বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে শ্রমিক লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১০

প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০২৩, ১৮:২৯ | অনলাইন সংস্করণ

  বরিশাল ব্যুরো

বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের নতুন কমিটি গঠন ও নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনের দাবির পৃথক কর্মসূচিকালে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ও সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। 

গতকাল শুক্রবার (২১ জুলাই) সকালে নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে এ ঘটনা ঘটে। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ওই এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করে। এ কারণে বরিশাল নগরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে লাঠিচার্জ ও আলোচনার মধ্য দিয়ে টার্মিনালের পরিস্থিতি শান্ত করে। 

প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সকাল ১০টার দিকে সদ্য ঘোষিত বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটি বাতিলের দাবিতে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল সংলগ্ন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিক লীগের সদ্য সাবেক কমিটির সভাপতি ও বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি আফতাব হোসেন। যদিও জনগণের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে ১৫ মিনিট পরে সড়ক অবরোধ তুলে নেন নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতপন্থী এ নেতা। 

এ সময় বাস শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি পালনের জন্য শ্রমিক নেতা ও কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কালাম হোসেন লিটন মোল্লা মিছিল সহকারে টার্মিনালে প্রবেশ করলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে তাদের সরিয়ে দেয়। পরে কালাম হোসেন লিটন মোল্লা গ্রুপের লোকজন পুনরায় সড়ক অবরোধ করে। এ সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে দুই দিকে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। 

যদিও কিছু সময় পরে লিটন মোল্লা তার অনুসারীদের সড়ক অবরোধ তুলে নিতে বলে টার্মিনালের ভেতরে অবস্থান নেয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে টার্মিনালের ভেতর একপাশে মালিক সমিতির আফতাব হোসেনর লোকজন ও অপর পাশে লিটন মোল্লার লোকজন অবস্থান নেয়। মাঝখানে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলে হঠাৎ লিটন মোল্লার অনুসারীরা অপর পক্ষের শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করলে লিটন মোল্লাসহ তার অনুসারীরা টার্মিনাল এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়। উভয় পক্ষের শ্রমিকদের দাবি, তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়েছে।

আর এতে উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি তাদের। আর শ্রমিকদের ওপর হামলার ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শ্রমিক সংগঠনের সদস্য কালাম হোসেন লিটন মোল্লা। আর শ্রমিকদের ওপর হামলার ঘটনার দ্বায় বাস মালিক সমিতির আফতাব হোসেনের বলে দাবি করেন তিনি। যদিও মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটির নামে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা চলছে বলে দাবি করেন মহানগর শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি আফতাব হোসেন। 

তিনি বলেন, ছাত্রলীগের বিতর্কিতদের দিয়ে মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা ওই কমিটির বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং তা সুষ্ঠুভাবেই করা হচ্ছিল। এ সময় বিনা উসকানিতে আমাদের ডিস্টার্ব করার জন্য মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র অনুসারী কিছু লোক সেখানে আসে। যাদের হামলায় আমাদের ১০ জন লোক আহত হন।   

এদিকে দুপুর ১টার দিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলী আশরাফ ভূঞা ও উপ-কমিশনার (উত্তর) আশরাফ উল্যাহ তাহের জানান, অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। বর্তমানে বাস টার্মিনাল এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে, বাসসহ যানবাহন চলাচল করছে। এ বিষয়ে কেউ যদি অভিযোগ দেয় তাহলে তদন্ত সাপেক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বাস টার্মিনাল এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা রয়েছে। 

এদিকে এ ঘটনার পর নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের হয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের কয়েকজন কাউন্সিলর ঘটনাস্থলে আসেন এবং মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তারা শ্রমিকদের কারো প্রতারণা কিংবা উসকানিতে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত বসে আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের দাবি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেবেন বলেও জানান। 

উল্লেখ্য, গত ১৮ জুলাই পরিমল চন্দ্র দাসকে সভাপতি ও মহানগর ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত করা কমিটির আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্নাকে সাধারণ সম্পাদক করে বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের ২৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগ। এ ঘটনার জের ধরেই এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলো।