ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দাপটে শতবর্ষী রংপুর হাইস্কুলের বেহাল দশা

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দাপটে শতবর্ষী রংপুর হাইস্কুলের বেহাল দশা

১৯১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত রংপুরের ঐতিহ্যবাহী একটি শিক্ষা প্র্রতিষ্ঠান রংপুর উচ্চ বিদ্যালয়। রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কেএম ছায়াদত হোসেন বকুলের ক্ষমতার অপব্যবহারে শতবর্ষী রংপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের দাঁড়প্রান্তে চলে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আদালতের রায়কে অমান্য করে তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে নিজের আস্থা ভাজন শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে নিজের খেয়াল-খুশি মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন।

এতে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। সেই সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে হোটেল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে কক্ষ ভাড়া দিয়ে অর্থলোপাটের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এনিয়ে রংপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। জানা যায়, রংপুর নগরির প্রাণকেন্দ্রে রংপুর উচ্চ বিদ্যালয় একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ।

এক সময় রংপুর জেলার নামকরা শিক্ষা প্র্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম ছিল এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। এ বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পেতে ভর্তি যুদ্ধে নামতে হতো শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের চাপ সামলাতে প্রতিটি ক্লাসে ৩ থেকে ৪টি করে শাখা ছিল।

শত বছরের অতীত ঐতিহ্য নিয়ে চলেছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা নিয়ে গোটা দেশে আলো ছড়িয়েছে সাবেক শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে এ ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ১৩৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।

২০২২ সালের ২ মার্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল মুযন আজাদ অবসর গ্রহণ করলে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার কথা থাকলেও তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।এরই মধ্যে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অ্যাডহক কমিটির ৬ মাসের জন্য সভাপতি হন রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাসুরের ছেলে একেএম ছায়াদত হোসেন বকুল।

ওই কমিটিতে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক মোস্তাহারুল আরেফিন , অভিভাবক নারায়ণ কর্মকার ছিলেন । ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হওয়ার পর বকুল ২০২২ সালের ১৮ জুন ম্যানেজিং কমিটির সভা করে সিদ্দিকুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার পরিবর্তে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে অসুস্থ্যতার জন্য ৩ মাসের ছুটি মঞ্জুর করেন, এবং সিদ্দিকুর রহমানের নামে মিথ্যা অভিযোগ এনে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহ মোঃ আল আমিনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেন।

এনিয়ে সিদ্দিকুর রহমান ২০২২ সালের ২৯ জুন এবং একই সালের ৪ আগস্ট প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ৮ আগস্ট শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে চিঠি দিয়ে জানান।

এরপরেও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বকুল দায়িত্ব না দিয়ে ই-মেইলের মাধ্যমে ৭ আগস্ট বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দ্রের বার্তা বিভাগের নগর সংবাদ দাতা এবং রংপুর প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক সিদ্দিকুর রহমানকে অভিযোগ এনে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এরপর সাময়িক বরখাস্ত করা সিদ্দিকুর রহমান বরখাস্ত আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মামলা দায়ের করেন।

এ ঘটনায় চলতি বছরের ১৫ জুন রংপুর যুগ্ম জেলা জজ আদালতের বিচারক মোঃ হাফিজুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহ মোঃ আলামিনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে অবলিম্বে সিদ্দিকুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদানের জন্য সভাপতিকে নির্দেশ দেন। কিন্তু সভাপতি তার খেয়াল খুশি মত বিদ্যালয় পরিচালনা করছেন।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে জটিলতা চলছে। আমি চাই আদালতের রায় বাস্তবায়ন হোক। এ ব্যাপারে একেএম ছায়াদত হোসেন বকুল সাংবাদিকদের বলেছেন এ বিষয়ে আমার একার করার কিছুই নেই। আমি শিক্ষকদের সাথে বসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।

আদালত,রায়,অমান্য
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত