ঠাকুরগাঁওয়ে ছয় কার্যালয়ের এক কর্তা, নিয়মে-অনিয়মে চলছে ভূমি রেজিষ্ট্রেশন

প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৩, ১৫:৫৫ | অনলাইন সংস্করণ

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

সরকারের রাজস্ব আদায়কারী দপ্তর গুলোর মধ্যে সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় অন্যতম। কিন্তু ঠাকুরগাঁওয়ে ৬টি সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় থাকলেও কর্তা আছেন একজন।

তিনিই সকাল-বিকাল চালিয়ে নিচ্ছেন ভূমি রেজিষ্ট্রেশনের কাজ। আর ভ‚মি রেজিষ্ট্রেশন কাজ করতে গিয়ে ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগও উঠে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি অভিযোগ তুলে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারক লিপিও প্রদান করেছেন ভূক্তভোগীরা।

সাব-রেজিষ্ট্রারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জমি কেনা বেচার জন্য ঠাকুরগাঁওয়ে কার্যালয় আছে ৬টি। কিন্তু কর্তা আছেন মাত্র একজন। সপ্তাহে রোববার ও সোমবার ঠাকুরগাঁও সদরে। এর মধ্যে সকালে হাফ বেল্লীতে, মঙ্গলবার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী কার্যালয়ে, বৃহস্পতিবার পীরগঞ্জে, বুধবার সকালে হরিপুরে এবং বিকালে রাণীশংকৈলে জমি রেজিষ্ট্রেশনের কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। 

শফি আকরামুজ্জামান ১৯৯৫ সালে লালমনিরহাট জেলায় সাব রেজিষ্টারের কার্যালয়ে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর তিনি পদোন্নতি পেয়ে প্রধানসহকারি, ২০১৮ সালে পদোন্নতি পেয়ে সুনামগঞ্জে সাব রেজিষ্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী সাব রেজিষ্টারের দায়ত্ব পালন করছেন। কিন্তু জেলার সাব রেজিষ্টারের কার্যালয় গুলোতে কোন কর্মকর্তা না থাকায় তিনি একাই চালিয়ে নিচ্ছেন সকল কার্যালয়ের দাপ্তরিক কাজ। 

সাম্প্রতিক সময়ে তিনি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ১’শ পরিবারের ৭৬ একর জমি একটি সংঘবদ্ধ চক্র জাতীয় পরিচয় পত্র নকল করে অন্যকে দিয়ে রেজিষ্ট্রেশনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে শফি আকরামুজ্জামানের বিরুদ্ধে। এনিয়ে বিভিন্ন জাতীয় এবং স্থানীয় পত্রিকায় অনিয়ম দূর্নীতির কথা উল্লেখ করে খবরও প্রকাশিত হয়। এব্যাপারে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারক লিপিও প্রদান করেন ভ‚ক্তভোগীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাক্তি বলেন এই সাব-রেজিষ্ট্রার নামে-বেনামে অনেক সম্পদের মালিক হয়েছেন। এ ব্যাপারে সরকারের আইন প্রয়োগকারি সংস্থা গুলো তদন্ত করলেই সব কিছু বেরিয়ে আসবে। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার গোয়ালপাড়া গ্রামের ভূক্তভোগী যতেন পাল বলেন আমার ভোটার আইডি নকল করে কে বা কাহারা আমার জমি বিক্রি করে দিয়েছে।

এব্যাপারে কিছুই জানি না। পরে দলিল তুলে দেখি সত্যি সত্যিই দলিল হয়েছে। আরেক ভ‚ক্তভোগী শ্রী কানু রাম পাল বলেন আমার মালিকানা জমি কে বা কাহারা বিক্রি করে দিয়েছে তা জানি না। একই কথা বলেন ধীরেন পালসহ আরও অনেকে।

হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃীষ্ট্রন ঐক্য পরিষদ আমজানখোর ইউনিয়ের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন পূঁজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্রী জীতেন পাল বলেন সাব-রেজিষ্ট্রারের যোগসাজসে ৭৪ একর জমি লাহিড়ীতে রেজিষ্ট্রী না করে ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের রামবাবুর ১০তলা ভবনে এবং পরবর্তীতে আরো ৯৮ একর জমি পঞ্চগড়ে রেজিষ্ট্রেশনের কাজ সম্পন্ন করেন।
  
আমজানখোর ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আকালু জাল দলিলের কথা স্বীকার করে বলেন আমারও কোন নাই, কারো কোন নাই, পরিষদেরও কোন নাই। যারা কাম করেছে, মনে করে জাল দলিল দিয়ে টাকা নিয়েছে, আমি তো বলতে পারি না। ওই জিনিসটা কি আমি বলতে পারি ? ওই দুই জন লোক টাকা পায়নি। ওরা এখন প্লান করে বেড়াছে। আর এটা মোবাইলে বলা ঠিক হবে না। 
 
সাব রেজিষ্ট্রার শফি আকরামুজ্জামান বলেন আমি একজন মানুষ একাই কি করবো ? অভিযোগের বিষয়ে বলেন এমপি সাহেবকে জিজ্ঞেস করেন স্যার কত টাকা দিয়েছেন। বাইরে গিয়ে ভ‚মি রেজিষ্ট্রেশনের বিষয়ে বলেন দরখাস্ত করছেন সে জন্য যাওয়্ াহয়েছে। আর অনিয়ম দূর্নীতির বিষয়ে বলেন, কে কি বলল সেটাই বিশ^াস করলেন।

ঠাকুরগাঁও জেলা রেজিস্ট্রার হেলাল উদ্দীন বলেন অনিয়মের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে জেনে বিস্তারিত বলা যাবে। আর জনবল সংকটের বিষয়ে বলেন সারা দেশে ১’শ জন সাব রেজিস্ট্রার শূন্য আছে। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান বলেন আমার জানামতে ওনি একা নন, আরও সাব-রেজিস্ট্রার থাকার কথা। যদি না থাকে তাহলে সাব-রেজিস্ট্রারের জন্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হবে। তবে লাহিড়ী সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে অনিয়মের বিষয়ে বলেন তদন্ত চলছে, তদন্তে প্রমান পেলে প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

​​​​​​