর বিজ্ঞ রেজিস্ট্রার গোলাম রব্বানী, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিষ্ট্রার মুন্সী মোঃ মশিয়ার রহমান, আপীল বিভাগের রেজিষ্ট্রার মোহম্মদ সাইফুর রহমান, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার (বিচারক) এসকে.এম তোফায়েল হাসান, প্রধান বিচারপতির একান্ত সচিব মোঃ আরিফুল ইসলাম, পাবনার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ বেগম শামীম আহমেদ, যুগ্ন জেলা জজ (অর্থঋণ আদালত) আব্দুল্লাহ আল আমিন ভুইয়াসহ বিচারক ও আইনজীবীগণ উপস্থিত ছিলেন।
পরে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির হল রুমে আইনজীবীদের সাথে মতবিনিময় করেন। সমিতির সভাপতি আখতারজ্জামান মুক্তা ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আহাদ বাবু ব্যারিস্টার রবিউল আলম বুদু, জিপি হোসেন শহীদ সরোয়ারদী, পিপি আব্দুস সামান খান রতন, অ্যাডভোকেট শাজাহান মন্ডলসহ সিনিয়র আইনজীবীগণ এসময় বক্তব্য রাখেন।