প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত হলো গার্লস লিডারশিপ সামিট ২০২৩

প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৩, ২১:৩২ | অনলাইন সংস্করণ

  রংপুর ব্যুরো

নারী নেতৃত্ব বিকাশে সবার আগে প্রয়োজন কারিগরি শিক্ষা; সেজন্য এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে, থাকতে হবে সহযোগিতার মনোভাব । নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করে এগিয়ে যেতে হবে মেয়েদের,  কুড়িগ্রামে আয়োজিত গার্লস লীডারশিপ সামিটে এমন কথাই বলেন বক্তারা।

নরওয়ের টেলিকমিউনিকেশন সংস্থা নরওয়েজিয়ান ব্রডকাষ্টিং কর্পোরেশন এর আর্থিক এবং আর্ন্তজাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর কারিগরি সহযোগিতায় সহযোগি সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশ এবং মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতি (এমজেএসকেএস) বাস্তবায়িত “চাইল্ড, নট ব্রাইড” (সিএনবি) প্রজেক্ট কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্বপ্নকুঁড়িতে ১৯ - ২০ জুলাই ২০২৩ তারিখে এই গার্লস্  লিডারশিপ সামিটের আয়োজন করে।

সামিটের মূল উদ্দেশ্য ছিলো মেয়ে শিশু ও যুব নারীদের কাজের স্বীকৃতি ও উৎসাহ প্রদান এবং তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানো। কুড়িগ্রাম জেলার সকল উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল বিশেষ করে চর অঞ্চলের ৫০ জন মেয়ে শিশু ও যুব নারী যারা নিজের বাল্যবিবাহ নিজেই বন্ধ  করেছে এবং বাল্যবিবাহ বন্ধে গ্রাম পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি করে চলেছে এমন সাহসী কন্যা এই সামিটে অংশগ্রহণ করে।

দুই দিন ব্যাপী ১৯ ও ২০ জুলাই তারিখে অনুষ্ঠিত প্রথম দিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম জেলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ। দ্বিতীয় দিনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন   কুড়িগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার, আল আসাদ মোঃ মাহফুজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসাবে অন-লাইনে যুক্ত ছিলেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস। বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম জেলার উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার) মিনহাজুল ইসলাম, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর হেড অফ সেন্ট্রাল এ্যান্ড নর্দান রিজিয়ন প্রোগ্রামস আশিক বিল্লাহ, কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি রাজু মোস্তাফিজ, আরডিআরএস বাংলাদেশ এর সিনিয়র কোর্ডিনেটর (সোশ্যাল এ্যাম্পাওয়ারমেন্ট) রাশেদুল আরেফিন, মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতি (এমজেএসকেএস) এর পরিচালক শ্যামল চন্দ্র সরকার ।

সামিটে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত সাহসী মেয়ে শিশু ও যুব নারীরা তাদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, জীবন সংগ্রাম এবং জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার সংগ্রামের গল্প বলেন। উপস্থিত অতিথিবৃন্দ মেয়েদের ক্ষমতায়নের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক এবং দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন ।  
“চল্লিশদিন বয়সে আমি আমার বাবাকে হারাই। এরপর আমার ম্ওা বিয়ে করে অন্যত্র চলে যায়। আমি নানীর আশ্রয়ে অনেক কষ্টে বড় হই কারন আমার নানীর সংসার চালানোর মত সামর্থ্য ছিল না। নার্সিং  এ ভর্তি হওয়া সত্বেও টাকার অভাবে পড়তে পারিনি। বারবার বিয়ের প্রস্তাব আসলেও কঠিন মনোবল আর অসীম সাহস নিয়ে বিয়ে বন্ধ করেছি। বর্তমানে আমি অনার্সে পড়ছি। আমি বড় হয়ে মেয়েদের ক্ষমতায়নের জন্য বিশেষ করে আমার মত এতিম মেয়েদের জন্য কাজ করব,” কথাগুলো আবেগ জড়িত কন্ঠে বলছিলেন জুই।

মেয়েদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং গল্প শোনার পর জেলা প্রশাসক বলেন,” গার্লস লীডারশিপ সামিটে উপস্থিত মেয়েরা তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য যে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে তা সত্যিই হৃদয়স্পর্শী । সিএনবি প্রকল্প যেভাবে  সমাজের রন্ধে রন্ধে প্রবেশ করে; মেয়েদের ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করছে এবং তাদের সাহসি করে তুলছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা এইভাবেই পারস্পারিক সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করব এবং এগিয়ে যাব। সর্বোপরি স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করতে সক্ষম হব”।

তিনি আরো বলেন, “আমাদের জীবনে প্রতিকূলতা থাকবে; প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মেয়েদের পড়ালেখা করে এগিয়ে যেতে হবে । আমাদের অনেক নেটওর্য়াক রয়েছে মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য। আমরা এই নেটওর্য়াকের মাধ্যমে মেয়েদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করব” ।
দুই দিন ব্যাপী এই সম্মেলনে মেয়েরা জানতে পারে জীবন দক্ষতা, যুব নেতৃত্ব, জেন্ডার সমতা, দক্ষতা বিকাশ ও কর্ম সংস্থানের সুযোগ তৈরির কৌশল, স্বপ্ন পূরণের জন্য কিভাবে মেয়েদের এগিয়ে যেতে হবে এবং অনলাইনে মেয়েদের নিরাপত্তা ইত্যাদি।