যমুনার চরাঞ্চলে তিল চাষে কৃষকের দিনবদলের স্বপ্ন

প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৩, ১৭:৫৩ | অনলাইন সংস্করণ

  টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

যমুনা নদীর টাঙ্গাইল অংশের চরাঞ্চলের কৃষকরা তিল চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন। চরের মাটি প্রচুর পলিযুক্ত হওয়ায় সার বিহীন কম পরিশ্রমে ভালো ফলন পাওয়ায় কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তিল চাষ।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তিলের বাম্পার ফলন হয়। বাজারে তিলের চাহিদাও রয়েছে বেশ। ফলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তিল চাষির সংখ্যা। যমুনার ভাঙনে সব হারানো কৃষকরা তাই তিল চাষে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন বুনছেন।

জানা যায়, তিলের তেল যেকোন রান্নায় প্রচলিত তেলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তিলের তেল খুবই স্বাস্থ্যকর। এ তেল রক্তচাপের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তিলের তেল ভিটামিন-ই এবং অ্যাণ্টিঅক্সিডেণ্ট সমূহ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এ তেলে থাকা শক্তিশালী অ্যাণ্টিঅক্সিডেণ্ট হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখতে কাজ করে। তিলে থাকা ক্যালসিয়াম হাড় সবল রাখে। তেলে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড মানসিক চাপ ও উদ্বেগের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি চুলের পরিচর্যাতেও সমানভাবে ব্যবহার করা যায় তিলের তেল। এই তেল মাথার ত্বক এবং চুলে পুষ্টি জোগানোর সাথে চুলকে রোদের ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মি ও দূষণ থেকে রক্ষা করে।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, গোপালপুর, কালিহাতী ও নাগরপুর উপজেলার চরাঞ্চলে তিলের আবাদ ভালো হয়। চরের উঁচু জমিতে যেখানে বন্যার পানি হানা দেয়না সেসব জমিতে কৃষকরা তিল চাষ করে থাকেন। চলতি মৌসুমে তিন হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তিন হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে তিল কাটা হলে পাঁচ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন তিল উৎপাদন হওয়ার আশা করছে কৃষি বিভাগ। তিল উৎপাদনের জন্য চরঞ্চালের চাষিরা বেশি আগ্রহী হওয়ার কারণ- চরের পলি মাটি তিল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তিল চাষিদের প্রযুক্তিগত সহায়তা, রোগ বালাই দমনে সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, যমুনার চরে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি তিলের আবাদও হয়েছে। চরাঞ্চলের অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকায় যতদূর চোখ যায়- তিলের সবুজ গাছের সমাহার। বেশ কিছু এলাকায় তিল পরিপক্ক হয়ে উঠেছে। কয়েক দিনের মধ্যে সংগ্রহ করা হবে। প্রতি বিঘায় ৫ থেকে ৬ মণ তিল পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন কৃষকরা। 

স্থানীয় তিল চাষিরা জানায়, যমুনার চরাঞ্চলে প্রায় সব ফসলের ফলন বেশ ভালো হয়। এখানে সারা বছর নানা ধরনের ফসলের আবাদ হয়ে থাকে। তিল চাষ অনেকটা লাভজনক হওয়ায় এলাকার অধিকাংশ চাষি তিল চাষ করেছেন। তিল সাথী ফসল হিসেবেও আবাদ করা যায়। সোনালী আঁশ পাটের সাথী ফসল হিসেবে অনেকে তিল চাষ করে থাকেন। চলতি বছর তিলের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে ও তিল ঘরে তুলতে পারলে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে চরাঞ্চলের তিল চাষিরা।

যমুনা চরের তিলচাষি সদর উপজেলার চরপৌলী গ্রামের শাহেদ আলী, বাচ্চু মিয়া, ছোরহাব মিয়াসহ অনেকেই জানান, আগের তুলনায় চলতি মৌসুমে চরাঞ্চলে তিলের আবাদ বেশি হয়েছে। তিল চাষ সহজ, কম পরিশ্রম ও লাভজনক। জমির মাটি সমান করে বীজ ছিটানোর তিন মাস পর সেচ, সার, কীটনাশক ছাড়াই পরিপক্ক তিল ঘরে তোলা যায়। তারা জানায়, অনেকে সোনালী আঁশ পাটের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবেও তিল চাষ করে থাকেন। 

তিল চাষি সামান আলী জানান, এক একর জমিতে তিনি তিল চাষ করেছেন। উচ্চফলনশীল বীজ ব্যবহারে ফলন ভালো হয়েছে। তিনি আশা করছেন প্রতি বিঘায় ৫-৬ মণ করে তিল পাবেন। বাজারে তিলের দামও ভালো। ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা মণে বিক্রি করা যায়। সরকারিভাবে সহযোগিতা বৃদ্ধি করলে তিল চাষের আবাদ আরও বাড়ানো সম্ভব।  

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাশার জানান, তিল একটি তৈলজাত ফসল। যা আমাদের দেশে আগে খুব কম চাষ করা হতো। এখন ধীরে ধীরে তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিল অপেক্ষাকৃত কম উর্বর জমিতেও ফলানো সম্ভব। তিল উৎপাদনে খরচ ও পরিশ্রম কম লাগে। তারা চাষিদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন। তিনি আশা করেন, আগামিতে তিল চাষের পরিমাণ আরও বাড়বে।