ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গিমাডাঙ্গা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগে অনিয়ম দুই পদেই প্রধান শিক্ষকের আত্মীয়

গিমাডাঙ্গা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগে অনিয়ম দুই পদেই প্রধান শিক্ষকের আত্মীয়

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গিমাডাঙ্গা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার মন্ডলের বিরুদ্ধে। দুই পদেই তার নিকট আত্মীয়রা নিয়োগ পাওয়ার ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর এলাকাজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এছাড়া ওই দুটি সহ ৫ টি পদে নিয়োগে ৩২ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ চাকরিপ্রার্থী ও স্থানীয়দের। তবে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তৌফিক বিশ্বাস গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান হওয়ায় কেউই প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। বর্তমানে প্রধান শিক্ষক তাদের বিল করানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পরেছেন।

একাধিক চাকরিপ্রার্থীর অভিযোগ, গিমাডাঙ্গা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার মন্ডলের কথায় সাজানো পরীক্ষা গ্রহন করেন শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিজি) প্রতিনিধি গিমাডাঙ্গা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবতাবুর রহমান হেলালী ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান। সহকারী প্রধান শিক্ষক ব্যাতীত পাঁচটি পদে মোট ৩২ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন প্রধান শিক্ষক প্রদীপ মন্ডল। ক্ষমতার অপব্যবহার ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে ম্যানেজ করে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে শ্যালক স্বর্নেন্দু রায় ও অফিস সহায়ক পদে চাচাত ভাই বিশ্বজিৎ মন্ডলকে নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়া বাকি ৩ পদেও মোটা টাকার বিনিময়ে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়েছেন।

বিদ্যালয় সুত্রে জানা যায়, সম্প্রতি বিদ্যালয়ের ৬ টি পদে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। এতে ৬ টি পদে মোট ৪৬ জন প্রার্থী আবেদন করে। গত ১৫ জুন সকালে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ৫ জন, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর ৮ জন, অফিস সহায়ক ১৪ জন, নিরাপত্তা কর্মী ৭ জন , পরিচ্ছন্নতাকর্মী ৭ জন ও আয়া পদে ৫ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ওই দিন বিকালেই লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা শেষে ৬ টি পদে ৬ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিছন্নতাকর্মী পদের এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ডিজির প্রতিনিধি, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে ম্যানেজ করে নিজের শ্যালক ও কাকাতো ভাইকে নিয়োগ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। এছাড়া বাকি ৩ পদে যারা চাকরি পেয়েছেন তারা এলাকায় বলে চাকরি কি এমনি এমনি পেয়েছি, লাখ লাখ টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছি । আমরা চাই নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় সচ্ছভাবে নিয়োগ দেওয়া হোক। অফিস সহায়ক পদে অন্য আরেক চাকরিপ্রার্থী বলেন, নিয়োগের বেশ কিছুদিন পরে প্রধান শিক্ষকের দুই আত্মীয় নিয়োগ পেয়েছে এমন ঘটনা জানাজানি হয়। তখন কয়েকজন স্থানীয়রা তাকে নিয়োগের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে রাতের আঁধারে তাদের বাড়িতে গিয়ে টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করেছে। বিভিন্ন পদে কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী নিয়োগের অনিয়ম নিয়ে কথা বললে প্রভাবশালীদের দিয়ে তাদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। তাই কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক ম্যানজিং কমিটির সদস্য বলেন, বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তৌফিক বিশ্বাস গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান হওয়ায় বর্তমান কমিটির কেউ কথা বলতে সাহস পায়না। বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্য নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে তার মুখ বন্ধ করা হয়েছে। সঠিকভাবে তদন্ত করলে থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে।

যদিও নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তৌফিক বিশ্বাস। তার দাবি নিয়োগ সচ্ছ প্রক্রিয়ায় হয়েছে। এখানে কোন অনিয়ম দুর্নীতি হয়নি। প্রধান শিক্ষক অর্থনৈতিক লেনদেন করেছে কি না জানিনা।

দুই আত্মীয়র নিয়োগের বিষয়টি স্বীকার করে প্রধান শিক্ষক প্রদীপ মন্ডল বলেন, তারা নিজেদের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছেন। তাদের কোন সহযোগিতা করা হয়নি। এছাড়া নিয়োগ বানিজ্যের বিষয়টিও অস্বীকার করে বলেন, নিয়োগ নিয়ে কারো কাছ থেকে এক কাপ চাও খাননি ।

এদিকে নিয়োগের বিষয়ে জানতে ডিজির প্রতিনিধি আবতাবুর রহমান হেলালীর মুঠোফোনে কল দিলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কলটি কেটে দেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, নিয়ম মেনেই নিয়োগ স

ম্পন্ন হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের দুই আত্মীয় নিয়োগ পেয়েছেন এটা পরে শুনেছি। পরীক্ষায় যারা ভালো করেছে তাদের নিয়োগদেয়া হয়েছে।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আল-মামুন বলেন, এমপিও ভুক্ত বিদ্যালয়ে আমাদের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে সম্পূর্ন দায়ভার ম্যানেজিং কমিটি, ডিজির প্রতিনিধি ও প্রধান শিক্ষকের।

গোপালগঞ্জ,বাণিজ্যে,আভিযোগ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত