স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলী-রাজঘাট সড়কে। অথচ বর্তমান সরকার প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার মেগাপ্রকল্পসহ ছোটবড় ৬৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে কক্সবাজারে। শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেঁটে কোন রকম চলাফেরা করা গেলেও বর্ষায় মৌসুমে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে সড়কটি। ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়ে নদী পথে ঈদগাঁ কক্সবাজার সদরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন স্থানীয়রা।
সড়ক সংস্কারে বারবার আবেদন করার পরও সংস্কার হচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এ অবস্থায় জনদূর্ভোগ কমাতে দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে, নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের উত্তর গোমাতলী, গাইট্যাখালী, আজিমপাড়া, রাজঘাট ও চরপাড়া গ্রামে প্রায় ২০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। ৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্মস্থান এই গ্রামে হওয়ায় উক্ত গ্রামটি 'মুক্তিযোদ্ধা পাড়া' নামেও পরিচিত। রয়েছে প্রাইমারী স্কুল, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা এবং এতিমখানাও। কিন্তু একমাত্র সড়কটির সংস্কার হয়না বছরের পর বছর। সর্বশেষ ২০১৬ সালে ঘুর্নিঝড় রোয়ানুর আঘাতে বেড়িবাঁধ ভেঙে পুরো গোমাতলী এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হলে কাচা সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। ফলে জনদূর্ভোগ চরম আকারে পৌঁছেছে। রোয়ানুর পর ৩ বছর পুরো এলাকা জোয়ারের পানিতে নিমগ্ন ছিল। ২০১৮ সালে "পানি উন্নয়ন বোর্ড" কক্সবাজার, ভাঙা বেড়িবাঁধ সংস্কার করে জোয়ারের পানি প্রবেশ বন্ধ করেন। সম্প্রতি ২০২২ সালে স্থানীয় 'গোমাতলী মোহাজের উপনিবেশ সমিতির সদস্যরা' নিজেদের অর্থায়নে বিলীন হয়ে যাওয়া রাস্তা কোনরকম চলাচলের উপযোগী করে তুললেও চলতি বর্ষায় আবারো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী নুরুল আবছার বলেন, গত ১৫ বছর দেশে উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিয়ে আমরা গর্বিত। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা গ্রাম থেকে শুরু করে শহর-বন্দর সব জায়গায় প্রচুর উন্নয়ন করেছেন। পাল্টে গেছে দেশের চেহারা। দেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করেছেন। সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন যোগাযোগ ব্যবস্থা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে। কিন্তু আমাদের "গোমাতলী-রাজঘাট" সড়কটিতে উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি। এক পাড়ায় ৬ জন মুক্তিযোদ্ধার এই গ্রামটি আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরের শাসনামলে সবচেয়ে অবহেলিত। এ সড়ক যেন আমাদের আজন্ম ভূগান্তির সঙ্গী।
তিনি বলেন, সড়ক সংস্কারের দাবিতে আমরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছি। স্থানীয় সংসদ সদস্যকে বিষয়টি অবগত করেছি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা।
স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী জানান, গোমাতলীতে উৎপাদিত লবন এবং চিংড়ি দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহণ করতে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়। অথচ যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব খারাপ হওয়ার ফলে ক্ষতির মুখে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের।
ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মাহমুদুল হক দুখু মিয়া বলেন, শুধু বর্তমান সরকারের আমলে নয় স্বাধীনতার ৫২ বছর ধরে এ এলাকার মানুষ উন্নয়ন বঞ্চিত। গোমাতলী-রাজঘাট সড়কের গুরুত্ব তুলে ধরে জনদূর্ভোগ লাঘব করতে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
পোকখালী ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদ বলেন, জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় সড়কের গুরুত্ব তুলে ধরে দ্রæত সংস্কারের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ উদাসিনতার পরিচয় দিচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত দু:খজনক।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মামুন খান বলেন, ইতিমধ্যে উক্ত সড়ক সংস্কারের জন্য উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে পাশ হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গোমাতলী রাজঘাট সড়কটির উন্নয়ন কাজ শুরু করা হবে।