ট্রলারে ১০ খুন: ডিএনএ পরীক্ষায় শনাক্ত ৩ মরদেহ হস্তান্তর

প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৩, ১৯:৫২ | অনলাইন সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার

কক্সবাজারের নাজিরারটেক উপকূলে ট্রলার থেকে ১০ মরদেহ উদ্ধারের পর পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্ত থাকা ৪ জনের মধ্যে ৩ জনের পরিচয় ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।

রবিবার বিকালে ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল মতে এই ৩ টি মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

অপর মরদেহটি আদালতের অনুমতি পাওয়ায় আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মামলাটির তদন্তকারি কর্মকর্তা কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাস।

শনাক্ত হওয়া ৩ জন হলেন, কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালী ইউনিয়নের বড় চৌধুরী পাড়া এলাকার মৃত আবদুল আজিজের ছেলে শাহ আলম (৫৪), মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়ার ঝাপুয়া এলাকার তাজুল মুল্লুকের ছেলে মো. ইকবাল (২৭) ও কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ ইউনিয়নের রোমাইপাড়ার মৃত আবু সৈয়দের ছেলে মেজবাহ উদ্দিন (৫০)।

রবিবার বিকাল ৪ টায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বজনদের মরদেহ ৩ টি হস্তান্তর করা হয়। এসময় মামলাটির তদন্তকারি কর্মকর্তা ছাড়াও কক্সবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো, মিজানুর রহমান, কক্সবাজার সদর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম, কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. আশেকুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাস জানান, শাহ আলমের মরদেহটি তার ছেলে মামুনুর রশিদ, মো. ইকবালের মরদেহটি তার ভাই তারেক ও মেজবাহ উদ্দিনের মরদেহটি ছেলে আবু সাইদ মো. জিসান গ্রহণ করেছেন।

তিনি জানান, গত ২৩ এপ্রিল ট্রলার থেকে ১০ টি মরদেহ উদ্ধারের পর ৬ জনের মরদেহ শনাক্ত হওয়ার পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অপর ৪ টি মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত হতে সংগ্রহ করা হয় ডিএনএ নমুনা। একই সঙ্গে নিখোঁজ থাকা স্বজনদের অনেকের ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। ফলে এ ঘটনায় শুরু থেকে ৪ মরদেহ জোর দাবি করা স্বজনদের সাথে মিলেনি ডিএনএ। তাই এ ঘটনায় ৪ জন এখনও নিখোঁজ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

এই ৪ জন হলেন, শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৮), সাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ (২৩), মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ (১৪) ও চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের কবির হোসাইনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৪)।

মরদেহ হস্তান্তরের সময় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এই ৪ জনের স্বজনদের মধ্যে ৩ জন না আসলেও শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের সাহাব মিয়া উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, পুলিশ তার এবং স্ত্রীর নমুনা নিয়ে ছিলেন। এখন তাদের সাথে ডিএনএ মিলেনি বলে দাবি করা হচ্ছে। যে মরদেহটি আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে ওইটি তার ছেলে সাইফুল্লাহর। পুলিশের কাছে তিনি মরদেহটি তাকে দেয়ার অনুরোধও জানান।

পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাস জানান, আদালতের সিদ্ধান্ত মতে মরদেহটি অন্য কাউকে হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। ওইটি দাফনের ব্যবস্থা হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল হাতে আসার পর এখন নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে ট্রলারটি থেকে ১০ মরদেহ উদ্ধার হয়েছে ওইটিতে মোট ১৩ জন লোক ছিলেন। এখন পরিচয় শনাক্ত না হওয়া মরদেহটি কার এমন প্রশ্ন যেমন রয়েছে, তেমনি এ ঘটনায় ৪ জন নিয়ে রয়েছে বিভ্রান্তি। এই ৪ জন এখন কোথায়? জীবিত না মৃত? এমন প্রশ্নের উত্তরে মামলার তদন্তের জন্য জরুরী হয়ে উঠেছে। এরজন্য অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।

নতুন শনাক্ত ৩ মরদেহ গ্রহণ করতে আসা শাহ আলমের ছেলে মামুনুর রশিদ জানান, তার বাবা একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে চকরিয়া গিয়ে ছিলেন। পরে জানতে পারেন ওখান থেকে তিনি একটি ট্রলারে সাগরে গেছেন। কেন সাগরে গেছেন, কার সাথে গেছেন এটা জানা ছিল না। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তার বাবা। তাই ১০ মরদেহ উদ্ধারের পর এর একটি তার বাবা হতে পারে এমন ভেবে তিনি নিজেই ডিএনএ নমুনা দিয়েছিলেন।

মেজবাহ উদ্দিনের ছেলে আবু সাইদ মো. জিসানও বলেছেন একই কথা। তিনি বলেন, সাগরে গিয়ে তার বাবা নিখোঁজ থাকার কারণে তিনি এসে ডিএনএ নমুনা দিয়েছিলেন।

মামলাটির তদন্তকারি কর্মকর্তা দুর্জয় বিশ্বাস জানান, ঘটনাটি শুরু থেকে এক পক্ষ দাবি করে আসছিলেন ট্রলারটিতে ১৩ জন ছিলেন। একই কথা বলেছিলেন এই ঘটনার মামলার বাদিও। ডিএনএ পরীক্ষার পর এটা অনেকটা সত্য বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। তাহলে অপরাপর ৪ জনের বিভ্রান্তি দূর করতে মামলাটি আরও গুরুত্ব সহকারে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।

ইতিমধ্যে এ ঘটনায় পুলিশ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। যার মধ্যে এর মধ্যে ৬ জন ১৬৪ ধারার জবানবন্দি প্রদান করেন। এরা হলেন, মামলার এজাহারের প্রধান আসামি বাইট্টা কামাল, বাঁশখালীর বাসিন্দা ফজল কাদের মাঝি ও আবু তৈয়ুব মাঝি, মহেশখালী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খায়ের হোসেন, চকরিয়ার বদরখালী এলাকার মো. নুর নবীর ছেলে গিয়াস উদ্দিন মুনির, মাতারবাড়ী ইউনিয়নের সাইরার ডেইল এলাকার এস্তেফাজুল হকের ছেলে দেলোয়ার হোসেন।

তবে গ্রেপ্তারের মধ্যে মামলার ৪ নম্বর আসামি করিম সিকদার ও বাইট্টা কামালের ভাই ইমাম হোসেন জবানবন্দি প্রদান করেননি।

গত ২৩ এপ্রিল গুরা মিয়া নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধিন একটি ট্রলার সাগরে ভাসমান থাকা নামবিহীন ট্রলারটিকে নাজিরারটেক উপক‚লে নিয়ে আসে। আর ওই ট্রলারের হিমঘরে হাত-পা বাঁধা ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ২৫ এপ্রিল নামবিহীন ট্রলারটির মালিক নিহত সামশুল আলম প্রকাশ সামশু মাঝির স্ত্রী রোকেয়া বেগম বাদি হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৬০ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন।

ঘটনার পর ১০ মরদেহের মধ্যে পরিচয় শনাক্ত হওয়া ৬ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয় ২৪ এপ্রিল। এই ৬ জন হলেন, মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়ার রফিক মিয়ার ছেলে ট্রলার মালিক সামশুল আলম প্রকাশ সামশু, চকরিয়া পৌরসভার চিরিঙ্গা এলাকার জসিম উদ্দীনের ছেলে তারেক, শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের জাফর আলমের ছেলে সওকত উল্লাহ, চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের শাহ আলমের ছেলে মোহাম্মদ শাহজাহান, শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের  মুসা আলীর ছেলে গণি ওসমান, একই ইউনিয়নের মোহাম্মদ হোসানের ছেলে নুরুল কবির।