গাজীপুরের শ্রীপুরে জৈব সার তৈরি করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ও এলাকায় সুনাম অর্জন করেছে রুহুল আমিন নামে এক যুবক। এখন তিনি জৈব সার কারখানার মালিক।
তিনি প্রত্যন্ত গ্রামে গড়ে তুলেছেন এগ্রোটেক অর্গানিক ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড নামের জৈব সার কারখানা। প্রথমে তিনি উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের আজুগীরচালা নিজ গ্রামে ২০১৪ সালে পরীক্ষা মূলকভাবে ছোট পরিসরে জৈব সার তৈরি শুরু করেন।
পরবর্তীতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গাজীপুর (বারি) এর উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জৈব কৃষি গবেষক ড. নাজিম উদ্দিনের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শে ২০১৭ সালে উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের বদনীভাঙা এলাকায় দুই বিঘা জমিতে গড়ে তুলেন জৈব সার কারখানা। এর আগে রুহুল আমিন বারিতে একাধিকবার উচ্চমানের জৈব সার উৎপাদনের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এরপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কয়েক বছরের ব্যবধানে উদ্যোক্তা রুহুল আমিনের জৈব সার কারখানায় ১৫ জন শ্রমিক কর্মচারীর কর্মসংস্থান হয়েছেন। এখানে কাজ করে তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন।
শ্রমিকদের ভেতরে কয়েকজন নারী শ্রমিকও রয়েছে। তার কারখানায় ২০২২ সালে প্রায় ১ হাজার মেট্রিক টন জৈব সার উৎপাদন করেন। প্রতি কেজি পাইকারি হিসেবে ৬- ৭ টাকা করে বিক্রি করেছেন। ঐ সালে প্রায় ৫০ লাখ টাকার জৈব সার বিক্রি করেন উদ্যোক্তা রুহুল আমিন। চলতি বছরে প্রতি কেজি পাইকারি হিসেবে ১০ টাকা করে বিক্রি করছেন । ২০২৩ সালে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার সার বিক্রির আশা করছেন রুহুল আমিন। এই সার রাজধানীর ঢাকা, চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, রংপুর, বগুড়া, ঠাঁকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, মাগুরা, খুলনা, রাজশাহী, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে। রয়েছে ভালো চাহিদা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জৈব সার উৎপাদনে অন্যান্য যে কাঁচামাল এর মধ্যে ট্রাইকো ডার্মা, এবং গাজীপুর বারি ইমু-১ ও ২ সমৃদ্ধ, গোবর, মুরগির বিষ্টা, আখের গাদ, ছাই, চিটাগুড়, কাঠের গুঁড়া, সবজির উচ্ছিষ্ট, হাড়ের গুঁড়া, শিং কুচিসহ এসব কাঁচামাল একত্র করে পর্যায়ক্রমে সেডে পচন ক্রিয়ার মাধ্যমে ৪৫-৫৫ দিনের মধ্যে উৎকৃষ্টমানের জৈব সার বানানো হয়। এ বিষয়ে সফল উদ্যোক্তা রুহুল আমিন জানান, সরকারি-বেসরকারিভাবে যদি কৃষকদের জৈব সার ব্যবহারে উৎসাহিত করে, সার ব্যবসায়ীদের জৈব সার বিক্রির জন্য রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সারের পরিমাণ নির্ধারিত করে দেয় এবং জৈব সারের মূল্য নির্ধারণ করে দেয় তাহলে কৃষক এই সার ব্যবহারে উৎসাহিত হবেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমাইয়া সুলতানা বলেন, জৈব সারে রয়েছে নানান উপকারিতা।
ফলন বৃদ্ধি ও গুণগত মান বাড়ায়, সব ঋতুতে সকল ফসলে ব্যবহার করা যায়। জৈব সার বীজের অংকুরোদগমে সহায়তা করে, মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, মাটির গঠন ও প্রকৃত গুণ রক্ষা করে, মাটির উপকারী জীবাণুগুলোর বংশবৃদ্ধি ও কার্যকারিতা বাড়ায়। জৈব সার ব্যবহারের ফলে আনুপাতিক হারে রাসায়নিক সারের মাত্রা কমানো যায়, রাসায়নিক সারে যে ফসল উৎপাদন করা হয় তা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।