ভোট কেনাবেচা ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৩, ১৭:১৪ | অনলাইন সংস্করণ
সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
আগামী ১৭ জুলাই টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার চার ইউপিতে নির্বাচন। নির্বাচনে স্ব স্ব প্রার্থীর সমর্থকরা তাদের নিজ নিজ এলাকায় রাত জেগে ভোট পাহারা দিচ্ছেন। উদ্দেশ্য ভোট কেনাবেচা ঠেকানো। প্রার্থীরা রাতেই এ কাজটা করতে পারেন- এমন আশঙ্কা থেকেই নিজ উদ্যোগে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন তারা।
প্রায় প্রতিটি গ্রামে চলছে এই পাহারা। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থী ও সমর্থকদের উৎকণ্ঠা ততটাই বাড়ছে। মাঠের ও ভোটের লড়াইয়ে কেউ কাউকে চুল পরিমাণ ছাড় দিচ্ছেন না।
সন্ধ্যার পর থেকেই স্ব স্ব প্রার্থীর সমর্থকরা তাদের এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জোট বেঁধে পাহারা দিতে থাকে মধ্যরাত পর্যন্ত। সেইসঙ্গে মোটরসাইকেল নিয়েও টহল দিতে দেখা যাচ্ছে অনেককে। অপরিচিত কাউকে দেখলে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে সে কার সমর্থক।
এছাড়া নির্বাচনি এলাকাগুলোর দোকান-পাট, হাট-বাজার প্রভৃতি স্থানে একই আলোচনা- ইউপি নির্বাচনে কে হচ্ছেন কোন এলাকার আগামী দিনের অভিভাবক। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের আলোচনার সঙ্গে সমানতালে আলোচনায় রয়েছে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ও সাধারণ সদস্য পদ প্রার্থীরা।
রাত জেগে ভোট পাহারা দেয়া হচ্ছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রার্থীদের সমর্থকরা বলেন, ভোটের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। তাই শেষ মুহূর্তে কেউ যেন তাদের পক্ষের ভোটারদের টাকার লোভ বা ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বার্থ উদ্ধার করতে না পারে সে জন্যই এ পাহারা।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চার ইউনিয়নে ৩৬টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। ভোটার রয়েছে ৭৫ হাজার ৮শত ৩৯ জন। এর মধ্যে মহিলা ভোটার সংখ্যা ৩৮ হাজার ১শত ৩৭ জন এবং পুরুষ ভোটার ৩৭ হাজার ৭শত ২ জন। চেয়ারম্যান পদে ২৪ জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৭২ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ১৪৫ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আলাউদ্দিন মিয়া নামে বড়চওনা গ্রামের এক ভোটার জানান, একজন প্রার্থীর লোক এসে আমার হাতে ১ হাজার টাকার একটি নোট গুঁজে দিয়ে তার প্রার্থীকে ভোট দিতে বলেছিলেন। আমি সেই টাকা নিইনি। টাকার বিনিময়ে নিজের বিবেক বিক্রি করব না। অনেক প্রার্থীই ভোটারদের প্রকাশ্যে টাকা দিচ্ছেন।
একাধিক চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোট কেনাবেচা ঠেকাতে চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা পাহারা বসিয়েছেন। ভিন্ন ভিন্ন দলে ভাগ হয়ে তাঁরা গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকছেন। ভোটের আগের রাত পর্যন্ত এ পাহারা চলবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার হাতিবান্ধা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের একজন মেম্বার প্রার্থী বলেন, ‘আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ভোট কেনার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন। নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসায় ওই প্রার্থীর লোকজন টাকা পয়সা নিয়ে রাতের বেলায় ঘোরাঘুরি করছেন। আমার কর্মী সমর্থকেরাও ভোট বেচাকেনা ঠেকাতে গ্রামে গ্রামে পাহারা দিচ্ছেন।
কালিয়া ঘোনারচালা গ্রামের শাহ আলম বলেন, ‘চোর-ডাকাত ঠেকাতে মানুষ রাতে পাহারা দেয়। আমরা চোর-ডাকাত নয়, ভোট বেচাকেনা ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি। রাত জাগা কষ্টকর হলেও নির্বাচনের আগের রাত পর্যন্ত এ পাহারা চলবে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আতাউল হক বলেন, নির্বাচনে কারও বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের ব্যাপারে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।