উপবৃত্তি দেয়ার আশ্বাসে শিক্ষার্থীদের টাকা আত্মসাৎ

প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৩, ২১:৩৩ | অনলাইন সংস্করণ

  মো: ইসহাক, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ ডিএস কামিল মাদ্রাসার অফিস সহায়ক (কেরানি) ফয়জুর রহমানের বিরুদ্ধে উপবৃত্তি পাইয়ে দিবে এমন প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। 

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাব বরাবর ওই  অফিস সহায়কের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই অফিস সহায়ক ফয়জুর রহমান। 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরগঞ্জ ডিএস কামিল মাদ্রাসার ফাজিল প্রথম বর্ষের ৪৪ শিক্ষার্থী উপবৃত্তির জন্য আবেদন করেন। অফিস সহায়ক ফয়জুর রহমান শিক্ষার্থীদের জানান তাঁকে ১ হাজার টাকা করে দিলে সবাইকে উপবৃত্তি পাইয়ে দিবে। উপবৃত্তি পাওয়ার আশায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী-ই তাঁকে ১ হাজার টাকা করে দেন। কিন্তু উপবৃত্তির তালিকায় নাম আসে মাত্র ১০-১২ জনের। টাকা দিয়েও উপবৃত্তির তালিকায় নাম না আসায় ক্ষুব্ধ হোন শিক্ষার্থীরা। তালিকায় নাম না থাকায় টাকা ফেরত চাইতে গেলে অফিস সহায়ক ফয়জুর রহমান তাঁদের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের হুমকি-ধমকি দেন।

রেজিস্ট্রেশন বাতিলের ভয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী চুপ হয়ে গেলেও জেসমিন আক্তার ও মারজিনা আক্তার নামে দুই শিক্ষার্থী প্রতিবাদ করেন। 

জেসমিন আক্তার ও মারজিনা আক্তার বলেন - ' আমরা নিম্ন পরিবারের সন্তান। ফয়জুর রহমান আমাদের উপবৃত্তি পাইয়ে দিবে বলে ১ হাজার টাকা এবং উপবৃত্তির ফরম বাবদ আরও ২শ টাকা নেয়। কিন্তু তালিকায় না আসায় টাকা ফেরত চাইতে গেলে সে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে তিনি ( কেরানি) বলেন -'বেশি বাড়াবাড়ি করলে রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দিব'।

ফাজিল প্রথম বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী সাইদুল অভিযোগ তোলেন - ' ফয়জু কেরানি আমার কাছে উপবৃত্তি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ১ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে আমি তাঁকে উপবৃত্তি বাবদ ৭০০ টাকা এবং আবেদনের জন্য ২০০ টাকা দিই। কিন্তু উপবৃত্তি তালিকায় আমার নাম না আসলে তাঁর কাছে টাকা ফেরত চাইলে গেলে সে হুমকি-ধমকি দেন'।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন অভিযুক্ত অফিস সহায়ক ফয়জুর রহমান। তিনি বলেন - ' আমার বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগ উঠেছে সবই ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা'। 

এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ ডিএস কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. শহীদুল্লাহ বলেন- ' উপবৃত্তির তালিকা তো আর আমরা করিনা। এটা উপর থেকে হয়। শিক্ষার্থীদের এই বিষয়টা বার বার অবগত করার পরও কেন তাঁরা কেরানিকে টাকা দিবে। যেহেতু অভিযোগ উঠেছে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে'।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন- ' উপবৃত্তি দেয় সরকার, তাহলে সে কেন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিবে। তার টাকা নেওয়ার কোন সুযোগ-ই নাই। যদি সে এমনটি করে থাকে, তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে'। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা. হাফিজা জেসমিন বলেন- ' উপবৃত্তি পেতে টাকা দিতে হবে কেন? শিক্ষার্থীদের অভিযোগটি সুষ্ঠুভাবে তদন্তকরে দেখা হবে, অভিযোগের সত্যতা মিললো ওই কেরানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে'। 

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এবং ঈশ্বরগঞ্জ ডিএস কামিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি মো. মেহেদী হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন- ' সরকার যেখানে বিনামূল্যে উপবৃত্তি দিচ্ছে, সেখানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার দুঃসাহস সে পায় কি করে। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা যেন ইউএনওর মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেয়। পরে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে'।